ইনসাইড আর্টিকেল

দেশে দেশে বাংলা ভাষার কদর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/02/2021


Thumbnail

রক্তে রাঙা ভোর প্রথম দেখেছিলো বাংলার মানুষ। আর সেই দিনটি শুরু হয় ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্য দিয়ে। ভাষার জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করেনি বাঙালি ছাত্র জনতা। সেই রক্তদানের মর্যাদা এখন দিচ্ছে পুরো বিশ্ব। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যাত্রাটা শুরু হয়েছিলো ১৯১৩ সালে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন এই ২০১৩ সালে। এরপর থেকেই বাড়তে থাকলো বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষার চর্চা। ১৯১৩ থেকে ২০২১, দীর্ঘ একটা সময় অতিক্রম। এই সময়ে পৃথিবীর প্রধানতম একটি ভাষা হয়ে বিশ্বের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাংলা।

পৃথিবীজুড়ে মোট বাংলাভাষীদের সংখ্যা প্রায় ২৬ কোটি ৫০ লাখের মতো। ভাষা গবেষকদের মতে, ২৮ কোটির বেশি হবে।

ক্রমানুসারে বাংলার অবস্থান পঞ্চম। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে বলা যায়।

বাংলাদেশে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, ওডিশা, আন্দামান-নিকোবর, ধানবাদ, মানভূম, সাঁওতাল পরগনািএসব এলাকাতেও বাংলা ভাষার প্রচলন আছে। নেপাল, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইতালিেএসব দেশেও বিপুল পরিমাণ বাংলাভাষী অভিবাসী ও প্রবাসী রয়েছেন। দিনের পর দিন আরও বাড়ছে সেই সংখ্যা।

১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেস্কো। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশ একই দিনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছে।

২০১০ সালের ৩ নভেম্বর জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনের ৪র্থ কমিটিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি উত্থাপন করে এবং প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ফলে এটি বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষার প্রতি বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন এবং সম্মান প্রদর্শনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে যুক্ত করেছে এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (এপনিক)।

বহির্বিশ্বে ৩০টি দেশের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু রয়েছে বাংলা বিভাগ, সেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার অবাঙালি পড়ুয়া বাংলাভাষা শিক্ষা ও গবেষণার কাজ করছে। এছাড়া চীনা ভাষায় রবীন্দ্র  রচনাবলির ৩৩ খণ্ডের অনুবাদ এবং লালনের গান ও দর্শন ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের পর ব্রিটেন ও আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়ে থাকে। এর বাইরে চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষার সংস্কৃতি চর্চা হচ্ছে। আমেরিকায় কমপক্ষে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও এশীয় গবেষণা কেন্দ্রে বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে। এর মধ্যে নিউইর্য়ক,শিকাগো,ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া উল্লেখযোগ্য বলে ধরা হচ্ছে।

বিশ্বের বহু দেশের রাষ্ট্রীয় বেতারে বাংলা ভাষার আলাদা চ্যানেল রয়েছে। আরও ফনেক দেশের রেডিওতে বাংলা ভাষার আলাদা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। ব্রিটেন ও আমেরিকায় অনেক বাংলাদেশি মালিকানাধীন ও বাংলা ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে।

ইউরোপের ইতালিতে বাংলা দৈনিক পত্রিকা এবং রোম ও ভেনিশ শহর থেকে রেডিও স্টেশনও পরিচালিত হচ্ছে। ইতালি থেকে অনলাইন টেলিভিশন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে শতাধিক ফেসবুক টেলিভিশন চালু  রয়েছে। এছাড়া ডেনমার্ক সুইডেনসহ ইউরোপের অনেক দেশে ও মধ্যপ্রাচ্যে বাংলা ভাষার মূদ্রিত ও অনলাইন পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তবে বাংলাভাষাকে বিশ্ব পরিসরে আরও সমৃদ্ধ করতে সবার ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার বিকল্প নেই।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭