ইনসাইড আর্টিকেল

বাংলা হোক শ্রদ্ধার, বাংলা হোক ভালোবাসার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/02/2021


Thumbnail

ভাষা মানুষে মানুষে ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। একটি জাতির পরিচয়ের বড় মাধ্যম হলো এই ভাষা। এই ভাষাতেই মনের ভাব প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এই ভাব প্রকাশের মাধ্যম বা পরিচয়ের মাধ্যম হওয়া উচিৎ শ্রদ্ধার এবং ভালোবাসার। নইলে এই মাধ্যমটি ধীরে ধীরে ধ্বংসের দোড়গোড়ায় চলে যায় এবং এক সময় তা ধ্বংসই হয়ে যায়। তাই ভাষার অবহেলা না করা সব থেকে বুদ্ধিমানের কাজ। তবে বাংলা ভাষার প্রতি কি আমরা ততটুকু শ্রদ্ধাশীল? বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের দায়দায়িত্ব কি যথাযথভাবে পালন করছি? আমাদের প্রতিদিনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা কি লোকদেখানো? বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন কি একটি মাস, একটি দিন বা বিশেষ কিছু অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক?

ভাষার এই অবহেলার বিষয়গুলো চিন্তা করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে বাংলা শব্দের বানান ও উচ্চারণ সম্পর্কে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বহুদিন আগেই। তিনি বলেছিলেন, বর্তমান সময়ে বাংলা বলতে গিয়ে ইংরেজি বলার একটি বিচিত্র প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। জানি না, অনেক ছেলেমেয়ের মাঝে এখন হয়তো এটি সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। এভাবে কথা না বললে যেন তাদের মর্যাদাই থাকে না, এমন একটা ভাব।

ভুল বানান, উচ্চারণ ও ইংরেজি ঢঙে বাংলা লেখা ও বলাটা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। বেসরকারি রেডিও চ্যানেলগুলোয় ইংরেজি-বাংলা মেশানো উদ্ভট উচ্চারণের বাক্যালাপে আতঙ্কিত না হয়ে উপায় থাকে না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপকসহ অংশগ্রহণকারীরা ‘গ্রেট’, ‘গুড মর্নিং’, ‘গুড ইভিনিং’, ‘গুড নাইট’ ও ‘বা-বাই’ বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। দশজনের কাছে নিজেকে স্মার্ট হিসাবে তুলে ধরার জন্য খুব সচেতনতার সঙ্গে বাংলার বদলে যতটুকু পারছেন ইংরেজি বলার কসরত করে যাচ্ছেন। মনে হচ্ছে, বাংলা ভাষা তাদের কাছে অবজ্ঞার ভাষা হয়ে যাচ্ছে।

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পেতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। রক্তে রঞ্জিত হয়েছে ঢাকার রাজপথ। ভাষার জন্য এই আত্মত্যাগ ও আন্দোলনকে পৃথিবী স্বীকৃতি দিয়েছে। ভাবতে ভালো লাগে, শিহরণ জাগে- ভাষার জন্য আমাদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে বিশ্ববাসী প্রতিবছর ‘একুশের’ দিনটি পালন করছে, পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। কিন্তু আজ প্রিয় ভাষা তার যোগ্য সম্মান থেকে অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। আজ সে বিকৃতিরও শিকার।

বাংলাদেশের সংবিধানে শিক্ষা কার্যক্রমের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার শিক্ষা ও চর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে বাংলা ভাষায় শুদ্ধ উচ্চারণকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পরও আমরা কজনই-বা শুদ্ধ বাংলায় শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলার বা লেখার যোগ্যতা অর্জন করি। ভাষায় আঞ্চলিকতার প্রভাব থাকা খুবই স্বাভাবিক। তবে শুদ্ধ বাংলার ব্যবহার ও চর্চা সম্পর্কে সচেতনতা খুব জরুরি।

মাতৃভাষা শুদ্ধভাবে শেখা ও ব্যবহার করা অগৌরবের কিছু নয়। বরং উল্টোটাই সত্য। পৃথিবীর সব উন্নত ও সভ্য জাতি জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করে মাতৃভাষায়। তারা বিদ্যাশিক্ষা করে মাতৃভাষায়, অফিস-আদালতের কাজকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, পারস্পরিক যোগাযোগের সমস্ত ক্ষেত্রে তারা মাতৃভাষাই ব্যবহার করে। এভাবেই তারা অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করেছে। জাপান ও চীনের দিকে তাকালেই আমরা তা দেখতে পাই ভাষার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তাদের দেশে তারা ইংরেজিকেও স্থান দেয় নি। তারা তাদের নিজেদের ভাষাতেই সব কাজ করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকে।

তাই আসুন, আমরা শুদ্ধ বাংলা ভাষার জানি, শুদ্ধ ভাষার চর্চা করি, শুদ্ধ ভাষায়, শুদ্ধ উচ্চারণে পরিষ্কারভাবে কথা বলি। সব কাজে নিজের মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহার করি। তাহলে আমাদের এই ভাষাকে দেওয়া হবে যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭