ইনসাইড বাংলাদেশ

টিকা নিয়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই মত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/02/2021


Thumbnail

করোনা ভ্যাকসিনের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে  সফল দেশগুলো আছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম । এখন পর্যন্ত দেশের এক ভাগের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়ে গেছে । প্রতিদিন আড়াই লাখের কাছাকাছি মানুষ টিকা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম করেছে ।এই নিয়মটি হল যে ,চল্লিশোর্ধ বয়সের উপরে যারা নিবন্ধন করবেন তারা টিকা দিতে পারবেন ।এছাড়া যারা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় জড়িত যেমন চিকিৎসক, সংবাদকর্মী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তথা সম্মুখ সারির যোদ্ধাদেরকে টিকা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান জানিয়েছেন যে, ৪০ বছরের এর নিচে আপাতত টিকা কার্যক্রম চালানোর কোনও অভিপ্রায় তাদের নেই । সমস্যা দেখা দিয়েছে এখানেই, গতকাল শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপু মনি জানিয়েছেন যে, পবিত্র ঈদ উল ফিতর এর পরে হলগুলো খুলে দেয়া হবে  এবং ১৭ ই মে  থেকে শিক্ষার্থীরা হলে  প্রবেশ করতে পারবে।  কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রবেশের শর্ত হিসেবে তিনি বলেছেন সবাইকে টিকে দিতে হবে ।  

আমরা জানি যে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ে তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে ।  এখন প্রশ্ন হলও যদি তারা নিবন্ধন করতে না পারেন এবং টিকা দিতে না পারেন তাহলে পরে তারা টিকা কোথা থেকে দিবেন । এ ব্যাপারে আজকে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন যে, এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশনা তিনি পান নাই । আবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বলেছেন যে,  এটি  সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের সিদ্ধান্ত যে চল্লিশের নীচে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে কিনা । প্রশ্ন উঠেছে যে, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া যদি হয় তাহলে পরে যে সমস্ত শিশুরা স্কুলে যাবে স্কুল- খুললে তাদেরকে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা কোথায় ? বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশে কলেজ পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থীই আবাসিক হোস্টেলে থাকে ।  একই সাথে আজ কওমি মাদ্রাসার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী যারা আবাসিক ভাবে থাকে তাঁদেরকেও টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক ।  কিন্তু বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা, সাধারণ শিক্ষা এবং সবকিছু মিলিয়ে  শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ কোটির ওপরে । দুই কোটি টীকার কার্যক্রম চালাতে ৪ কোটি টিকার ডোজ লাগবে ।  এই সময়ের মধ্যে ৪ কোটি ডোজ কীভাবে যোগাড় করা যাবে?

আমরা যদি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করি সারা বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা এই মুহূর্তে দুই লাখের কাছাকাছি । দুই লাখ শিক্ষার্থীদেরকে ভ্যাকসিন দিতে গেলে চার লাখ ডোজ ভ্যাকসিন লাগবে । সেই চার লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এখন যে টিকা কার্যক্রম চলছে সেই কার্যক্রমের মাঝ পথে দেয়া সম্ভব হবে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন? যখন সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কথা বার্তা বলে তখন তাদের মধ্যে সমন্বয় থাকা অত্যন্ত জরুরী। সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক সাফল্য ম্লান হয়ে যায় । বাংলাদেশে যে টিকা  কার্যক্রম শুরু হয়েছে সেটা শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক আগ্রহ, প্রচেষ্টা এবং উদ্যোগের ফসল । এই উদ্যোগকে এখন ব্যর্থ করার জন্য যদি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের লাগামহীন ভাবে, দায়িত্ব জ্ঞানহীন হবে কথাবার্তা বলে তাহলে সেটার ক্ষতি শেষ পর্যন্ত সরকারের উপরই হয়। কাজেই  শিক্ষামন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যের আগে যদি তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করতেন, কথা বলতেন তারপর যদি তিনি এ ধরনের ঘোষণা দিতেন বা এ ঘোষণা যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আসতো তাহলে পরে সকলের জন্য এটা ভাল হতো , স্বস্তিকর হতো। কিন্তু এখন যেভাবে যে মন্ত্রণালয় পারছে কথা বলছে এর ফলে এই সফল টিকা কার্যক্রমকে নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭