ইনসাইড পলিটিক্স

টাকা দিয়ে সচিব হওয়ার মিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/02/2021


Thumbnail

১০ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠিত হয়। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন বেগম খালেদা জিয়া। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় তৃতীয়বারের মতো তিনি প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন এক প্রহসনের নির্বাচন করেছিলো বিএনপি। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষণিকের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। যদিও এটাকে কোনো বৈধ সরকার হিসেবে মনে করা হয় না। তারপরেও বিএনপি মনে করে বেগম জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী।

এইবার সরকার গঠন করে খালেদা জিয়ার ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে যায়। দুটি সমান্তরাল সরকারের ক্ষমতা দৃশ্যমান হয়। একটি হাওয়া ভবনের সরকার অন্যটি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকার। হাওয়া ভবনের সরকারে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একটি করে প্রতিমন্ত্রী রাখা হয়। যে প্রতিমন্ত্রী আসলে নিলামে ওঠা অর্থ সম্পদ দিয়ে তারেক জিয়ার একান্ত অনুগতরা প্রতিমন্ত্রীর আসনটি দখল করেন। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অনুগতরা পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পায়। উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী করা হয় খালেদা জিয়ার অনুগত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রী করা হয় বাবরকে যিনি হাওয়া ভবনের তারেকের অনুগত ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় ওসমান ফারুককে আবার প্রতিমন্ত্রী দেয়া হয় এহসানুল হক মিলনকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী করা হয় মোরশেদ খানকে আর প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয় ড. রিয়াজ রহমানকে। এভাবে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে দুজন মন্ত্রী দিয়ে হাওয়া ভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্ষমতার ভারসাম্য রাখার চেষ্টা দৃশ্যমান হয়।

সংকট দেখা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে অবধারিত ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী এবং গত ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব মোসাদ্দেক আলী ফালু। কিন্তু হাওয়া ভবনের কর্তৃত্ব বাড়ার সাথে সাথে ফালুর প্রভাব প্রতিপত্তি কমতে থাকে। এ সময় তারেক জিয়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিয়ন্ত্রণের জন্য হারিসকে পছন্দ করেন। হারিস চৌধুরী দীর্ঘদিন হাওয়া ভবনের লোক এবং তারেক জিয়ার একান্ত অনুগত। তবে তারেক জিয়ার চাঁদা সংগ্রাহক হিসেবেই বিএনপিতে তার খ্যাতি ছিলো। হারিস চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হওয়ায় হাওয়া ভবনের নিয়ন্ত্রণে আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। 

হারিস চৌধুরী ও তারেক জিয়া মিলে সচিবদের তালিকা করে। সচিবদের মধ্যে যারা টাকা দিতে পারবেন তাদেরকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক পদে নিয়োগ দেয়া হবে। এ সময় প্রধান বনসংরক্ষক পদে নিয়োগ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। হাওয়া ভবনকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা দিয়ে গনি মিয়া প্রধান বনসংরক্ষকের পদ বাগিয়ে নেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এসময় এল জি ই ডির প্রধান প্রকৌশলীর পদও অর্থের বিনিময়ে নেয়া হয়।  এভাবে যে সমস্ত জায়গাগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে সেসব পদের জন্য হাওয়া ভবন সরাসরি টাকার খেলা শুরু করে। টাকা দিতে পারলেই গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হবে। এখানেই বিষয়টি থেমে থাকেনি। সচিব পদের জন্য তালিকা তৈরি করে সাক্ষাৎকারের জন্য তলব করা হয়।  এই সময়ে হাওয়া ভবনে সচিবদের ভীড় লক্ষ্য করা য়ায়। সচিবদের কে কত টাকা দিতে পারবে সেই বিষয়ে মুচলেকা দেয়া সাপেক্ষে কে কোথায় যাবে সেই তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হতো এরপর সেখান থেকে চলে যেত তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে (বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়)।

এই ব্যবস্থাপনায় বাধা হয়ে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব নুরুল ইসলাম। নুরুল ইসলাম ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে ফেনীর ডিসি ছিলেন। সেময় খালেদা জিয়া নুরুল ইসলামের সততা ও নিষ্ঠার কারণে পছন্দ করেছিলেন। আর এ কারণে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তাকে প্রথমে একান্ত সচিব পরে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সচিব হিসেবে নিয়োজিত করা হয়েছিলো। এসময় নুরুল ইসলাম তারেক জিয়ার দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার এক পর্যায়ে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার কাছে তারেক জিয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়টি পছন্দ হয়নি এবং সে কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করেন। 

নুরুল ইসলামের চাকরিচ্যুতির পর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে বাণিজ্যের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এই টাকা লেনদেনের প্রধান ব্যক্তিটি ছিলেন হারিস চৌধুরী।

পর্ব-৪: হাওয়া ভবনের টাটা কেলেঙ্কারি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭