ইনসাইড থট

এ্যাম্বুলেন্স ও ক্যাম্পাসে ফেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/02/2021


Thumbnail

সকাল বেলা মেলবোর্নের আকাশটা মেঘে ঢাকা।  রাতে একটু বৃষ্টি হয়েছে।  তাপমাত্রা কম।  সামার হলেও শীতের কাপড় পরতে হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে ফজরের নামাজ পড়ে ফেসবুক, messenger চেক করি।  এটা করি ভয়ে- না জানি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মিস করি সেই তাড়না থেকে।  

আজ দুটি স্ট্যাটাস পড়ে একটি বিষয় কমন পেলাম। আমার লেখার বিষয় তাই হয়ে গেলো এ্যাম্বুলেন্স।  কিছুদিন আগে আমার স্কুল বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমমেট করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। খুলনার একটি হাসপাতালে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছিলো বন্ধু। বন্ধুর বড়ো ভাই আমাকে বললেন সেনাবাহিনীর একটি এ্যাম্বুলেন্স আছে। সেটা যদি ম্যানেজ করা যায় তবে ঢাকায় নিয়ে গেলে ভালো চিকিৎসা করানো যাবে। আমাদের এই বন্ধু ছিল প্রকৃত পক্ষেই বন্ধু।  নিজের বিপদ তৈরি করে বন্ধুদের সে অনেক উপকার করেছে। যাদের উপকার করেছে তাদের মুখেই এই বন্ধুর কাজের বর্ণনা শুনেছি।  

আমি টেলিফোনে কথা শেষ করে আমাদের আরেক বন্ধু, যে সেনাবাহিনীতে আছে, তাকে ফোন করলাম।  সে বিষয়টি শুনে সরাসরি খুলনা হাসপাতালে যোগাযোগ করলো। দুদিন পরেই আরেক বন্ধুর কাছ থেকে খবর পেলাম আগামীকাল করোনা আক্রান্ত বন্ধু ঢাকায় আসবে। জেনে ভালো লেগেছিলো সেনাবাহিনী এমন একটি এ্যাম্বুলেন্স সংগ্রহ করেছে।  

কোনো এক অনুষ্ঠানে আরেক সেনা কর্মকর্তাকেও বলেছিলাম তারা যেন এ্যাম্বুলেন্স হেলিকপ্টার কেনে।  আমি জানিনা আমার কথাটি পছন্দ হয়েছিল কি না। ভালো কথা পছন্দ হলেও অনেকে সেটা করে না। কারণ ঐটা কেন তার মাথায় আসেনি !আমরা তো জানলাম হাঙ্গেরি থেকে কি কেনা হবে।  

কোনো একজন বরেণ্য ব্যক্তি বলছিলেন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতলের মতো আরো ৮ টি হাসপাতাল আমাদের বানানো উচিত।  এসব নিয়ে যখন কথা শুনছি তখন আমরা আরো জেনেছি একজন সৈনিকের পিতা -মাতাও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে পারেন - কিন্তু একজন প্রবীণ অধ্যাপককে তদবির করতে হবে যদি কোনো বড়ো কেউ থাকে অথবা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো অনুরোধ করে!এটাকে বৈষম্য বলা যাবে কি?  

সে যাই হোক, যে দুটি স্ট্যাটাস থেকে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে কথা বলতে চাই সে প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সন্তান তার বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবার কথা বলছেন একটি ফেইসবুক স্ট্যাটাসে। তিনি কেবল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেই ক্ষান্ত হননি।  বরং, আরো একটি মহান কাজ করেছেন।  নিজেকে সমাজসেবক হিসেবে যেমন প্রতিষ্ঠা করেছেন তেমনি তিনি একজন স্বীকৃত প্রবাসী অর্থনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা। কাজ করে দেশে টাকা পাঠিয়েছেন।  আবার নিজের পরিবার ও নিকট আত্মীয়দেরকে বিদেশ যেতে মানব দরদী ভূমিকা রেখেছেন।  গতকাল সকালে জেনেছি ওই মুক্তিযোদ্ধা কোরোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে গিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।  

ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতাল থেকে ফোন করে সন্তানকে বলছেন - বাবা আমাকে ওরা হাসপাতালে আনতে এম্বুলেন্স পাঠাতে দেরি করেছিল। তুমি আর দেরি কোরোনা। তোমার মাকে এখনই হাসপাতালে নিয়ে আসো ভর্তি করতে। বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী আমাদের বোন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে এসেছেন। কিন্তু নিজের আর ঘরে ফেরা হলো না। হলো না নিজ গ্রামের উন্নয়নের স্বপ্ন বাস্তবায়ন।  লন্ডনের হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগে ভুগে ইন্তেকাল করলেন আমাদের প্রিয় হুমায়ন কবির ভাই। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুন।  

এর পরেই আমার ছোট ভাইয়ের স্ট্যাটাস।  সে আরেক জনের স্ট্যাটাস শেয়ার করেছে।  বিষয় “গ্রামীণ এ্যাম্বুলেন্স।“  কিছুদিন আগেই আমার ওই ভাইটি এ বিষয়ে বলছিলো।  বাংলাদেশ সরকার ও বন্ধু রাষ্ট্র জাপানের যৌথ পরিচালনায় একটি প্রকল্পের অধীনে সে কাজ করছে।  তারা বর্তমান করোনা সংকট উপলব্ধি করে একটি এ্যাম্বুলেন্স কিনতে চাইছে।  সেটি থাকবে উপজেলা প্রশাসনের অধীনে।  এরপর আর জানা হয়নি।  আজ জানলাম।  সাটুরিয়া উপজেলা একটি এম্বুলেন্স সংগ্রহ করেছে এবং এর নাম দিয়েছে “গ্রামীণ এ্যাম্বুলেন্স।“  এই গ্রামীণ এম্বুলেন্স কিভাবে এক তরুণের পিতার জীবন বাঁচালো সেই বিষয়ে ওই তরুণের স্ট্যাটাস। এই স্ট্যাটাসটি দেখে যেমন মন ভোরে গেলো তেমনি আবার পরোক্ষণে মনটা অন্য দিকে চলে গেলো।  বাবু পি কে হালদার। উনি এক সময়ে এই প্রকল্প সহ আরো অনেক গ্রামীণ প্রকল্পের নেতা ছিলেন । তিনি ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব।  তিনি নাকি উন্নয়নের নামে সরকারের কোষাগার থেকে নেয়া হাজার হাজার কোটি টাকা উজাড় করেছেন।  

তিনি দেশের ফিরে সেই টাকা ফেরত দিতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু টাকা এখন যাদের কাছে আছে তারা চায় না উনি ফিরে আসুক।  কারণ - ফিরে এলেতো তাদের সুখ থাকবে না। তিনি টাকা ফেরত দেবেন ভালো কথা কিন্তু কেন তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেননি? যদি ওই টাকাগুলো ব্যয় হতো তাহলেতো বাংলার রূপ বদলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হয়ে যেত। নয় কি ? 

আমরা জানি আমাদের দেশের শিল্পপতিরা নিজেদের বিমান করে পালিয়ে যান আবার দেশে ফিরে আসেন। কেউ ফেরারি হয়েও আদালতে না গিয়ে মুক্তি পায় আবার কেউ বিমানবন্দরে নেমেই গ্রেফতার হন। কেউ আসল প্রয়োজনকে দেখে না।  

যেখানে প্রয়োজন ছিল অন্তত ১০০ টি এয়ার এ্যাম্বুলেন্স সেখানে হয়তো কেনা হয়েছে ড্রিম লাইন।  যেখানে প্রয়োজন হাসপাতাল- সেখানে হয়েছে অন্য কিছু।  দেশের পরিকল্পনাবিদের এই অগভীর মেধার কারণে জাতি এখনো ধুঁকছে। এমন একটি মহামারী যেখানে মানুষকে বদলে দেয়ার কথা, সেখানে চলছে অন্ধ স্বার্থপরতার প্রতিযোগিতা। জনগণের দুর্ভোগ ভেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে ঘরে বসে দেশ পরিচালনা করছেন সেখানে শুনতে পাই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে ফেরিঘাটে ভি-আইপি প্রটোকল নেয়ার খবর।  শুনতে পাই টাকার অভাবে পদ্মা রেল প্রকল্পের কাজে ধীর গতি।  

১১ মাস শেষ হয়ে ১২ মাস চলছে।  এমন একজন রাজনীতিবিদ আমরা পেলাম না যিনি অন্তত বলবেন - আর নয় এবার হবে সত্যিকার উন্নয়ন।  প্রতিটি ইউনিয়ন এ থাকবে হাসপাতাল, থাকবে এ্যাম্বুলেন্স, থাকবেন ডাক্তার, নার্স।  এমন একজন রাজনীতিবিদ পেলাম না যিনি অন্তত একটি ঊপজেলাকে করোনা মুক্ত করেছেন।  

আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা হলের তালা ভেঙে ক্যাম্পাসে ফিরছে।  তারা কি পারেনা জনতার পাশে দাঁড়াতে করোনা মুক্ত করতে ? আজ মন্ত্রীরা টি শার্ট  এ লিখছে "I AM Prime Minister Man." জাতি আপনাদের কর্মকান্ডে লজ্জা পাচ্ছে কি? যদি সত্যি সত্যি Prime Minister Man হতেন- তবে আজ শুনতে হতো না - অমুক করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বঙ্গবন্ধু যে চাটার দল দেখেছিলেন- সেই বিভৎস্য কালো ছায়া এখন বাংলার আকাশে শকুনের মতো ভিড় করছে।  

যারা আজ ছাত্রদেরকে হল দখলে উস্কানি দিচ্ছে তারা জাতির শত্রু  ছাড়া আর কি হতে পারে ? প্রিয় ছাত্র -ছাত্রী হল দখল নয়- করোনা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে তোমাদের অগ্রণী ভূমিকা দেখতে চাই। তোমরাই বদলে দিতে পারো দেশ। তোমরা হতে পারো বীর মুক্তিযোদ্ধা করোনা থেকে জাতিকে মুক্ত করে।  

ভ্যাকসিন সাময়িক সমাধান দেবে -কিন্তু করোনা থেকে যাবে এবং তারা বার বার আক্রান্ত করবে। আমি তোমাদের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে চাই।  তাই এস সকলে মিলে করোনা মুক্ত, লুটপাটকারী মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি।

প্রিয় ছাত্র -ছাত্রী করোনা ভাইরাস বোন, ভাই, বন্ধু, শিক্ষক অনেকেই কেঁড়ে নিয়েছে। সুতরাং, কোরনা ভাইরাস বাস্তব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিরাপত্তা দিতে সারাক্ষণ কাজ করছেন। তোমাদের সহযোগিতা তোমাদেরকে দ্রুত ক্যাম্পাসে ফিরতে অবদান রাখবে। 

প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমাদের শিক্ষকদের ভিআইপি মর্যাদা নেই।  সামরিক হাসপাতাল , পুলিশ হাসপাতাল, রেল হাসপাতাল, সচিবালয় হাসপাতাল আছে। তোমাদের শিক্ষকদের কোনো হাসপাতাল নেই।  তারা ওই সব সরকারি হাসপাতালে জায়গাও পাবেন না যদি করোনা আক্রান্ত হয়। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তোমরা ক্যাম্পাস ও রাজপথ দখলের পথ থেকে দূরে থাকবে কি?  

তোমরা আগামী ৩ মাস সমাজের কাজ করবে কি? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন থাকবে যাঁরা করোনা ভাইরাস নির্মূলে ভূমিকা রাখবে তাদের যেন সনদ দেয়া হয় এবং তাদেরকে যেন সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এস দেশ গড়ার সংগ্রামে-ক্যাম্পাস দখলে নয়।    



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭