ইনসাইড থট

‘বিনা বিচারে মুসতাককে মরতে হয়েছে কারাগারের প্রকোষ্ঠে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/02/2021


Thumbnail

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, মুসতাক কীভাবে মারা গেছেন তাঁর চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তিনি রাষ্ট্রের হেফাজতে ছিলেন, তাঁর দায়িত্ব নিয়েছিলো সরকার এই মৃত্যুর দায় হত্যার দায় সরকারের। কিন্তু এটা দায়িত্বহীনতার বিষয় নয়, এর মধ্যে একটা বার্তা আছে। তিনি তার ফেসবুকে এই বিষয়টি নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন,  আপনি-আমি সচেতনভাবে স্বীকার করি না করি আমাদের হাড়ে-মাংসে-মজ্জায়-শিরায় সেই বার্তা পৌছে যায়নি? আমাদের মগজে সেই বার্তা পৌঁছায় নাই? এই আইনে আপনি আটক হলেন কিনা, আপনি কারাগারে গেলেন কিনা, আপনি নির্যাতিত হলেন কিনা – সেগুলো এখন আর বিষয় নয়। কেননা আপনার/আমার মগজের ভেতরে ভয় তৈরি করে দেয়া হয়েছে – কী লিখবেন কী লিখবেন না সেটা রাষ্ট্র আর বলবে না, সরকার আর বলবে না; বলার দরকার হবে না। প্রতিটি অক্ষর লেখার সময় আপনি মনে করবেন মুসতাকের কথা। সেটাই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য, সরকারের উদ্দেশ্য।

কী লিখবেন? কি লিখবো? মুসতাকের নাম লিখবেন? লিখবো মুসতাক আহমেদ নামে একজন লেখক ছিলেন? ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’-এর অভিযোগ মাথায় নিয়ে কার্যত বিনা বিচারে তাঁকে মরতে হয়েছে কারাগারের প্রকোষ্ঠে, আদালত তাঁকে জামিন দেয়নি কেননা জামিনের ‘যোগ্য’ বলে বিবেচিত হননি, সেই সময়ে অনেকেই জামিন পেয়েছেন। মুসতাকের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেছে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি – এটা তো আমরা জানি। রাষ্ট্র চায়নি, কিন্তু রাষ্ট্র তো একটা বায়বীয় বিষয় নয়। কে চায়নি সেটা তো বুঝতে পারি – সরকার চায়নি। গত মে মাস থেকে তাঁকে যে আইনের অধীনে কারাগারে থাকতে হয়েছে সেই আইনের উদ্দেশ্য বুঝতে যদি এতদিনেও কারো সংশয় থাকে তবে আরেকবার মনে করুন – এই আইন কাকে নিরাপত্তা দেয় আর কার জীবন ‘নিরাপত্তাহীন’ করে তোলে, কাকে ‘মৃত্যুর দিকে’ ঠেলে দেয়?

সহিংসতার উদ্দেশ্য কেবল একজন ব্যক্তিকে হত্যা নয়, অন্যদের জানিয়ে দেয়া যে এই পরিণতি তারও হতে পারে। এরপরেও যারা বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কল্প-কাহিনী শোনান তাঁদের নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই, কিন্ত যারা এখনও ভাবছেন যে কেবল মানবিকতার আবেদনই যথেষ্ট তাঁরা বুঝতে অনীহ যে মানবিকতা দিয়ে ক্ষমতার উগ্র আকাঙ্ক্ষা দমন করা যায় না। মুসতাকের মৃত্যুর পর পোস্ট-মর্টেম হবে কিনা, তা স্বচ্ছ হবে কিনা জানি না কিন্ত এটা বুঝতে পারি পোস্ট-মর্টেম দরকার আমাদের, চিন্তার, কাজের। 

বাংলাদেশে অপঘাতে মৃত্যুর ঘটনা স্বাভাবিক, চিন্তার কারণে হত্যা করার ঘটনা বিরল নয়, বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটে অহরহ। কিন্তু আইনের মোড়কে ঢাকা হয়েছে মুসতাকের বিচার বহির্ভূত হত্যাকে, এটা বোঝা জরুরি। মুসতাক নেই, কিংবা বলতে পারেন শেষ পর্যন্ত মুসতাক ‘জামিন’ পেয়েছেন, ‘মুক্তি’ পেয়েছেন। আপনি কিন্ত জামিন পাননি, আমরা কেউ জামিন পাইনি।(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭