ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির ৭ মার্চ উদযাপনের রহস্য কি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/02/2021


Thumbnail

হঠাৎ করেই রাজনীতিতে এক চমক সৃষ্টি করেছে। গতকাল বিএনপির নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে, তারা ৭ মার্চ উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠান করবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭ মার্চ এক ঐতিহাসিক পর্ব।  ১৯৭১ সালের ওই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে এক যুগান্তকারী ভাষণ দিয়েছিলেন।  যে ভাষণটিকে ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ভাষণের অন্যতম বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।  এই ভাষণে তিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষণাই দেন নি, বাংলাদেশ রাষ্ট্র বির্নিমাণের পথনির্দেশনাও দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র কিভাবে এগিয়ে যাবে সে সম্পর্কেও তিনি সুনির্দিষ্ট একটি কর্মপন্থা ঘোষণা করেছিলেন।  মুক্তিযুদ্ধের রুপরেখা দিয়েছিলেন ৭ মার্চের ভাষণে।  

৭ মার্চ যেকোনো বিবেচনায় বাঙালি জাতির এক অনন্য দলিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর থেকে এই ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি নিষিদ্ধ ছিলো। এই ভাষণটি প্রচার করতে দেয়া হতো না। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ৭ মার্চের ভাষণ শুধু নিষিদ্ধই করেন নি, বিভিন্ন আর্কাইভে থাকা এই ভাষণের ভিডিও ফুটেজ নষ্ট করারও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ৭ মার্চের ভাষণ রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু জনগণ এই নিষিদ্ধ ভাষণ আবেগ নিয়ে শুনেছে উদ্দীপ্ত হয়েছে।

বিএনপি তার রাজনৈতিক কোনো দলিলেই ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে কোনো কথা বলে নি।  তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুরু করে ২৬ মার্চ থেকে।  সেই বিএনপি হঠাৎ করে ৭ মার্চ উদযাপন করার ঘোষণা কেনো দিল এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, বিএনপি ৭ মার্চ পালন করবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী হিসেবে এবং বিএনপি মনে করে ৭ মার্চের ভাষণের একটি তাৎপর্য রয়েছে।  কিন্তু এতদিন পরে বিএনপি ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য কোনো অনুভব করলো সে প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে উঠেছে।  রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন মূলত পাঁচটি কারণে বিএনপি এখন ৭ মার্চ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

১. নতুন প্রজন্মের ভোটার: নতুন প্রজন্মে যারা ভোটার হয়েছেন তারা মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে অনেক সচেতন। তারা ইতিহাস জানে এবং তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকার করে এবং তার নেতৃত্বের যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এ ব্যাপারে তাদের কোনো সংশয় সন্দেহ নেই। বিএনপি যতই ৭ মার্চের ভাষণকে উপেক্ষা করছে, বঙ্গবন্ধুকে উপেক্ষা করছে ততই তারা নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এই উপলব্ধির কারণেই বিএনপি হয়ত ৭ মার্চ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২. জিয়াউর রহমানের অস্তিত্ব রক্ষা: বিএনপির অনেকেই মনে করছে যে, এটি একটি রাজনৈতিক ভালো কৌশল। ৭ মার্চ যদি তারা উদযাপন করে তাহলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের একটি সমঝোতার দুয়ার উন্মোচিত হবে এবং সেই সমঝোতার পথ ধরে জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে তারা দেনদরবার করতে পারে। রাজনৈতিক সমঝোতার একটি পথ উন্মোচনের জন্যই বিএনপি ৭ মার্চ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লষকের কেউ কেউ মনে করেন।

৩. বিএনপির বোধদয়: বিএনপির রাজনীতিতেও পরিবর্তন হচ্ছে এবং বোধদয় ঘটছে। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন যে, ১৯৭৯ সালের বিএনপি আর ১৯৮৩ বিএনপি এক ছিলো না।  আবার ২০০১ এর বিএনপি অন্যরকম ছিলো। বিভিন্ন সময় বিএনপি নানা বাস্তবতায় তাদের নীতি কৌশল পরিবর্তন করেছে। এখন বিএনপি উপলব্ধি করেছে যে, ৭ মার্চ নিয়ে যদি বিএনপি ভুল রাজনীতি করে তাহলে সেটি তাদের জন্য ক্ষতিকর।  এই আত্মউপলব্ধি হয়ত বিএনপিকে ৭ মার্চ উদযাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে।

৪. আন্তর্জাতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির গ্রহণযোগ‌্যতা কমছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের বিতর্কিত অবস্থানের জন্য বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের জন্য। আর তাই বিএনপি এখন মনে করছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে গেলে বিএনপিকে কতগুলো বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান ঘোষণা করতে হবে। ৭ মার্চের ভাষণ এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান সুস্পষ্ট করার তাগিদ বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক মহল বিএনপিকে দিচ্ছিলো। সেই ধারাবাহিকতায় হয়ত ৭ মার্চ উদযাপনে ব্যাপারে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

৫. শুধুমাত্র চমক সৃষ্টি: রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বেশিরভাগই মনে করছে বিএনপির ৭ মার্চ উদযাপন রাজনৈতিক একটি স্ট্যান্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। বিএনপি এখন যেকোনো মূল্যে কিছু কর্মসূচি করতে চায়।  আর সেই কারণেই পলিটিক্যাল স্ট্যান্ট হিসেবে বিএনপি ৭ মার্চ উদযাপন করছে।  তবে যে কারণেই করুক না কেনো বিএনপির ৭ মার্চ উদযাপন রাজনীতিতে একটি বড় মেরুকরণের প্রথম ধাপ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭