ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বাইডেনের নজর এখন মধ্যপ্রাচ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/02/2021


Thumbnail

সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে আটক বা হত্যা করতে অভিযান চালানোর অনুমোদন দেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এরকম তথ্যই প্রকাশ করা হলো।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের দপ্তর ওই প্রতিবেদন নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ‘আমাদের মূল্যায়ন হলো, জামাল খাসোগিকে আটক বা হত্যা করতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অভিযান চালানোর অনুমোদন দেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবে যুবরাজ বিন সালমানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে আমরা এই মূল্যায়নে পৌঁছেছি।’

খাসোগি ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পরপরই খুন হন। তাঁর লাশ গুম করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে থেকে ওয়াশিংটন পোস্ট-এ কলাম লিখতেন তিনি। খাসোগি হত্যার দায়ে সৌদির একটি আদালত দেশটির পাঁচজন নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে তাঁদের সাজা কমিয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড করা হয়।
  
সাংবাদিক খাসোগি সৌদি যুবরাজের কট্টর সমালোচক ছিলেন। শুরুতে খাসোগি খুন হওয়ার কথা অস্বীকার করে সৌদি আরব। পরে দেশটির সরকার স্বীকার করে, কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। সৌদি যুবরাজ এই হত্যায় তাঁর সম্পৃক্ততার কথা শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন।

প্রতিবেদন প্রকাশের আগের দিন বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফোনালাপে সৌদির বাদশাহর কাছে মানবাধিকার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাইডেন। 

সৌদির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানায়, বাদশাহ সালমান ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এই অঞ্চলে ইরানের অস্থিতিশীলমূলক কার্যক্রম ও দেশটির সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েক জন সৌদি নাগরিকের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও এর বাইরে থেকেছেন যুবরাজ। এবার মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সরাসরি অভিযুক্ত হলেও সৌদি আরব ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে একে ‘নেতিবাচিক, মিথ্যা এবং অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়েছে।

সৌদি আরবের বর্তমান বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদ এর ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৭ সাল থেকে দেশটির নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রেখে আসছেন। তাকেই দেশটির কার্যকর শাসক বলে মনে করা হচ্ছে।

ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বাইডেনের প্রচেষ্টা সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট সৌদি আরব। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ব্যক্তিগত সম্পর্কের সুবাদে সৌদি আরব তাদের প্রতিটি অন্যায় পদক্ষেপে যে রকম আমেরিকার সমর্থন পেয়ে আসছিল, বাইডেনের আমলে তা ঘটছে না, তা খাসোগির হত্যার তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের পর অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেলো।

এদিকে, ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের ওপর হামলা বৃহস্পতিবার বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন জানায়, কাতাইব হিজবুল্লাহ ও কাতাইব সাইয়্যিদ আল-শুহাদা নামের দুটি ইরানপন্থী মিলিশিয়া গোষ্ঠীর ওপর পূর্ব সিরিয়ায় হামলা চালানো হয়। এই হামলাকে উপযুক্ত সামরিক পদক্ষেপ যা কঠোর কূটনৈতিক পন্থার সমন্বয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও বলা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই অভিযান একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেবে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন ও জোট সদস্যদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় কাজ করবেন। একই সঙ্গে সিরিয়া ও ইরাক সীমান্তের উত্তেজনা নিরসনে দৃঢ়তার সঙ্গে উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশেই গণতন্ত্র নেই। তারপরও প্রতি চার বছর পর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভাগ্যও পরিবর্তিত হয়। ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ক্ষমতায় বসার পর এখন অনেকটাই স্পষ্ট যে বাইডেন মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে অনেক সতর্কতার সঙ্গে কাজ শুরু করেছেন।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বাইডেন বলেছিলেন, তিনি ইরানকে পুনরায় পারমাণবিক চুক্তির আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন। ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামার সময় করা পারমাণবিক চুক্তিটিকে ডেমোক্রেটরা তাদের অন্যতম অর্জন হিসেবে দেখে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে ২০১৮ সালে সেই চুক্তি বাতিল করেন। ফলে ইরানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে। ওবামার পথ ধরে জো বাইডেন তাই ইরানের সঙ্গে চলমান এই উত্তেজনা প্রশমিত করার চেষ্টা শুরু করেছেন। কিন্তু কাজটা মোটেও সহজ নয়, বোঝাই যাচ্ছে। 

বাইডেন তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন বন্ধ করবেন এবং সৌদি আরবের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করবেন। সে বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছেন বাইডেন কিন্তু ওবামার শাসনামলের শেষের দিকে সম্পর্কের অবনতির মধ্য দিয়েও বাইডেন সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, যে অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে ইয়েমেনের ওপর বিমান হামলা করার কাজেই।
 
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা বদলে দেশটির পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন ঘটে না। বর্তমান প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যদের সঙ্গে ভঙ্গুর অবস্থার কতটা জোড়া লাগাবেন নাকি মধ্যপ্রাচ্যে আবারও আগ্রাসন চালাবেন সেটি নিয়েই একধরণের দোলাচল রয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭