ইনসাইড বাংলাদেশ

বিএনপির বুমেরাং

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/09/2017


Thumbnail

রোহিঙ্গা ইস্যু বুমেরাং হলো বিএনপির জন্য। সরকারকে বিপদে ফেলতে গিয়ে নিজেরাই বেকায়দায় পড়েছে। আবার কৌশলের কাছে হেরে গেল বিএনপি। মিয়ানমারে রাখাইন গণহত্যার পরপরই বিএনপি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানায়। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সালের অভিজ্ঞতা থেকেই বিএনপি দ্রুত ইস্যুটি লুফে নেয়।

২০১২ সালে যখন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন শুরু হয়েছিল, তখন বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ‘ইতিমধ্যেই কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে, নতুন করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে নেওয়ার সুযোগ নেই। বর্ডার গার্ড রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় কঠোর অবস্থান নেয় সেই সময়। সেই বিবেচনা থেকে বিএনপি ধারণা করেছিল এবারও হয়তো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে। সেই বিবেচনা থেকেই বিএনপি রাখাইন নিপীড়ন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নামে। মাঠে নেমেই তারা আওয়ামী লীগকে আক্রমণ করে। রিজভী আহমেদ তো সব সময় একধাপ এগিয়ে থাকেন। ৭ সেপ্টেম্বর তিনি এক মানববন্ধনে মিয়ানমারে গণহত্যার জন্য বাংলাদেশ সরকারকেই দায়ী করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাখাইন সম্প্রদায়ের উপর গণহত্যার প্রচণ্ডতা উপলব্ধি করে দ্রুত সীমান্ত প্রহরা শিথিল করে দেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, ‘২০১২ র প্রেক্ষাপট আর এবারের প্রেক্ষাপট  ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০১২ তে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ছিল অন্যরকম। আর এবারের বিষয়টা সম্পূর্ণ মানবিক। এবার প্রাণে বাঁচতেই তাঁরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি মাতৃত্বের মানবিকতায় নিয়েছেন।’

গত ৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক চিঠি দেওয়া হয় আটটি মুসলিম প্রধান দেশে। দেশগুলো হলো, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েত। এই চিঠিতে ফখরুল সরকারের সমালোচনা করে লিখেন, ‘মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও সরকার (বাংলাদেশ) তাদের প্রতি (রোহিঙ্গাদের) নূন্যতম সহানুভূতি দেখাচ্ছে না। অবিলম্বে বিষয়টি নিয়ে ওই দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাবও করা হয় ওই চিঠিতে। চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকারের উদাসীনতায় ফলে লাখ লাখ নিপীড়িত মুসলিমের জীবন আজ বিপন্ন।’ কিন্তু সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ, মানবিকতায় মুগ্ধ হয় মুসলিম দেশগুলো। বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বিএনপিকে জানায় যে তাঁদের ফাস্টলেডি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ‘সরকার যে কার্যকর আশ্রয় ও মানবিক সাহায্যের ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে তুরস্ক মুগ্ধ।’ রাষ্ট্রদূত সরকারের সঙ্গেই এই ইস্যু নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে জানায়, ‘এখন এনিয়ে  বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের ইচ্ছা তুরস্ক সরকারের নেই।’ মালয়েশিয়াও সরকারের বিশেষ  করেপ্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশাংসা করে, সরকারের সঙ্গেই এই ইস্যু নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে।

এদিকে, এই ইস্যু নিয়ে দুদিন বক্তৃতা করেই বিএনপি চুপ হয়ে যাওয়ায়, কূটনৈতিক মহল মনে করছে, বিএনপি রোহিঙ্গাদের জন্য মমতায় নয় বরং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই এসব অভিযোগ করেছিল। এই ঘটনায় বিএনপির বিশ্বাসযোগ্যতা ওই আটটি দেশের কাছে নষ্ট হয়েছে। জাতীয়ভাবেও বিএনপি নিজেদের আরেকবার খেলো রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করল। আর দশটা ইস্যুর মতো এটাও বিএনপির জন্য বুমেরাং হয়ে গেল।


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭