ইনসাইড থট

মিল-অমিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/09/2017


Thumbnail

দুজনের বয়স কাছাকাছি। দু বছরের বড় ছোট তারা। দুজনের পিতাই দুটি দেশের প্রতিষ্ঠাতা পিতা। দুজনের পিতাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। দুজনই গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন। দুজনই তাঁদের নিজ দেশে অবিসংবাদিত নেত্রী। দুজনই দুই সন্তানের জননী। কিন্তু জনগণের প্রতি ভালবাসা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়তা এবং মানবিকতার ক্ষেত্রে দুজনের ব্যবধান অনেক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মিয়ানমারের ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির নেতা অং সান সুচি। দুজনই বর্তমান বিশ্বে প্রধান দুই আলোচিত নেত্রী। সাম্প্রতিক সময়ে দুজনের নামই উচ্চারিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে। এখানে শেখ হাসিনা নায়ক, আর সুচি ভিলেন।

অং সান সুচির জন্ম ১৯ জুন ১৯৪৫ সালে। আর শেখ হাসিনার জন্ম ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে। সুচির বাবা অং সান আধুনিক বার্মার প্রতিষ্ঠাতা। ব্রিটিশ অর্গল থেকে বার্মার মুক্তির প্রধান নায়ক। আধুনিক বার্মার রূপকার। ১৯৪৭ সালে তাঁরই সতীর্থ সেনা কর্মকর্তাদের হাতে অং সান নিহত হন। সুচি ছিলেন তাঁর বাবা-মায়ের কনিষ্ঠ কন্যা। অং সান বার্মার মুক্তি সম্পন্ন করতে পারেননি। কিন্তু শেখ হাসিনার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অবিস্মরণীয় বাঙালি জাগরণের রূপকার। তাঁর হাত ধরেই মুক্তির নোঙ্গরে পতাকা উড়ায় বাংলাদেশ। তিনিই বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙালি জাগরণের নায়ক। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছর পর জাতির পিতাকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে ৭১ এর প্রতিক্রিয়াশীল পরাজিত শক্তি। সুচি সেদিক থেকে ভাগ্যবান ঘাতকরা শুধু তাঁর বাবাকেই হত্যা করেছিল। আর ৭৫ এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দুজনই বিদেশে থাকায় বেঁচে যান।

সুচি এবং শেখ হাসিনা দুজনই সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন ৭৫ থেকে। দুজনেই এই আন্দোলনের সূচনা করেন বিদেশ থেকে। সূচি ১৯৮৮ সালে এক শান্তিপূর্ণ গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। শেখ হাসিনাও এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সামরিক জান্তাকে পরাস্ত করেন। ৮৮’র নির্বাচনে সুচি বিজয়ী হয়েও ক্ষমতায় যেতে পারেননি। সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। ৯০ এ বাংলাদেশেও স্বৈরাচারের পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েও ক্ষমতা পাননি শেখ হাসিনা। এ পর্যন্ত দুই নেতার মিলগুলো প্রায় সমান্তরাল। ১৯৯১ সালে শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রের জন্য সুচি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। সারা বিশ্বে তাঁর শান্তি পুরস্কার প্রশংসিত হলেও, এর পিছনে তাঁর অক্সফোর্ডের বন্ধু এবং স্বামীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে অনেকে মনে করেন।

এরপর সুচির গল্প সমঝোতা আপোষ আর সমন্বয়ের। আর শেখ হাসিনার গল্প গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য, নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে বিজয় অর্জনের। সুচি গৃহবন্দীত্বকে মেনে নিয়ে সামরিক জান্তা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেছেন। সামরিক জান্তার অগণতান্ত্রিক এবং অগ্রহণযোগ্য সংবিধান সংশোধনীকে মেনে নিয়েছেন। এমনকি ওই সংবিধানের একটি বিস্ময়কর ধারা যেখানে বিদেশীকে বিয়ে করলে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া যাবে না- সেটি মেনে নিয়েও নির্বাচন করেছেন। কিন্তু এসব সত্ত্বেও পশ্চিমা দুনিয়ায় তিনি ‘রাজকন্যা’। তাঁকে নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়া ও রাজনীতিতে যত মাতামাতি তাঁর কানাকড়িও হয়নি ‘গরীব মেয়ে’ শেখ হাসিনাকে নিয়ে। অথচ দেখুন, সুচির যেখানে আপোষকামীতার শুরু। সেখানেই শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের সংগ্রামের নবযাত্রার সূচনা। ৯১ এর পর শেখ হাসিনা জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভাতের অধিকারের জন্য অর্থনীতির জাগরণের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক্ষুধা, দারিদ্রকে জয় করে করে বাংলাদেশকে বিস্ময়কর সাফল্যের দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। সামরিকতন্ত্র , স্বৈরাচারের তিনি অবসানই ঘটাননি, এর পুনরুত্থানের পথ চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন। মিয়ানমারের নতুন সংবিধানে যেখানে এক -চতুর্থাংশ  সেনা সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক, সেখানে বাংলাদেশের সংবিধানে সেনা অভ্যুত্থান, ষড়যন্ত্রের চেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ।

সুচি আর শেখ হাসিনার তুলনা যেন খরগোশ আর কচ্ছপের সেই গল্পের মতো। সুচি পশ্চিমা আনুকুল্যে গৃহবন্দীত্ব উদ্‌যাপন করেছেন, আর শেখ হাসিনা ধীরে ধীরে জনগণের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন, ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ এর মাধ্যমে।

নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘রাজনীতি জাদুকরের ম্যাজিক নয়, নিমিষে সবাইকে চমকে দিয়ে সব শেষ হয়ে গেল। রাজনীতি হলো এক দীর্ঘ পথের যাত্রা, সে যাত্রা পথ কখনো বন্ধুর, কখনো মৃত্যুসংকুল, কখনো বা হতাশার। এই দীর্ঘ ক্লান্তির পথ পেরুনোর পর আদর্শিক বিজয় অর্জিত হয়।’ ম্যান্ডেলার এই উক্তির দৃশ্যমান উদাহরণ হলেন শেখ হাসিনা।

সুচি হলেন আদুরে রাজকন্যা। যিনি তাঁর লক্ষ্য অর্জনের আগেই ক্লান্ত হয়ে আত্মসমর্পন করেছেন। এখন সামরিক জান্তার নিপীড়ন, নৃশংসতা মুখ বুঝে তাঁকে হজম করতে হয়। আর শেখ হাসিনা হলেন, উপেক্ষায় অনাদরে সবার অগোচরে বেড়ে ওঠা বিস্ময়কর মেধাবী এক গরীব মেয়ে, যাঁর প্রতিটি অর্জন ত্যাগ দিয়ে। যিনি জীবনকে পাখির পালকের মতো মনে করেন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য যিনি কষ্টের এক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন, আপোষের হাতছানি উপেক্ষা করে। আজ রোহিঙ্গা ইস্যু বিশ্ববাসীর সামনে দুই নেত্রীকে দাঁড় করিয়েছে। যেখানে একজন লজ্জিত, নিজের আপোষকামীতার গ্লানিতে অবকুষ্ঠিত। আর একজন সারা বিশ্বে তাঁর মানবিকতা, রাষ্ট্রনায়োকিত সিদ্ধান্তের জন্য স্যালুট পাচ্ছেন, প্রশংসায় ভাসছেন। কিন্তু এসব স্তুতিতে তিনি অভ্যস্ত নন। আর এসব শোনার সময় কোথায় তাঁর? মানুষের কল্যাণ, মানবতার জন্যই তো তাঁর সবটুকু সময়।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭