ইনসাইড থট

‘সিভিল সমাজের লোকেরা গাঁজা-ভাং নেশা করে কিনা জানিনা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/03/2021


Thumbnail

(বাংলাদেশে সুশীল সমাজকে নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। বিশেষ করে ‘মুশতাকের মৃত্যু, নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি নিয়ে সুশীল সমাজ অত্যন্ত সক্রিয়। সুশীল সমাজ নিয়ে কিছু লিখেছেন আকবর আলী খান। প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে তার ‘আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি’ গ্রন্থে ‘বাংলাদেশে সিভিল সমাজ: বাস্তবতার সন্ধানে’ একটি ধারণা নিবন্ধের কিছু অংশ উদ্বৃত করা হলো।)

আজকাল সুশীল শব্দটির যত্রতত্র আকছার অপপ্রয়োগ দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো উৎসাহী আমলা ‘সিভিল সার্ভেন্ট’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে লিখছেন ‘সুশীল সেবক’। এখানে একসঙ্গে দুটি অপরাধ করা হচ্ছে। প্রথমত, ‘সিভিল সার্ভেন্ট’-এর প্রতিশব্দ রূপে ‘সুশীল সেবক’ ব্যবহার বাংলাদেশ সংবিধানে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংবিধানের বাংলা পাঠ চূড়ান্ত। সংবিধানের ১৩৫ অনুচ্ছেদে ‘সিভিল পোষ্ট’- এর স্থলে ‘অসামরিক পদ’ শব্দ-যুগল ব্যবহৃত হয়েছে। সংবিধানে চাকরিসংক্রান্ত বিষয়ে ‘সিভিল’ অর্থ হলো ‘অসামরিক’; কোনো অবস্থাতেই ‘সুশীল’ নয়। ‘সার্ভেন্ট’ শব্দটি সংবিধানে ব্যবহৃত হয়নি। তবে সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদে ‘সার্ভিস’ শব্দের স্থলে ‘কর্ম’ শব্দটি প্রয়োগ করা হয়েছে। তাই সংবিধান অনুসারে ‘সিভিল সার্ভেন্ট’-এর প্রতিশব্দ হবে ‘অসামরিক কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তি’।

দ্বিতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের সুশীল সেবক বর্ণনা করা একটি ডাহা মিথ্যা প্রচারণা। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস সম্পর্কে প্রায়ই বলা হতো যে এর ‘neither Indian, nor civil, nor service’। অর্থাৎ এরা ‘ইন্ডিয়ান’ নয় (এর বেশির ভাগ কর্মকর্তাই ইংরেজ ছিলেন, ভারতীয় নয়); মোটেও ‘সিভিল’ নয় (এদের অনেকেই ছিলেন অত্যন্ত উদ্ধত) এবং এদের মধ্যে সার্ভিসের লেশমাত্রও ছিলো না (এরা সেবা করতেন না; প্রজাদের শাসন করতেন)।

বাংলাদেশে ‘সিভিল সার্ভেন্ট’দের সম্পর্কেও একই মন্তব্য প্রযোজ্য। যাঁরা ‘সিভিল সার্ভেন্ট’দের সুশীল সেবক বলে জাহির করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সুশীল শব্দটির সবচেয়ে ব্যাপক অপপ্রয়োগ হচ্ছে সুশীল সমাজ শব্দগুচ্ছ। ইংরেজি ‘সিভিল’ শব্দটির অনেক অর্থ রয়েছে। শব্দটির অর্থ শুধু ভদ্র, অমায়িক, বিনয়ী বা সুশীল নয়। ‘সিভিল কোর্টের’ পরিভাষা হলো ‘দেওয়ানি আদালত’। ‘সিভিল ওয়ারের’ অর্থ সুশীল যুদ্ধ নয়, গৃহযুদ্ধ। তেমনি ‘সিভিল ম্যারেজ’কেও কেউ সুশীল বিবাহ বলে না।

সুশীল শব্দটির সংজ্ঞা নিয়ে গোপাল ভাঁড়ের একটি চমৎকার কাহিনী রয়েছে। গল্পটি নিম্নরূপ: গোপাল একদিন রাজসভায় এসে বলল, ‘মহারাজ, আজ একজন সুশীল বালকের দেখা পেয়েছি।’

মহারাজ বললেন, ‘তুমি কী করে বুঝলে সে সুশীল বালক?’

গোপাল বলল, ‘বাপ আর ছেলে মাঠে কাজ করছিল। কিছুক্ষণ কাজ করার পর ছেলে বাবাকে বলল, ‘বাবা তুমি একটু দূরে সরে যাও, ‘আমি এখন গাঁজা টানব। গুরুজনের সামনে কখনো গাঁজা টানা উচিত নয়।’ এবার আপনিই বলুন, ‘ছেলেটি সুশীল কি না?’

সিভিল সমাজের লোকেরা গাঁজা-ভাং নিয়ে নেশা করে কি না জানি না। তবে তারা অনেক কাজ করে যা সুশীল লোকেরা করে না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭