ইনসাইড বাংলাদেশ

যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে রক্তের পতাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 05/03/2021


Thumbnail

২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট নির্বাচন করে এবং ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় বিএনপি-জামায়াত জোট। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের ওই জোট দুই তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে নির্বাচিত হয়। বেগম জিয়ার সামনে ছিলো এক অবারিত সুযোগ কারণ বিএনপি এককভাবেই দুই তৃতীয়াংশ আসন পেয়েছিলো কিন্তু খালেদা দিয়া ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর যে মন্ত্রিসভা গঠন করেন সেই মন্ত্রিসভা গঠন ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আমাদের স্বাধীনতার জন্য এক চরম চপেটাঘাত। 

মন্ত্রিসভায় দুইজন স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রী করা হয়। যে দুজনকে মন্ত্রী করা হয় তারা হলেন মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। এরা দুজনই একাত্তরে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং ধর্ষণের সঙ্গে সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত ছিলো। এর আগে যাদেরকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী করা হয়েছিলো তারা রজাকার ছিলেন বটে কিন্তু তারা কেউই বড় ধরনের যুদ্ধাপরাধী বা সরাসরি গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বরং তাদের একটা রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালে ভয়ংকর দুজন ঘাতক যারা বাংলাদেশের গণহত্যায় মোটামুটি নেতৃত্ব দিয়েছিলো তাদেরকে মন্ত্রী করা হয়। মতিউর রহমান নিজামী প্রথমে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করে পরে শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্ব নেয় আর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে দেয়া হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। 

মতিউর রহমান নিজামী ১৯৭১ এর নয় মাস পাবনার সাঁথিয়া এলাকায় নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছে এবং একাধিক ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে তিনি অভিযুক্ত। অন্যদিকে আলী আহসান মুজাহিদ ফরিদপুর এলাকায় শুধু ত্রাসের রাজত্বই কায়েম করেন নি, ঢাকার বুদ্ধিজীবী হত্যায় তার বড় ধরনের ভূমিকা ছিলো বলে জানা যায়। এই দুই যুদ্ধাপরাধীদেরকে মন্ত্রী করার মধ্যে দিয়ে বেগম জিয়া নিজেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। 

আর এর ফলে বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আলবদরদের ষোলো কলা পূর্ণ হয়। এই দুই মন্ত্রী হওয়ার পর বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের নিত্য নতুন সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে এবং বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে। এই জঙ্গি সংগঠনের মাধ্যমেই সারাদেশে একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এর ফলে বাংলাদেশে শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাইয়ের মতো জঙ্গিদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হয় পাশাপাশি সারাদেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। 

মূলত ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার গোষ্ঠির পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যায়। আর এরপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের দণ্ডিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবার ফিরিয়ে আনার একটা প্রক্রিয়া এখন চলমান। কিন্তু রাজাকারদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থাকার কারণে সেই প্রক্রিয়া এখনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭