ইনসাইড বাংলাদেশ

কার টাকা: কে ফাঁসে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 05/03/2021


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ উঠছে। এটা নিয়ে দেশে তোলপাড় চলছে। পি কে হালদারের ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লোপাট করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া, ফরিদপুরের মাঠ পর্যায়ের ২ জন আওয়ামী লীগ নেতার দুই হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের ঘটনায় সারাদেশে স্তম্ভিত। কিন্তু এই আলোচনার মধ্য দিয়ে সবচেয়ে বড় যে আলোচনাটা আসছে তা হলো, এই টাকাগুলো কি আসলেই তাদের নাকি অন্য কারো প্রতিনিধি হিসেবে এই টাকাগুলো পাচারের দায় ভোগ করছেন তারা।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, এই টাকা পাচার টাকা পাচারের নেপথ্যে কিছু রথী-মহারথী এবং গডফাদার রয়েছেন, যারা আলোচনার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। তাদের ইঙ্গিত, ইন্ধন এবং সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এই টাকা পাচার করা সম্ভব নয় বলেও মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। পি কে হালদার পিপলস লিজিং এর এমডি ছিলেন এবং আরো তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া বানিয়ে ৩ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এখন তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন। প্রশ্ন উঠেছে যে, পি কে হালদার কি ৩ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন নাকি তার পেছনে কোনো প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মহল আছে, যিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। যার নাম উচ্চারিত হচ্ছে না এবং যার অভিপ্রায় অনুযায়ী এই টাকাগুলো পাচার হয়েছে। কারণ, পি কে হালদারের একার পক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট করা সম্ভব কিনা এ প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই হলো বরকত এবং রুবেল। তারা ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের জমিজমা, ১৮৮ টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ হয়েছে। সিআইডি তাদের বিরুদ্ধে দুই হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের বিষয়টি তদন্ত করছে। বরকত এবং রুবেল ফরিদপুরের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা এবং তারা আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গ সংগঠন করতো। ফরিদপুরবাসীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, এই দুজনার পক্ষী দুই হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা কিভাবে সম্ভব? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো বড় রাজনৈতিক মদদ রয়েছে কিংবা তাদের গডফাদার রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, বরকত এবং রুবেলের টাকা আসলে তাদের টাকা না। তাদেরকে সামনে রেখে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা মহল এই টাকা বিদেশে পাচার করেছে। শেষ পর্যন্ত বরকত এবং রুবেল ফাঁসলেও নেপথ্যে যিনি মূল ব্যক্তি, তিনি থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বিভিন্ন সময় দেখা গেছে যে, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানগুলোতে সামনের মানুষটি কে ধরা হয়। যারা পেছনে থেকে ঐ মানুষটিকে দুর্নীতিবাজ করে। তাকে বিপথগামী করতে আশ্রয়-প্রশ্রয়, সহযোগিতা করে তাদেরকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হয়। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি আটক হয় কিন্তু তার পেছনের গডফাদার বা শক্তি আলোচনার বাইরে চলে যায় খুব কৌশলে। এর আগে ক্যাসিনো বাণিজ্যের সময় যে বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে, কিন্তু পেছনের গডফাদারদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সেলিম প্রধান, জিকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাদের পিছনে গডফাদারদের ব্যাপারে কোনো তদন্ত হয়নি, কোনো অগ্রগতিও হয়নি। বর্তমানে এই একই ধারায় যে হাজার হাজার কোটি টাকা যারা বিদেশে পাচার করেছেন তারাই কি আসলে পাচারকারী না বাহকমাত্র, সেই বিষয়টি অনুসন্ধান করা দরকার বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন। কারণ, সেটি যদি না করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অর্থ পাচার বন্ধ করা সম্ভব হবে না। একজন ফরিদপুরের স্থানীয় নেতার পক্ষে এই বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার যেমন সম্ভব নয় তেমনি এক পি কে হালদার তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া বানিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারেন না, এমনটিই মনে করে সাধারণ মানুষ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭