ইনসাইড বাংলাদেশ

একদিকে দুর্ভোগ, অন্যদিকে মানবিকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/09/2017


Thumbnail

রোহিঙ্গা নির্যতনের ঘটনা নতুন না। সেই ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে যখন বার্মার খ্রিস্টান রাজা আরাকান দখল করে তখন থেকে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন হয়েই আসছে। এরপর যখন জাপান বার্মা দখল করে নেয় ১৯৪২ সালে আরেকবার রোহিঙ্গারা নির্যাতনের শিকার হয়, এরপর ১৯৬২, ১৯৮২, ১৯৮৪, ১৯৮৫, ১৯৯০ এবং ২০১২ সালে রোহিঙ্গা উচ্ছেদে বর্বরতম অভিযান পরিচালনা করে বার্মার সামরিক জান্তা। বরাবরই নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে এই রোহিঙ্গারা। সম্প্রতি আবারো মিয়ানমারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমার থেকে জাতিগত কারণে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদের অভিযান চালাচ্ছে সে দেশের সেনাবাহিনী। এই ঘটনায় বাংলাদেশেসহ আন্তর্জাতিক ভাবে মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করায় তারা এখন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে রোহিঙ্গা তাড়াতে।

এ অবস্থায় রক্তাক্ত জনপদ রাখাইনের হত্যাযজ্ঞ চলমান অবস্থায় আরও ভয়ানক পরিস্থিতির উদ্ভব হলো। রোহিঙ্গাশূন্য গ্রামগুলোতে মিয়ানমার বাহিনী লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে। পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা যাতে পুনরায় ফিরে আসতে না পারে সে লক্ষ্যেই এ অপতৎপরতা বলে সীমান্তের সূত্রগুলো জানিয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, নতুন করে আরও গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্বিচারে গুলি করে হত্যা অব্যাহত রয়েছে। ফলে অবশিষ্ট যেসব রোহিঙ্গা দুঃসাহসিকভাবে অবস্থান করছিল তারাও এখন ভিটামাটি ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে। সকলের গন্তব্য বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকারও মানবিক কারণে অঘোষিতভাবে সীমান্ত খোলা রেখেছে।

এদিকে, রাখাইন রাজ্যজুড়ে সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে অভিযান শুরুর পর এখন সীমান্ত এলাকাকে ‘আর্মি অপারেশন জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। সেনা পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯ সেপ্টেম্বর থেকে রাখাইন রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে মাইকিং। বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) জীপ ও চাইক্যা (রিক্সাজাতীয়) যোগে কিছু রোহিঙ্গা হাতে নিয়ে তাদের দিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় এই মাইকিং চালানো হচ্ছে। মাইকিংয়ে ঘোষণা করা হচ্ছে, ‘রোহিঙ্গারা এদেশ ছেড়ে চলে যাও, তোমরা বাঙালী, বাংলাদেশ তোমাদের দেশ’ এখন মিয়ানমারে ১৭৬টি গ্রাম জনমানবশূন্য। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে গনমাধ্যমকে জানায়, চলমান সেনা অভিযানে গ্রামগুলোর বাসিন্দারা পালিয়ে গেছে।

প্রেসিডেন্টের দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যের তিনটি শহরতলি এলাকায় সর্বমোট ৪৭১টি গ্রাম রয়েছে। এর মধ্যে ১৭৬টি গ্রাম এখন জনমানবশূন্য। অন্য ৩৪টি গ্রাম থেকেও কিছু কিছু রোহিঙ্গা পালিয়েছে। তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে।

তিনি আরও বলেন, পালিয়ে যাওয়া বাসিন্দারা মিয়ানমারে ফিরতে চাইলে অবশ্যই সবাইকে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে না। যাচাইবাছাই করতে হবে। এরপরই মিয়ানমার কেবল তাদের গ্রহণ করতে পারে।

এদিকে, ইউরোপ প্রবাসীদের সংগঠন আয়েবার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের পক্ষে কর্মসূচি নেওয়া হযেছে। এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হচ্ছে, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা। জেনেভাস্থ জাতিসংঘ সদর দপ্তর ও ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) সদর দফতরের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে।

এখনো রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন্ এলাকা মংডু, বুচিদং, রাচিদং থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুর অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এদের সঙ্গে গুলিবিদ্ধ, আহত, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গবিহীন রোহিঙ্গাও রয়েছে। কক্সবাজার অঞ্চলের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ছাড়াও চকরিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া অঞ্চলের হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতেও আহত রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা চলছে। এছাড়া টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় বিভিন্ন মেডিক্যাল টিম রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। পর্যাপ্ত ডাক্তার বা চিকিৎসা সহায়তা কর্মী না থাকায় অনেকেই চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে কাতরাচ্ছে। এছাড়া খাদ্য সঙ্কট, বাসস্থান সঙ্কট তো হয়েছেই। খোলা আকাশের নিচে রয়েছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। মোদ্দা কথায়, প্রশাসনের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা। একদিকে মানবিকতা, অপরদিকে দুর্ভোগ।

বাংলা ইনসাইডার/আরএ/জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭