ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বিশ্বজুড়ে সমাজতন্ত্র কেন ব্যর্থ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/09/2017


Thumbnail

সারাবিশ্বে বাম রাজনীতির পতন শুরু হয় মূলত ১৯৮৫ সালে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হন দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি মিখাইল গর্বাচেভ। তাঁর গ্লাসিনস্ত ও পেরেস্ত্রইকা নীতি পূর্ব ইউরোপ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে সমাজতান্ত্রিক নীতি থেকে বের করে নিয়ে আসে। বাম রাজনীতির জন্য এই নীতি ছিল অশনি সংকেত। গত শতাব্দীর নব্বই দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সারা বিশ্বে উদারতাবাদ ছড়িয়ে পড়ে। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হতে থাকে অধিকাংশ রাষ্ট্র। পুঁজিবাদের দিকে ঝুঁকতে থাকে সমাজতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করা দেশগুলো।

বিগত এক বছরে ইউরোপে দেখা যাচ্ছে বাম রাজনীতি তেমন কোনো সুবিধা করতে পারছে না। ফ্রান্সের নির্বাচনে প্রভাবশালী দুই রাজনৈতিক পক্ষ রক্ষণশীল ও বামদের হোচট খাওয়া এবং ব্রিটেনের আগাম নির্বাচনে কনজারভেটিভের ফের জয় প্রমাণ করে লোকরঞ্জনবাদের জয়জয়কার। যদিও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ কট্টর জাতীয়তাবাদী নন। তিনি মধ্যপন্থী। ডান বা বাম কোনও কিছুই তিনি বিশ্বাস করেন না।
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো যেমন, জার্মানি, সুইডেন ও পোল্যান্ডে বামেরা এখনও ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ধীরে ধীরে কমছে। একই চিত্র দেখা যায় ব্রিটেনের নির্বাচনে। বামপন্থী লেবাররা এবারও কনজারভেটিভের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও জয়ী হতে পারেনি।

বামপন্থী বলে খ্যাত ভেনেজুয়েলায় হুগো চাভেজের পর নিকোলা মাদুরোর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ছে। চীনে মাও সেতুংয়ের সমাজতান্ত্রিক দল ক্ষমতায় থাকলেও সে দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সে নীতিতে আর থাকেননি। চীন সমাজতন্ত্র থেকে সরে এসেছে। দেশটি এখন কিছুটা গণতান্ত্রিক নীতিতে চলছে। সমাজতন্ত্রের সফল প্রয়োগ হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে। সেখানেও এখন সমাজতন্ত্র বিলুপ্ত। এমনকি ভারতে বামপন্থী বলে খ্যাত কংগ্রেসও ক্ষমতায় বেশিদিন টিকতে পারেনি। নেপালেও এখন বামপন্থীরা ক্ষমতায় নেই। এশিয়ার অল্প কিছু দেশে বামপন্থী দল ক্ষমতায় রয়েছে। এর মধ্যে ভিয়েতনাম অন্যতম। ‍কিন্তু মার্কসবাদ বা সমাজতান্ত্রিক নীতির প্রয়োগ সেখানে দেখা যায় না।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক ভাবধারা বিশ্বে বামদেরকে প্রায় কোণঠাসা করে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, লোকরঞ্জনবাদ কখনই সমাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে দেয় না। বিশ্বে এখন এটিরই জয়জয়কার। সাধারণত জনগণের আবেগ-অনুভূতিকে কেন্দ্র করে এই রাজনৈতিক ধারা গড়ে উঠেছে।

অধিকাংশদের মতে বামদের এই ব্যর্থতার পেছনে দায়ী উদ্দীপনা বা ইনসেটিভের অভাব। শ্রমিক কর্মচারীদের কাজে কোনও ইনসেনটিভ না থাকায় উৎপাদনে তারা নিরুৎসাহ হয়। ফলে তারা কাজে কর্মে দায়িত্বহীন হয়ে পড়ে। মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সমস্ত ক্ষমতা ও সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে বলে গড়ে ওঠে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ বা স্টেট ক্যাপিটালিজম। আর এই কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সম্পদ ভোগ করে মুষ্টিমেয় কিছু পার্টিনেতা ও আমলা। তারাই তখন পরিণত হয় বুর্জোয়া শ্রেণিতে। এ-কথা অনেক মার্কসবাদী তাত্ত্বিক স্বীকারও করেছেন এই বলে যে, একদিকে শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ও অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক নেতৃত্বের মধ্যে বুর্জোয়াসুলভ মনোভাব, দুর্নীতি, বিলাসবহুল জীবনযাপনের প্রবণতা ও স্বজনপোষণের মতো বিভিন্ন অবাঞ্ছিত ঘটনা একের পর এক ঘটতে থাকে। একই চিত্র দেখা গেছে চীন, রাশিয়া ও কিউবার ক্ষেত্রে।

চিন্তা ও বাকস্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। সমাজতন্ত্রপন্থী দেশগুলোতে মানুষ স্বাধীনভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে না। সরকারের কোনো নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সুযোগ নেই। রাশিয়ায় যেমন পুতিনের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার নেই। ফলে জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলছে। সমাজতন্ত্রের বদলে দেশগুলোতে গড়ে উঠেছে স্বৈরাচারী সরকার। লিবিয়া, ইরাক, মিসরের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছিল। সঠিকভাবে সমাজতন্ত্রের প্রয়োগ কিউবা ছাড়া অন্য কোনো দেশে হয়নি। সেই কিউবা এখন পুঁজিবাদের দিকেই ঝুঁকছে।

অনেক অর্থনীতিবিদ এর অবাস্তব ও ত্রুটিপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে দায়ী করে। অনেকে মনে করেন, ক্ষমতার লোভে ক্ষমতাসীনরা মার্কসবাদের সফল প্রয়োগ কখনও করেননি। অনুসরণ করেননি এর পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক মডেলকে। নিজেদের লাভের কথা চিন্তা করে পুঁজিবাদকে আপন করে নিয়েছেন।
শ্রেণীহীন সমাজ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে মার্কসবাদ গড়ে উঠেছিল সেটি বরং রাষ্ট্র ও জনগণ নামে দুই শ্রেণী গড়ে তুলেছে। আত্মসমর্পন করেছে সেই পুঁজিবাদের কাছে যার বিরোধিতা করতে এই তত্ত্বের জন্ম।


বাংলা ইনসাইডার/আরএইচবি/জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭