ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/09/2017


Thumbnail

অমানবিক নির্যাতনের পর নাইরোবির ফুটপাথে আবদিকে প্রায় আধা চেতন অবস্থায় কাভার্ড ভ্যান থেকে ছুড়ে ফেলল তাঁরা। ছুড়ে ফেলার আগে তাঁকে বলা হলো, আজকে রাতে মরার কথা ছিল তোমার। তুমি ভাগ্যবান।

কেনিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা আবদিকে ধরে নিয়ে যায়। পরে জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে সন্ত্রাসবাদবিরোধী কৌশলের আওতায় আবদির মতো অনেককে ধরে নিয়ে মেরে ফেলে এই বাহিনীর কর্মকর্তারা।

শুধু কেনিয়ায় নয়, ৯/১১ হামলার পর সারাবিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে অনেক নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে আটক করেছে। তাদের অনেককে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়। মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস রোখার কথা বলে সবচেয়ে জঘন্যভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে।

বিভিন্ন দেশকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে তারা সন্দেহভাজন আসামিকে অত্যাচার করতে উৎসাহ দিচ্ছে। সন্ত্রাসী দলগুলোকে উচ্ছেদ করতে সবধরনের কঠোর ও অমানবিক পন্থা অনুসরণ করার নির্দেশ দিচ্ছে তারা। যেমন-নাইজেরিয়া সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র চার কোটি মার্কিন ডলার দিয়েছে উগ্রপন্থী দল বোকো হারমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে উৎসাহ দিচ্ছে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নিপীড়ন করতে। দক্ষিণ সুদানে সেনাবাহিনীতে কিশোররা থাকা সত্ত্বেও সেখানে অর্থায়ন করছে মার্কিনীরা।

আবদির মতো যারা এই নির্যাতনের পর ছাড়া পাচ্ছেন পরবর্তীতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না। শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আবদি জানান, তাঁকে আটকের দিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছিলেন। এসময় একজন সাইলেন্সার লাগানো বন্দুকের মুখে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়।

৯/১১ হামলার পর বুশ প্রশাসন বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ একটি গোপন অভিযান চালায়। বাগরাম, গুয়ানতানামো বে ও আবু গারিব কারাগারের মতো বিভিন্ন নির্যাতন কেন্দ্র সবার সামনে আসে। এ কারগারগুলোতে সিআইএ সন্দেহভাজনদেরকে ধরে এনে অমানুষিক অত্যাচার করত। যার মধ্যে ওয়াটারবোর্ডিং, ছোট্ট বাক্সে ভরে রাখা এবং নিপীড়ন অন্যতম ছিল। মার্কিন সিনেট এই নির্যাতন বন্ধ করে দিলেও পরে এর কোনো বিচার হয়নি। এমনকি বারাক ওবামা ক্ষমতায় এসে বিচারকাজ সামনে এগিয়ে নিতে চাইলেও পরে তা করেননি।

সম্প্রতি ইউরোপে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটিশ পুলিশও ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে ৩৭৯ জনকে তাঁরা গ্রেপ্তার করেছে সন্দেহভাজন হিসেবে। এদের অধিকাংশকেই পরে তারা ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা হেইট ক্রাইম বা ঘৃণাজনিত অপরাধের শিকার হচ্ছেন। মাথার ওপর তাদের অভিযোগের খড়গ ঝুলতে থাকে, যে অপরাধ তাঁরা কখনো করেনি।

বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সেও। সন্ত্রাসীকে আটকানোর কথা বলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য গুলি করে মারছে সন্দেহভাজনদের। অথচ বাংলাদেশে যতবারই জঙ্গি অভিযান ঘটেছে এবং বন্দুকযুদ্ধে আসামি হত্যার ঘটনা ঘটে তখন পশ্চিমারা সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয়। নিজেদের দেশের সন্ত্রাসী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে আটক এসব সংবাদ নিয়ে তাদের গণমাধ্যম নীরব।

সন্ত্রাসের নামে যুদ্ধ ঘোষণা করে পশ্চিমারাও যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে এ বিষয়ে দেখার কেউ নেই। অনেক দেশে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অপরাধে অর্থায়নের মাধ্যমে তাদেরকেও উৎসাহিত করছে এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করতে।


বাংলা ইনসাইডার/আরএইচবি/জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭