ইনসাইড হেলথ

করোনা থেকে সেরে উঠার পরও যা করা উচিৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/04/2021


Thumbnail

কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীরা আক্রান্ত হওয়ার বেশ কিছুদিন পর নেগেটিভ হলেও সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরো সময় লাগছে। করোনা নেগেটিভ হলেই যে একেবারে সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন এমন সংখ্যা খুব কম। সুস্থ হওয়া রোগীদের দেখা দিচ্ছে নানা শারীরিক উপসর্গ। কভিড-পরবর্তী শারীরিক নানা জটিলতা ও করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মার্কস মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. জুলহাস উদ্দিন। চলুন দেখে নেওয়া যাক করোনা থেকে সেরে উঠার পরও যে নিয়ম-কানুন গুলো মেনে চলবেন।

জ্বর
কিছু রোগী করোনা জয়ের পরও কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগতে পারেন, যদিও সেটি সাধারণত স্বল্পমাত্রার হয়ে থাকে। জ্বর পরিমাপ করলে হয়তো থার্মোমিটারে আসবে না; কিন্তু গায়ে জ্বর জ্বর অনুভব হতে পারে। এ ধরনের উপসর্গ থাকলে যা করতে হবে তা হলো : কয়েক দিন পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। শরীর ও মাথা ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ একটি করে দিনে তিনবার সেবন করতে পারেন। জ্বর না কমলে টাইফয়েড, ইউটিআই বা প্রস্রাবের প্রদাহ হয়েছে কি না পরীক্ষা করুন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। ব্যবহার করা জামাকাপড়, বিছানাপত্র ইত্যাদি নিয়মিত ধৌত করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।

কাশি
কভিডে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী দ্রুত এবং পূর্ণাঙ্গ সেরে উঠেছেন মনে করলেও কিছু ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন তাদের কাশির উপসর্গ থেকে যেতে পারে। এসব রোগীর ক্ষেত্রে করণীয় হলো : যাদের আগে থেকেই কাশির সমস্যা ছিল, অ্যালার্জি ও অ্যাজমার ইতিহাস আছে, তাদের তেমন টেনশন করার দরকার নেই। এমন রোগীরা আগের ওষুধগুলো চালিয়ে যান। পালস অক্সিমিটার দিয়ে রক্তের অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপুন। স্যাচুরেশন ৯০ থেকে ৯২-এর নিচে নেমে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে বেশি টেনশনের কারণ নেই। কেননা দ্বিতীয়বার অ্যাক্টিভ কভিভ ইনফেকশনের ঝুঁকি খুবই কম।

ক্লান্তি, অবসন্নতা
এমন কিছু রোগী আছেন, যাঁদের গুরুতর ক্লান্তি এবং অবসন্নতা দেখা দিতে পারে। এসব উপসর্গ তিন থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এক্ষেত্রে কিছু করণীয় হলো : প্রচুর পানি এবং সুষম খাবার গ্রহণ করুন। আস্তে আস্তে হালকা ব্যায়াম করুন। মানসিক শক্তিকে সব সময় চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করুন। চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স, জিংক, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন `ডি`, মাল্টিভিটামিন নিয়মিত কয়েক সপ্তাহ সেবন করুন। দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি ও অবসন্নতার সঙ্গে যদি কাশিও থাকে, সে ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুইবার পরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন যে করোনামুক্ত হয়েছেন কি না।

গা ব্যথা, মাথা ব্যথা ও বেশি ঘাম হওয়া
যেহেতু কভিড-১৯ রোগটি অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির মতো একটি রোগ, সেহেতু সংক্রমিত হওয়ার পর রোগীরা ভালো হয়ে গেলেও শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, বেশি বেশি ঘাম হওয়া ইত্যাদির সমস্যা থেকে যেতে পারে। এ জন্য কিছু করণীয় হলো : বেশি ঘাম মানেই শরীর থেকে লবণ বের হয়ে যাওয়া অর্থাৎ সোডিয়াম কমে যাওয়া। সে ক্ষেত্রে ওরস্যালাইন, ডাবের পানি এবং ফলমূল বেশি করে খেতে হবে। তবে উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা লবণ হিসাব করে খাবেন এবং ওষুধ সেবনের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখবেন। মনোবল হারাবেন না, ধৈর্য ধরুন। দেখবেন আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

চাছাড়া করোনা-উত্তর রোগীদের নিজেদের কো-মরবিডিটি অর্থাৎ কিছু ক্রনিক রোগ সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। যেমন—

ডায়াবেটিস : এটি এমন একটি রোগ, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সরাসরি বিপরীতমুখী কাজ করে। সুতরাং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ ডায়েট, নিয়মিত হাঁটা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি চিকিৎসকের ফলোআপে থাকা খুব জরুরি।

কিডনি রোগ : কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। কারণ এর সঙ্গে রক্তচাপ, ভিটামিন `ডি`, ক্যালসিয়াম, হিমোগ্লোবিনসহ অতীব স্পর্শকাতর ব্যাপারগুলো জড়িত। ডায়ালিসিস এবং ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের আরো সচেতন থাকতে হবে।

হৃদরোগ : হৃদরোগীরা, বিশেষ করে বাইপাস সার্জারি করা রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হলে পুরো কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের সমস্যা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে রক্তচাপ বেড়ে বা কমে গিয়ে শকেও চলে যেতে পারে। এসব রোগীকে জরুরিভাবে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বা কার্ডিয়াক সার্জনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা উচিত।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭