সোশ্যাল থট

`সীমিত পরিসরে কেউ গর্ভবতী হন না, সত্য গোপনকারীও হতে পারেন না`

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/04/2021


Thumbnail

গত ৩ এপ্রিল এক নারীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে অবকাশ যাপনের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন হেফাজতে ইসলাম নেতা মামুনুল হক। তিনি দাবি করেন, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তবে এরপর ফাঁস হয়ে যায় আসল ঘটনা। ফাঁস হয় মামুনুলের বিয়ে করা প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ। ওই ফোনালাপে নারীর সঙ্গে হোটেলে ধরা পড়ার ঘটনা সম্পর্কে স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন মামুনুল। জবাবে তার স্ত্রী বলেন. `বাসায় আসেন, তারপর কথা হবে`।

কয়েকদিন ধরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে বিষয়টির জন্য ক্ষমা চান মামুনুল হক। আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, `স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে, স্ত্রীকে খুশি করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে কোনো সত্যকে গোপন করা যায়।`

তবে তাঁর এই `সীমিত পরিসরে সত্য গোপন` করার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে রাতেই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের `যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা` বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আর রাজী। পাঠকদের জন্য তার সেই স্ট্যাটাসটি তুলে দেওয়া হল__

"সীমিত পরিসরে কেউ গর্ভবতী হন না, সীমিত পরিসরে কেউ সত্য গোপনকারীও হতে পারেন না"

আজ মামুনুল হকের সাহেবের "সীমিত পরিসরে সত্য গোপন করার" পক্ষে যুক্তি শুনলাম। উনার যে কোনটা সত্য, আর কোনটা "সীমিত পরিসরে গোপন করা সত্য" সে বিচার নিশ্চয়ই দেশের মানুষ করবেন। কিন্তু সাধারাণ বিবেচনায়, চলতি ঘটনায় মামুনুল হকের কয়েকটি স্পষ্ট অপরাধ জনমনাসে ক্ষমার অযোগ্য হয়ে রইবে।

মামুনুল হক সাহেবের নিরঙ্কুশ অপরাধ কোথায়? 

প্রথমত: হক সাহেব রিসোর্টের কার্ড রেজিস্টারে তার সঙ্গীয় নারীর যে নাম লিখেছেন তা তার সঙ্গীর প্রকৃত নাম ছিল না। এই `গোপনীয়তা` চর্চা যে কোনো বিবেচনায় অপরাধ।

দ্বিতীয়ত:  তিনি তার নারী সঙ্গীর যে নাম ব্যবহার করেছেন তা তার প্রতিষ্ঠিত স্ত্রীর নাম। নিজের প্রতিষ্ঠিত স্ত্রীর নাম ভাড়িয়ে অন্য একজন নারীকে উনি সঙ্গে নিয়ে হোটেলে উঠেছেন। এই আচরণ এক দিকে মানসিক বিকৃতির পরিচায়ক, অন্য দিকে ভয়ানক অপরাধপ্রবণতার প্রমাণ। উনি নাম ভাড়িয়ে, বোরকা বা আবেয়া আবৃত ভিন্ন এক নারীকে হোটেল ঢুকিয়ে ভয়ানক নাশকতা করার পথ বাতলে দিয়েছেন।

তৃতীয়ত: হক সাহেব তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্ত্রী, যিনি কোনোভাবেই এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট নন, তাঁকে ভয়ানক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন। তার রিসোর্টসঙ্গীর সম্ভাব্য সব রকম ভুলভ্রান্তি-অপরাধ-অপকর্ম হক সাহেব তার প্রতিষ্ঠিত স্ত্রীর নামে চালিয়ে দেওয়ার বা চালিয়ে নেওয়ার পথ তৈরি করে প্রতিষ্ঠিত স্ত্রীর সাথে বিপদজনক বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

চতুর্থত: আরো ভয়ানক হচ্ছে, উনি যে সীমিত পরিসরে মিথ্যাচার করেছেন, সেই মিথ্যাচারের কথা স্পষ্ট ও সরল ভাষায় স্বীকার না করে ঘটনার পর পরই এমন এক লাইভ অনুষ্ঠান করেছিলেন যেখানে তার অত্যন্ত মর্যাদাবান খানদানের মুরুব্বিদের সামিল করেছেন এবং তার পরিবারের মুরুব্বিদের বিরাট অংশ সজ্ঞানে তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে মামুনুল হকের "সীমিত পরিসরের সত্য গোপনকে" বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এটি যে কোনো বিবেচনায় একটি পরিবারের সংঘবদ্ধভাবে অপকর্মের সামার্থক। হক সাহেব এবং সেদিন লাইভ অনুষ্ঠানে উনার সাথে উপস্থিত উনার খানদানের অনেকেই তাদের ভক্ত, অনুগত ও অনুরাগীদের প্রতারিত করেছেন।

রিসোর্টে মামুনুল হকের সাথে যা ঘটেছে তা ঘোরতর অন্যায়। কোনো সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্রে এমন ঘটনা কল্পনা করা যায় না। একইভাবে, নিজের প্রতিষ্ঠিত স্ত্রীর নামে ভিন্ন এক নারীর পরিচয় তৈরি করা এবং সেই পরিচয় ব্যবহার করা কোনোভাবেই সভ্য মানুষ সমর্থন করতে পারে না।"



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭