ইনসাইড থট

আবার কি শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/04/2021


Thumbnail

বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর থেকেই তার পরিবারের বেঁচে যাওয়া দুই সদস্য দেশ-বিদেশি হায়েনাদের টার্গেটে পরিণত হয়। একই সাথে হায়েনাদের কর্মসূচি হয় যেন কোনভাবেই বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে না পারে। তাই যেমন ইন্ডেমিনিটি আইন আনে, তার পরেও রাষ্ট্র ও স্বাধীনতা বিরোধীদের লাইম লাইটে আনা হয়। তাঁদের দুই ভাবেই ক্ষমতাবান করা হয় –এক রাজনৈতিকভাবে দুই অবৈধ টাকার মালিক বানিয়ে। কারণ আমাদের উপমহাদেশে টাকা দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেনা যায় আবার রাজনৈতিক ক্ষমতা দিয়ে ইচ্ছা থাকলে অবৈধ টাকার পাহাড় বানানো যায়।      

১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মধ্য থেকে দুর্বল দেশপ্রেমিক স্বাধীনতার পক্ষ শক্তিকে আর বেঈমানদের আলাদা করে ফেলা হয় নানা কায়দায়। নষ্ট আওয়ামী লীগারদেরকে সাথে নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীরা আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনাকে প্রতিহত করার কাজে লাগানো হয়। ফিদেল কাস্ত্রো এর মত করে শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। কিছু প্রকাশ পায়, কিছু প্রকাশ পায় না। সে হিসেব পরে দিচ্ছি। তার আগে উল্লেখ করা উচিৎ যে কীভাবে শেখ হাসিনা বা তার দল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে দেশকে এগিয়ে গেছে আজকের পর্যায়ে।   

১৯৬৬ সালের ছয়দফার সময়, ১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলার সময়, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বা ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে, ১৯৯৬ তে বিএনপি’র এক তরফা নির্বাচনের পর মাত্র তিন মাসে বিএনপি সরকারের পতনে, ২০০১-০৫ সাল জুড়ে ১৮ হাজার ছাত্রলীগ নেতাকর্মী নিজেদের রক্ত ঢেলে, এক এগারোতে পুলিশ তো সাথে ছিলোই না আর্মির সাথে সংগ্রাম করে ছাত্রলীগ জিতেছে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখেছে।   

কিন্তু ২০২১ সালে এসে হেফাজত ছাত্রলীগকে পুলিশ ছাড়া খেলতে বলে। অবশ্য তার কাল্পনিক বা যৌক্তিক কারণ তাদের কাছে থাকতেই পারে। অনেকেই বলেন যে, বিগত এক দশকে বহু স্বাধীনতা বিরোধীর আওলাদরা হয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ। তাই তাদের অনেকের কাছেই হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে দেখে আমাদের মাথা লজ্জায় হেট হয়ে যায়। কারণ এক এগারোর পরে মইন ইউ আহমেদ অতিষ্ঠ হয়ে বলেছিলেন," ছাত্রলীগ যতদিন আছে, শেখ হাসিনার কিছুই করা যাবেনা।" স্বৈরাচারী আইয়ুব খান, এরশাদ, তারেক, খালেদাকে ছাত্রলীগ সোজা করে তবেই বাংলাদেশকে এই জায়গায় এনেছে। যদিও এক পর্যায়ে তাঁদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেয় আওয়ামী লীগ , যুবলীগ, যুব মহিলালীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ সহ আওয়ামী লীগের নানা সহযোগী সংগঠন। কিন্তু এর মাঝেও মূল যোদ্ধা ছিল ছাত্রলীগ ও যুব লীগ।      

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ সারাদেশে ছায়ার মত থেকে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। কারণ ১৯৮১ সালের ১৭ই মে বৃহস্পতিবার দীর্ঘ নির্বাসন থেকে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিজ দলের অনেকেই ভালোভাবে নেননি, তা বলতে আজ আর লজ্জা বা সংকোচ নেই।  নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বড় মাঝারী ছোট নেতা মিলিয়ে মাত্র ৬ জন অকুতোভয় বঙ্গবন্ধুর সৈনিকের উপর ভরসা করে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে ভূমি কন্যা তাঁর নিজদেশে ফেরেন। এ সময় তাঁকে একাধিকার স্লো পয়জনিং, ফুড পয়জনিং করে হত্যার ষড়যন্ত্র হয় যা অপ্রকাশিতই রয়ে গেছে। এর পরেও প্রকাশ্যে তাঁকে অন্তত ১৯ বার হত্যা চেষ্টার কথা সবাই জানেন। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি।      

শেখ হাসিনাকে যতবার হত্যা-চেষ্টা করা হয়েছিল এসব অনেক ঘটনায় মামলাও হয়নি। এমনকি হামলার পর উল্টো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার নজিরও আছে। এসব হত্যা চেষ্টার কিছু কিছু ঘটনায় মামলা হয়েছিল, তার প্রতিটারই বিচারে সময় লেগেছে এক যুগের বেশি। কোনো কোনোটির ২০ থেকে ২৫ বছর। আবার বিচারিক আদালতে রায় এলেও উচ্চ আদালতে একটিরও মীমাংসা হয়নি এখনো।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার এটা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরতে গেলে দেখা যায়: ১৯৮৮ সালে লালদীঘি ময়দানে, ১৯৮৯ সালে ধানমন্ডিতে, ১৯৯৪ সালে পাবনা ঈশ্বরদীতে, ২০০১ সালে গোপালগঞ্জে, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দুটি, ১৯৯১ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে চারটি, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চারটি, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে চারটি, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান আমলে চারটি হত্যা চেষ্টার কথা প্রকাশ হবার কথা জানা যায়।   

শেখ হাসিনার কয়েকটি হত্যা চেষ্টার মধ্যে-২০১১ সালে শ্রীলংকার একটি সন্ত্রাসবাদী দলের সাথে বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চুক্তি করে। এজন্য অগ্রিম টাকাও দেয়া হয়। শ্রীলংকার সেই সন্ত্রাসবাদী দলের আততায়ীদের টিম গাড়ি করে কলকাতা বিমানবন্দরে যাবার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে ভেস্তে যায় শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনাটি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলায় মৃত্যু-দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শরিফুল হক ডালিম এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ জন অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য সামরিক অভ্যুত্থানের চক্রান্ত করে, যা উইকিলিকসের সৌদি আরবের এক গোপন বার্তায় প্রকাশ পায়। হংকংয়ে বসবাসরত এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ইসরাক আহমেদ এ পরিকল্পনায় অর্থায়ন করেন বলে গোপন বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৪ সালের শেষদিকে প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গিদের মাধ্যমে মানব-বোমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৫০ জন নারী ও ১৫০ জন যুবককে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। এদের নেতৃত্বে ছিল ১৩ জঙ্গি দম্পতি। তবে প্রশিক্ষণরত অবস্থায়ই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে ওই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়।

২০১৫ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে কারওয়ানবাজার এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা। কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণও ঘটায় তারা। এমন অনেক ঘটনা আছে।

৯০ বছরের জীবনে ফিদেল কাস্ত্রোকে ৬৩৮ বার হত্যার চেষ্টা হয়। কাস্ত্রোকে হত্যার চেষ্টা বেশির ভাগই হয় ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যে। তাঁকে কিউবার সিংহাসন থেকে নামাতে নেওয়া হয় ‘অপারেশন মঙ্গুজ’ পরিকল্পনা। কিন্তু ফিদেল কাস্ত্রোর প্রতি সে দেশের মানুষের ভালবাসায় তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো।    

মামুনুল হকের লাইভে এসে গতকাল দেওয়া বক্তব্যে অশুভ উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন। এই অশুভ উদ্দেশ্য কার? তা কি হেফাজতের ব্যভিচারী তথাকথিত নামধারী আলেমদের? বক্তব্যর মাঝে তিনি সরকার ও প্রশাসনকে নানাভাবে হুমকি দিয়েছেন, আগুণ নিয়ে না খেলার কথা বলেছেন। সরকার বা রাষ্ট্রকে হুমকি দিচ্ছে কীভাবে। তাহলে কি দেশে-বিদেশে বসে উপরে বর্ণিত আগেকার সেই সব শক্ত তাদেরকে মদদ দিচ্ছে সরকার পতন তথা শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনায়! তা না হলে এমন কথা বলার সাহস তারা কীভাবে পায়। এসময় সময় ছাত্রলীগ, যুবলীগের কী কিছুই করা নেই। তাঁরা কী ১৯৭৫ পরবর্তী সেই ছাত্রলীগ বা যুবলীগ নেই। ভাবতে অবাক লাগছে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭