টেক ইনসাইড

জোয়ার ও ভাটার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/04/2021


Thumbnail

চন্দ্র ও সূর্য ভূ-পৃষ্ঠের জল ও স্থলকে অবিরাম আকর্ষণ করছে। এ আকর্ষণের প্রভাবে ভূ-পৃষ্ঠের পানি প্রত্যহ নিয়মিতভাবে স্থান বিশেষে ফুলে ওঠে এবং অন্যত্র নেমে যায়। পানির এ ফুলে ওঠা বা স্ফীতিকে জোয়ার এবং নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। চন্দ্র পৃথিবীর নিকটতম উপগ্রহ। এজন্য পৃথিবীর ওপর এর আকর্ষণ সর্বাধিক। স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগ সহজে আকৃষ্ট হয় বলে চন্দ্রের আকর্ষণের ফলে পানি স্ফীত হয়ে ওঠে ও জোয়ারের সৃষ্টি হয়। জোয়ার ভাটা সংঘটিত হওয়ার ফলে ভূ-পৃষ্ঠের নানারকম প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটে, যা আমরা খোলা চোখে ধরতে পারি না।    

চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ শক্তি এবং পৃথিবীর কেন্দ্রাতিক শক্তি প্রভৃতির প্রভাবে সমুদ্রের পানি নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফুলে উঠে আবার নেমে যায়। সমুদ্রের পানি এভাবে ফুলে উঠাকে বলা হয় জোয়ার এবং নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। প্রতি ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট পরপর এই জোয়ার ভাটা সংঘটিত হয়। অর্থাৎ সমুদ্রে একই জায়গায় প্রতিদিন দু’বার জোয়ার ও দু’বার ভাটা হয়। সমুদ্রের মোহনা থেকে নদীগুলোর স্রোতের বিপরীতে উজানে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত জোয়ার ভাটা বেশি অনুভূত হয়। সমুদ্রের মধ্যভাগ থেকে উপকূলের কাছে পানির অগভীর অংশে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেশি থাকে। তবে বিভিন্ন নদীপথে দেশের ভিতরে সমুদ্রের পানি যখন প্রবেশ করে এবং নেমে যায় তাকে জোয়ার ভাটা বলে না। 

জোয়ার ভাটার কারণ : জোয়ার ভাঁটা সম্পর্কে প্রাচীনকালে মানুষ নানা রকম অবাস্তব কল্পনা করত। কিন্তু বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে চন্দ্র ও সূর্যের প্রভাবেই এবং পৃথিবীর আবর্তনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে জোয়ার ভাটা হয়। জোয়ার ভাটা সংঘটনের কারণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা. (১) মহাকর্ষণ শক্তির প্রভাব এবং (২) কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাব।  

মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব: পৃথিবীর সকল পদার্থ একটি অপরটিকে আকর্ষণ করছে। এ আকর্ষণকে মহাকর্ষ বলে। মহাকর্ষের প্রভাবে পৃথিবী সর্বদা সূর্যের চারদিকে এবং চন্দ্র সর্বদা পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। আর এই কারণেই পৃথিবীর জলরাশি কখনো বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। মহাকাশে অবস্থিত সব নক্ষত্র, গ্রহ ও উপগ্রহের এ আকর্ষণের পরিমাণ সমান না। বড় পদার্থের আকর্ষণ ক্ষমতা ছোট পদার্থ অপেক্ষা বেশি। চন্দ্র অপেক্ষা সূর্য ২ কোটি ৬০ লক্ষ গুণ বড় এবং পৃথিবী অপেক্ষা সূর্য প্রায় ১৩ লক্ষ গুণ বড় হলেও পৃথিবী থেকে সূর্য গড়ে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং পৃথিবী থেকে চন্দ্র গড়ে প্রায় ৩৮.৪ লক্ষ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ কারণেই পৃথিবীর ওপর চন্দ্রের আকর্ষণ ক্ষমতা সূর্য অপেক্ষা বেশি। ফলে জোয়ার ভাটায় চন্দ্রের প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। জোয়ার-ভাটার ক্ষেত্রে চন্দ্র ও সূর্য উভয়ই পৃথিবীর ওপর নিজ নিজ শক্তি প্রয়োগ করলেও চন্দ্রের শক্তির অধিকতর প্রয়োগ হয়। চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ শক্তি স্থলভাগের কেন্দ্রস্থলেও ভূ-পৃষ্টের জলরাশির ওপর বেশি কার্যকর হয়। মূলত স্থলভাগের ওপরে চন্দ্র সূর্যের আকর্ষণ শক্তি প্রায় নেই বললেই চলে। আর এ কারণেই পৃথিবীর কেন্দ্র ও পানির উপরিভাগের উপর চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণের পার্থক্য দেখা যায় এবং তার ফলাফল হিসেবে জোয়ার ভাটা সংঘটিত হয়।

কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাব: মহাকর্ষ শক্তির মত ঘূর্ণনশীল পৃথিবী পৃষ্ঠে যে কেন্দ্রাতিগ শক্তি উৎপন্ন হয় সেটিও জোয়ার ভাটা উৎপত্তির কারণ। কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে গৌণ জোয়ার সৃষ্টি হয়। পৃথিবী যখন তার অক্ষের উপর ঘুরতে থাকে তখন একটি বিপরীত শক্তি এর পৃষ্ঠ থেকে বিপরীত দিকে নিয়ে যেতে চায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বৃষ্টির পানিতে পূর্ণ কোনো রাস্তা দিয়ে কোনো যানবাহন যদি খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়, তখন চাকার প্রভাবে ঐ পানি দূরে ছিটকে পরে। অনুরূপভাবে পৃথিবী শুধু নিজ অক্ষেই ঘুরছে না। সেই সাথে অভিকর্ষ শক্তির প্রভাবে পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু নিজ অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে। আবার আরেকটি শক্তি কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে যা সবকিছু বাইরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই শক্তিকেই বলা হয় কেন্দ্রাতিগ শক্তি বা বিকর্ষণ শক্তি। এই কেন্দ্রাতিগ শক্তির কারণেই ভূ-পৃষ্ঠের জলরাশি বাইরের দিকে প্রবাহিত হয় এবং জোয়ার ভাঁটার সৃষ্টি হয়।জোয়ার ভাঁটা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কেন্দ্রাতিগ শক্তি একটি প্রধান শক্তি পৃথিবী নিজ কক্ষ পথে ঘূর্ণনের সময় নিম্নোক্ত সূত্রানুযায়ী কেন্দ্রাতিগ শক্তি কাজ করে।

জোয়ার ভাটাকে মূলত দুইটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যথা. (ক) চন্দ্রের অবস্থান ভিত্তিতে এবং (খ) পানির উচ্চতা ভিত্তিতে।

চন্দ্রের অবস্থানের ভিত্তিতে জোয়ার ভাঁটাকে মূলত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা ১. মুখ্য জোয়ার এবং ২. গৌণ জোয়ার।

১. মুখ্য জোয়ার: চন্দ্র সর্বদা পৃথিবীর চারদিকে আবর্তনশীল। চন্দ্রের এ আবর্তনকালে যে অংশ পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটে অবস্থান করে সেখানে চন্দ্রের আকর্ষণ সর্বাপেক্ষা বেশি থাকে। সাধারণত কঠিন স্থলভাগের চেয়ে জলভাগের উপর এই প্রভাব বেশি থাকায় পৃথিবীর জলরাশি মূলত কেন্দ্রস্থলের দিকে প্রবাহিত হয়। একই সময়ে এবং একই সঙ্গে পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ শক্তি কার্যকর হয় বলেই সে সময় জোয়ার সৃষ্টি হয়। এরূপ জোয়ারকে বলা হয় মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার ।

২. গৌণ জোয়ার: চন্দ্র পৃথিবীর যে পাশে আকর্ষণ করে তার বিপরীত দিকে অর্থাৎ প্রতিপাদ স্থানে পৃথিবীর আকর্ষণ শক্তি তুলনামূলক কম। পানির নিচের কঠিন স্থলভাগে চন্দ্রের আকর্ষণ কেন্দ্রস্থলের আকর্ষণের সমান। এ কারণেই বিপরীত দিকের জলরাশি থেকেও স্থলভাগ চন্দ্রের দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়। এ সময় চন্দ্রের বিপরীত দিকে কেন্দ্রাতিগ শক্তির সৃষ্টি হয়। মূলত চন্দ্রের বিপরীত দিকের জলরাশির ওপর মহাকর্ষণ শক্তির প্রভাব তখন কমে যায়। এর ফলে চারদিক থেকে পানি ঐ স্থানে এসে জোয়ারের সৃষ্টি করে। চন্দ্রের বিপরীতে সৃষ্ট এই জোয়ারকে বলা হয় গৌণ বা পরোক্ষ জোয়ার।

চন্দ্রের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে মুখ্য ও গৌণ জোয়ার হয়। অন্যদিকে পানির উচ্চতার উপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয় মরা কটাল এবং ভরা কটাল। মুখ্য জোয়ারকে বলা হয় প্রত্যক্ষ জোয়ার এবং চন্দ্রের বিপরীতে সৃষ্ট জোয়ারকে বলা হয় গৌণ জোয়ার। পূণির্মা ও অমাবস্যায় চন্দ্রের আকর্ষণের ভরা কটাল সংঘটিত হয়। আবার সপ্তমী ও অষ্টমী তিথিতে মরা কটাল সংঘটিত হয়।

পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে বিভিন্ন অংশে প্রতিদিন দু’বার করে জোয়ার ও দু’বার করে ভাটা হয়ে থাকে।

পশ্চিম থেকে পূর্বে পৃথিবী ২৪ ঘণ্টায় একবার নিজ অক্ষের ওপর ঘোরে। চন্দ্রও নিজ কক্ষপথে অবস্থান করে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘোরে এবং পৃথিবীর চারদিকে পরিক্রমণ করে। চন্দ্র যদি স্থির থাকত তবে পৃথিবীর প্রত্যেক স্থান ২৪ ঘণ্টা অন্তর একবার চাঁদের সামনে আসত এবং ঐ স্থানে মুখ্য জোয়ার হত। চন্দ্র যেহেতু নিজ কক্ষপথে সাড়ে ঊনত্রিশ দিনে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে, সেহেতু এটি একদিনে তার কক্ষের সাড়ে উনত্রিশ ভাগের একভাগ অগ্রসর হয়। কাজেই পৃথিবীর একবার আবর্তন সময়ে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় চন্দ্র নিজ কক্ষের প্রায় ১ ডিগ্রী পথ অগ্রসর হয়। সম্পূর্ণ একবার ঘুরে আসার পর ভূ-পৃষ্ঠের কোণ মধ্যরেখায় পুনরায় চাঁদের ঠিক নিচে আসতে ঐ ১৩ ডিগ্রী পথ বেশি অগ্রসর হতে হয়। এই ১৩ ডিগ্রী পথ অগ্রসর হতে পৃথিবীর আরো ১৩ গুণ ৪=৫২ মিনিট সময় লাগে। তাই আজ যে জায়গায় মুখ্য জোয়ার হলো, আগামীকাল সেই জায়গায় মুখ্য জোয়ার ঠিক ২৪ ঘণ্টা পর না এসে ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট অর্থাৎ প্রায় ২৫ ঘণ্টা পরে আসে।এক মুখ্য জোয়ার চলে যাবার ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট অর্থাৎ প্রায় সাড়ে বার ঘণ্টা পরে সেই জায়গায় গৌণ জোয়ার এবং ঐ স্থানের প্রত্যেক জোয়ারের প্রায় ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট অর্থাৎ প্রায় সোয়া ছয় ঘণ্টা পরে  ভাটা হয়।

উন্মুক্ত সমুদ্রে জোয়ারের পানি খুব বেশি ফুলে ওঠে না। জোয়ার ও ভাঁটার মধ্যে মাত্র কয়েক মিটারের ব্যবধান দেখতে পাওয়া যায়। উপকূলের কাছে এ অবস্থার পরিবর্তন দেখা যায়। বড় বড় সাগর, মহাসাগরে জোয়ারের পানি ১-২ মিটারের বেশি উঁচু হয় না। কিন্তু স্থানভেদে উপকূলের কাছে নদীর খাড়ি, মোহনা, পোতাশ্রয় এবং সাগরের মহীসোপানে জোয়ারের স্রোত ৩ থেকে ৪ এবং ৯ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। উন্মুক্ত উপসাগরে ভাঁটার সময় পানির গভীরতা অপেক্ষা জোয়ারের সময়ের গভীরতা ২১ মিটারের

বেশি হয়। ভূ-মধ্যসাগর, লোহিত সাগর, কৃষ্ণ সাগর ও বাল্টিক সাগর প্রায় চারদিক স্থল বেষ্টিত থাকায় সেসব জলাশয়ে মহাসাগরের জোয়ার ভাঁটার প্রভাব খুব কম দেখা যায়।

চন্দ্র পৃথিবীকে ক্রমাগত পরিক্রমণ করছে বলে জোয়ার ও ভাঁটার সময়ের পার্থক্য তৈরি হয়। প্রত্যেক মুখ্য জোয়ারের ১২ ঘণ্টা ২৩ মিনিট পর ঐ স্থানে গৌণ জোয়ার হয়। একইভাবে প্রত্যেক জোয়ারের ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট পর ঐ স্থানে ভাটা হয়।

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। আর দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর। ফলে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ার ভাটা আশীর্বাদ বয়ে নিয়ে আসে। যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যা দ্বারা মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকে।

এর সুফল হচ্ছে-

১. ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা: জোয়ার ভাটার ফলে সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলে বিশেষ সুবিধা হয়। জোয়ারের সময় নদীর মোহনায় ও তার অভ্যন্তরে পানি বেশি উঁচু হয়। ফলে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজগুলো আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে সহজেই নদীতে প্রবেশ করতে পারে এবং ভাটার টানে এসব জাহাজ রপ্তানিকৃত পণ্য নিয়ে সহজেই সমুদ্রে চলে যেতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে চট্টগ্রাম ও মংলা নামক দুটি সমুদ্র বন্দর গড়ে উঠেছে। এ বন্দর দুটি গড়ে উঠায় ঐসব এলাকায় বহু শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ সুগম করেছে।

২. নদীর পানি নির্মল থাকা: জোয়ার ভাঁটার ফলে নদীর পানি নির্মল থাকে। দৈনিক দু’বার করে জোয়ার ভাটা হওয়ার ফলে নদীতে সঞ্চিত সব আবর্জনা ধুয়ে মুছে যায়। ফলে পরিবেশ থাকে পরিচ্ছন্ন।

৩. নদী মুখ নৌ চলাচলযোগ্য থাকা: জোয়ার ভাঁটার জন্য পলিমাটি পড়ে নদীর মুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে না। ফলে নৌ চলাচলযোগ্য থাকে। ইংল্যান্ডের টেমস নদীতে জোয়ার ভাটার ফলে পলি জমতে পারে না বলে সর্বদা নাব্য থাকে।

৪. লবণ উৎপাদন কেন্দ্র: জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভর করে সমুদ্র উপকূলে লবণ তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানি লবণ উৎপাদন কেন্দ্রের অগভীর চওড়া জলাশয়ে প্রবেশ করে। পরে ঐ আবদ্ধ পানি-রাশিকে শুকিয়ে লবণ তৈরি করা হয়।

৫. সেচ কাজে সুবিধা: উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক নদীর পাশে খাল খনন করে পানি আটকিয়ে জমিতে সেচ দেয়া হয়। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতির সম্ভাবনা তৈরি হয়।

৬. মৎস্য বন্দর ও মৎস্য ব্যবসা কেন্দ্র: জোয়ার ভাটার প্রভাবে সমুদ্রের মৎস্য বন্দর ও মৎস্য ব্যবসায় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে প্রায় ৭১৬ কিলোমিটার উপকূল রেখা রয়েছে। এসব উপকূল রেখার বিভিন্ন অংশ দিয়ে বহু নদী, অসংখ্য শাখানদীসহ বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। তাই উপকূল রেখার সর্বত্রই অসংখ্য ছোট-বড় নদীর মোহনা ও খাঁড়ি বিদ্যমান। এসব মোহনা ও খাঁড়িতে মৎস্য খাদ্যের প্রাচুর্যতা থাকায় অসংখ্য মৎস্য সে ভিড় জমায় এবং প্রচুর মৎস্য ধরা পড়ে। এ অঞ্চলের ধৃত মৎস্যের মধ্যে ভেটকি, কোরাল, চান্দা, রূপচান্দা, চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, পোয়া, স্যামন এবং ছূরিমাছ প্রভৃতি প্রধান। এ সকল মৎস্য দেশ-বিদেশের বাজারে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা হয়।

৭. কর্মসংস্থান: উপকূলীয় জোয়ার ভাটার প্রভাবে মৎস্য ক্ষেত্রে বহু লোক কাজে নিয়োজিত থাকে যা তা দেশের বেকারত্ব হ্রাসে সহায়তা করে।

এর কুফল হলো-

১. কৃষি জমি উর্বরতা হ্রাস: উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষি জমিতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করলে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়। এর ফলে উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়।

২. জানমালের ক্ষতি: তীব্র জোয়ারের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে জানমালের ক্ষতি হতে পারে।

৩. নৌযান ডুবি: তীব্র জোয়ারের ফলে ক্ষুদ্র নৌযান ডুবে যেতে পারে।

সুতরাং বলা যায় যে, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জোয়ার ভাঁটার প্রভাব দেশের কৃষিক্ষেত্র, ব্যবসায়-বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যদিও এর সামান্য কিছু কুফল রয়েছে।

সূত্রঃ ইন্টারনেট, অন্যান্য



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭