ইনসাইড থট

মামুনুল, নুরু ও তাঁদের নাগরিক অধিকার!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/04/2021


Thumbnail

বাংলাদেশের মুষ্টিমেয় কয়েকজন সুনাগরিক (!) তাঁদের নাগরিক অধিকার নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব সোচ্চার। তারা নানাভাবে বলার চেষ্টা করছেন, সরকার তাঁদের নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন করছে। তাঁদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা প্রকাশ করছে প্রশাসনের বিভিন্ন অংশ।    

নাগরিকগণ রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার ভোগ করতে গিয়ে কিছু কাজে দায়বদ্ধ হয়ে যায়। নাগরিক কর্তৃক পালনীয় রাষ্ট্রের প্রতি এসব দায়িত্বকে কর্তব্য বলা হয়। কর্তব্য পালনের মাধ্যমে নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে থাকে। বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকারের পূর্ণ নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। একই সাথে রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কর্তব্যের দিক-নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে যে, ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সকলেই সমান অধিকারের অধিকারী হবেন। এ ক্ষেত্রে ধর্ম-বর্ণ বা অন্যকোনো প্রতিবন্ধকতা নাগরিকের অধিকার আদায়ে বৈষম্যের সৃষ্টি করবে না। বাংলাদেশের সংবিধানে ২৬ নং থেকে ৪৭(ক) নং অনুচ্ছেদে নাগরিকের অধিকারের পূর্ণ নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য নাগরিক অধিকারগুলো হলো- আইনের দৃষ্টিতে সমতা, সরকারি নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, চলাফেরার স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, ইত্যাদি। সংবিধানের ২০ ও ২১ নং অনুচ্ছেদে নাগরিকের কর্তব্য পালন সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে উল্লেখিত নাগরিক কর্তব্যগুলো হলো- সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা, জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা ও সকল সময়ে জনগণের সেবার করার চেষ্টা করা।  

যদি কোন নাগরিক সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা, জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা থেকে বিরত থাকে তাহলে কি তিনি নাগরিক অধিকারের দাবি করতে পারেন? তারা দেশের আইন মানেন না, রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা না করে তা ধ্বংস করেন দলে বলে মিলে। তাহলে তিনি বা তারা কীভাবে নাগরিক অধিকার ভোগ করার দাবিদার হতে পারেন? তারা সাম্প্রতিক কালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাটহাজারি সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে তাণ্ডব চালালেন এবং রাষ্ট্রের বিপুল সম্পদ নষ্ট করলেন তার জন্য তাঁদের তো কঠোর শাস্তি পাবার কথা।

নাগরিক অধিকারকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১। নৈতিক অধিকার ও ২। আইনগত অধিকার। এই আলোচনার আগে আমরা আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।  সমাজে সুষ্ঠুভাবে জীবন-যাপন করার জন্য নাগরিকের যেসব সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন হয় তাই হচ্ছে সামাজিক অধিকার। এসব সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্র নাগরিক জীবনের সুষ্ঠু বিকাশে সহায়তা করে থাকে। আমরা যদি আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকে না তোয়াক্কা করি, রাষ্ট্রের আইন না মানি তা হলে কি আমরা নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারি? একাধিক বিয়ে করার অধিকার আমাদের সবার আছে। কিন্তু তা কিছু আইন মেনে, সামাজিক মূল্যবোধ মেনে করতে হয়। আমরা তা না করনে নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারি না।    

সুনাগরিক হওয়ার জন্য প্রথমেই একজন নাগরিককে সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতার গুণ অর্জন করতে হবে। সুনাগরিকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ হলো স্বদেশপ্রেম। স্বদেশপ্রেম ছাড়া সুনাগরিক হওয়া যায় না। নাগরিক অধিকার বলতে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করার স্বাধীনতাকে বোঝায়। তবে নাগরিক অধিকার মানে স্বেচ্ছাচার নয়। অধিকার হচ্ছে অন্যের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন না করে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করার স্বাধীনতা। অপরদিকে, কর্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত বা স্বেচ্ছায় পালিত কতিপয় দায়িত্ব যা রাষ্ট্র ও জনগণের উপকারে আসে।

নাগরিক জীবনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং উন্নত জীবন যাপনের জন্য রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকারগুলোই হলো অর্থনৈতিক অধিকার। দেশ বিদেশের মানুষের সাহায্য নিয়ে তা ব্যক্তিগত সুখ শান্তির জন্য ভোগ করার কোন অধিকার কি আমাদের আছে? সেই টাকার বা অর্থ সম্পদের হিসাব তো জনগণ তথা জনগণের স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত রাষ্ট্রকে দেখতেই হবে। তা দেখতে গেলেই কি আপনার নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হয়?  

এবার আসি ব্যক্তিগত ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে আলোচনায়। দেশের প্রচলিত আইনে একমাত্র তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সরকারের অনুমতিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টেলিফোন কথোপকথন রেকর্ড করার অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৯৭(ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইন বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা জন-শৃঙ্খলার স্বার্থে যে কোনো টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবহারকারীর প্রেরিত বার্তা ও কথোপকথন প্রতিহত, রেকর্ড ধারণ বা তৎসম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য সরকার সময় সময় নির্ধারিত সময়ের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থার কোনো কর্মকর্তাকে ক্ষমতা প্রদান করিতে পারিবে এবং উক্ত কার্যক্রমে সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারীকে নির্দেশ দিতে পারিবে এবং পরিচালনাকারী উক্ত নির্দেশ পালন করিতে বাধ্য থাকিবে? (২) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ‘সরকার’ বলিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বুঝাইবে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে এই ধারার বিধান প্রয়োগযোগ্য হইবে?’

আমরা যদি ধরে নিই সরকারি সংস্থা মামুনুল বা নুরুর টেলিফোন কল রেকর্ড করছে। তারা দুজনেই তাঁদের সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা জন-শৃঙ্খলার বা জন-স্বার্থের পরিপন্থী কাজে  ঘোষণা দিয়ে নিয়োজিত। এর মানে এটা প্রমাণিত হয় না যে সরকারি এই কল রেকর্ড ফাঁস করেছে। রেকর্ড করা আর ফাঁস করা এক কথা নয়। প্রমাণ ছাড়া কী করে তা বল যায়, কে ফাঁস করেছে! তাহলে উইকিলিক্স তাবৎ দুনিয়ার প্রায় সব দেশের গোপন তথ্য কী করে পায়। আইটির এই যুগে আমাদের দেশেও বহু হ্যাকার বা ক্র্যাকার আছে যারা ইচ্ছা করলেই যে কোন তথ্য চুরি করতে পারে। এমনও হতে পারে যে মামুনুল বা নুরু গং এর লকেরাই টেলিফোন কল রেকর্ড ফাঁস করে সরকারকে বিপদে ফেলতে চাইছে! তাঁদের দ্বারা অসম্ভব কিছুই নেই, কারণ তাঁদের আইটি টীম অনেক শতিশালী।       

আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকে তোয়াক্কা না করে, রাষ্ট্রের আইন না মেনে, রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করা কিংবা অবৈধ উপায়ে অর্থ আয়ের চেষ্টা কেউ করলে সেটাও তো বড় রকমের আইনের খেলাপ। সেটাও তাহলে বলতে হবে। কারণ সেটা দেখাও তো কারো না কারো দায়িত্ব। নিজেরা নাগরিক দায়িত্ব পালন না করে নাগরিক অধিকার দাবি করা তো বড় অন্যায়। এ যেন ‘চোরের মায়ের বড় গলা।‘   



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭