লিট ইনসাইড

রবীন্দ্রনাথের শারদীয় উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/09/2017


Thumbnail

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে শারদীয় উৎসব ছিল বাঙালির আনন্দ মেলা। তিনি জাতি, শ্রেণি ভুলে সার্বজনীন পূজাৎসবে বিশ্বাস করতেন। পূজায় আয়োজিত সব অনুষ্ঠানেই তিনি সবার সঙ্গে অংশগ্রহণ করতেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম জোড়াসাঁকোর ৬ নং দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের পারিবারিক বাসভবনে। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল সে যুগের বিদ্যোৎসাহী ও শিল্পোৎসাহী সমাজের উঁচুস্থান। পরিবারের সবার সঙ্গে এখানেই শারদীয় উৎসব কাটাতেন রবীন্দ্রনাথ। স্বাভাবিকভাবেই ঠাকুর পরিবারের যেকোনো পূজা উৎসব হতো অনেক জমকালো আয়োজনের। আর শারদীয় দুর্গাপূজা তো এমনিতেই মহাৎসবে রূপ নেয়।

সে আমলে প্রতি বছর দুর্গাপূজায় যাত্রার আসর বসতো। পূজার প্রথম আকর্ষণ ছিল যাত্রাগান। সপ্তমী থেকে নবমী এই তিনদিন সারা রাত মন্দির প্রাঙ্গনে চলতো যাত্রা। যাত্রাগানের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর দুই ভাই শৈশব কৈশোরে ছিলেন নিয়মিত যাত্রাগানের দর্শক।

যাত্রার আসরের প্রতি রবীন্দ্রনাথের মুগ্ধতা দেখা যায় তাঁর ‘আমার ছেলেবেলা’ গ্রন্থে। তিনি লিখে ছিলেন- ‘আমাদের দেশের যাত্রা আমার ভালো লাগে। যাত্রার অভিনয়ে দর্শক ও অভিনেতার মধ্যে একটা গুরুতর ব্যবধান নাই। পরস্পরের বিশ্বাস ও আনুকূল্যের প্রতি নির্ভর করিয়া কাজটা বেশ সহৃদয়তার সহিত সুসম্পন্ন হইয়া ওঠে। কাব্যরস, যেটা আসল জিনিস সেইটের সাহায্যে ফোয়ারার মতো চারিদিকে দর্শকদের পুলকিত চিত্তের উপর ছড়াইয়া পড়ে।’

শারদীয় উৎসবে কবিগুরু নিজস্ব স্টাইল ধরে রেখেই পোশাক বেছে নিতেন। ওনার পরনে থাকতো ঢোলা চাপকান। তবে কোনো কোনো সময় এই চাপকানে প্যাটার্নের পরিবর্তন দেখা যায়। চাপকানের ওপরে অনেক সময় চাদর বা উত্তরীয় জড়িয়ে নিতেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ধুতি পরতেন কয়েক উপায়ে। কখনো  তিনি কোঁচা দিয়ে ধুতি পরতেন, কখনো  কোঁচা ছাড়াই। তবে শারদীয় উৎসবে তার যাত্রাগান দেখা সম্পন্ন হত কোঁচা দেওয়া ধুতি পরেই। চাপকান ও ধুতির বাইরেও তার আরেক ধরনের নিয়মিত পোশাক ছিল। তা হচ্ছে ঢোলা কুর্তা ও পায়জামা। তবে ঢোলা কুর্তা সাধারণত বাড়িতেই শুধু পরতেন তিনি।

পোশাকের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন চির আধুনিক। নিজস্ব শৈলী প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি তিনি ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসে দিয়েছেন ফ্যাশন ও স্টাইলের সংজ্ঞা। যা আধুনিক ফ্যাশন ডিজাইনের স্নাতক সমতুল্যদের জানার বিষয়। তিনি লিখেছেন, ফ্যাশন হলো মুখোশ আর স্টাইল মুখশ্রী। ফ্যাশনকে বদলানো যায় এবং বদলালেই নতুন স্টাইল বা নতুন শৈলী তৈরি হয়। তাই স্টাইল হচ্ছে মুখশ্রী, যা বদলায় না। একেক আকার বা নামের স্টাইল তথা মুখশ্রী একেক সময় মুখোশ হয়ে জনপ্রিয়তা পায় এবং ফ্যাশন হিসেবে আখ্যায়িত হয়।

এবার আসা যাক পূজার খাবারে। খাবারের বিষয়ে কবি ছিলেন অত্যন্ত রসিক। বাঙালি খাবারের বাইরেও পশ্চিমা খাবারে প্রতি তাঁর বিশেষ মোহো দেখা যায়। তবে শারদীয় উৎসবে তিনি খেতেন ঠাকুরবাড়ির বিশেষ খাবার-দাবার। দুর্গাপূজায় ঠাকুরবাড়ির রসুইঘরে তৈরি হতো বিশেষ নিরামিষ। অন্যদিনের মত উৎসবের সময়েও কবি সকাল সকাল এক গ্লাস নিমপাতার শরবত খেতেন। উৎসবে ঠাকুরবাড়ি তৈরি হত রকমারি মিষ্টান্ন। কবিগুরুর প্রিয় ছিল বাদামের মিষ্টি, পায়েশ। তাই দুর্গাপূজায় অন্য মিষ্টির সঙ্গে এই দুই খাবার অবশ্যই তৈরি হতো।

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। শারদীয় দুর্গাপূজায় তিনি ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি খুজে ফেরেন প্রকৃতির সৌন্দর্য। শরতের নীল আকাশ ও সাদা মেঘের ভেলা কবিগুরুকে ছুঁয়ে দিতো বারবার। তাইতো গানে গানে বলে গেছেন, ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি- ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি’।

বাংলা ইনসাইডার/এএসি/জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭