ইনসাইড পলিটিক্স

হেফাজত নিয়ে নেতাদের নীরবতা, আওয়ামী লীগে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/04/2021


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। জাতীয় সংসদের সমাপনী অধিবেশনে তিনি হেফাজতকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সমালোচনার আগে পরে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা হেফাজত নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম অন্যতম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতা এই হেফাজত বিতর্কে নিজেদেরকে জড়াতে চাইছেন না। তারা নিরাপদ দূরত্বে থাকছেন এবং হেফাজত নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুস্পষ্ট দুটি ধারা। একটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ধারা, আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ধারা। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ধারাটি হলো স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যেটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। এই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির মূল দল কখনো বিএনপির হয়েছে, কখনো জাতীয় পার্টির হয়েছে, কখনো জামাত হয়েছে। এখন হেফাজতের রূপে এই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আত্মপ্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে হেফাজতের এই নারকীয় তান্ডব একাত্তরের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। মনে করা হয় যে, হেফাজত সুবর্ণজয়ন্তীকে বিতর্কিত করা, কলুষিত করার জন্যই ওই দিনটিকে বেছে নিয়েছিল তাণ্ডবের জন্য। নরেন্দ্র মোদি ছিল একটা উপলক্ষ মাত্র। এই ঘটনার ফলে সারাদেশের মানুষের মধ্যেই হেফাজত নিয়ে একটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছিল। আর তখনই হেফাজতের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কঠোর মনোভাব আশা করেছিল অনেকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে হেফাজতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাদের যেভাবে সরব হওয়া উচিত ছিল তারা সেভাবে মোটেও সরব হতে পারেনি। বরং আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা এ বিষয়ে কথা বলতে অনীহা দেখিয়েছেন, গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলেছেন।

হেফাজত নিয়ে প্রথম থেকেই অতন্ত্য সরব অবস্থানে ছিলেন আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। যখন হেফাজত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধিতা করেছিল তখনই হেফাজতের বিরুদ্ধে তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে কথা বলেছিলেন। সে সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ এবং জাহাঙ্গীর কবির নানকও তীব্র ভাষায় হেফাজতের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু সেই সময় হেফাজতের সঙ্গে সরকারের একটি অংশ আলাপ-আলোচনা করে এবং একটা পর্যায়ে ভাস্কর্যটি ইস্যুটি পর্দার আড়ালে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কি মীমাংসা হয়েছে সেটি জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী তাণ্ডব চালিয়ে হেফাজত সমঝোতার সব দুয়ার বন্ধ করে দিয়েছে। এই সময় আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল বলেই মনে করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আর এসময় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের নীরবতায় আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশেষ করে তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন, এদের কারণেই হেফাজত এত আশকারা পেয়েছে, এরাই হেফাজতকে পেলে-পুষে বড় করছে। এদের কারণেই হেফাজত আজ একটা বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা মনে করেন যে, যারা হেফাজতের বিরুদ্ধে কথা বলছেন না তাদেরকে চিহ্নিত করা দরকার এবং কেন তারা কথা বলছেন না, কি কারণ তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন সেটি জানা দরকার। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন সেখানে তারা কেনো চুপ করে আছেন সেটি একটি বিরাট প্রশ্ন। এই চুপ করে থাকার মধ্য দিয়ে হেফাজতের প্রতি তাদের সহানুভূতি অথবা হেফাজত নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে বলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল মনে করেন। আর এর প্রেক্ষিতেই তারা মনে করছে যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থানকারীর নেতৃত্বে না থাকে তাহলে আওয়ামী লীগ হেফাজতের কাছে ভবিষ্যতে হয়তো আত্মসমর্পন করলেও করতে পারে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭