ইনসাইড আর্টিকেল

বৈশাখের পোশাক শুধু পোশাক নয়, বাঙালির পরিচয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/04/2021


Thumbnail

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বৈশাখী উৎসবে সকল বয়স, ধর্ম, গোষ্ঠী ভেদাভেদ ভুলে মেতে উঠে উৎসবে। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ বেদনার হিসাব চুকে নতুন বছরের নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনার প্রত্যাশা আর মঙ্গল কামনায় পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন করা হয়। বিশ্বজুড়ে উদযাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদানের একটি হলো খাদ্য, অন্যটি বস্ত্র। বাঙালির জন্য এর অন্যথা ছিল না। পহেলা বৈশাখ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ নতুন পোশাক। তবে পহেলা বৈশাখের পোশাক শুধুই পোশাক নয়, বাঙ্গালির পরিচয়ও বহন করে।

বৈশাখের পোশাকের প্রচলনের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত এসেছে নানা পরিবর্তন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রং, রূপ, নকশা সব কিছুতেই ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকে বাংলা সন প্রবর্তন এবং বর্ষবরণ উদযাপন শুরু হলেও দিনটিতে নতুন পোশাক পরার প্রচলন ছিল না। বহু আগে থেকেই হিন্দু নারীরা পূর্জা-পার্বণে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরতেন। ধারণা করা হয় সেখান থেকেই বাংলা নববর্ষে লাল-সাদার প্রচলন শুরু হয়।

৮০ দশকের শুরুর দিকে কিছু বুটিক হাউসের দু`একটি প্রথম পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে লাল পাড়ের সাদা সুতি শাড়ি আনে। সেই থেকে ঢাকাতে পহেলা বৈশাখে লাল-সাদা শাড়ি পরার প্রচলন শুরু হয়। দীর্ঘসময় পর্যন্ত এটাই ছিল পহেলা বৈশাখের পোশাকের কেন্দ্রীয় রং এবং তাতে কোনো নকশার ব্যবহার ছিল না। তবে ৯০ দশকের দিক থেকে অনেকেই পহেলা বৈশাখে লাল-সাদা শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি পরতে শুরু করে। লাল-সাদা শাড়ির জমিন এবং পাড়ে ঢোল, তবলা, জীবজন্তু ছবির নকশার ব্যবহারও দেখা যায়। তবে তা এখনকার মতো এত ব্যাপক ছিল না।

বর্ষবরণ উপলক্ষে নতুন পোশাক পরার প্রচলন ঢাকায় প্রথম আশির দশকে শুরু হলেও বৈশাখী পোশাকের ধারায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে ২০০০-এর পর থেকে। শুধু বৈশাখী পোশাক নয়, মূলত আকাশ সংস্কৃতির কল্যাণে যে কোনো দিবস একটু ঘটা করে পালন করার প্রচলন এই দশকেই ব্যাপকভাবে শুরু হয়। হাতি, ঘোড়া, পাখা, ঢোল-তবলা মতো লোকজ মোটিফের জায়গায় পোশাকের নকশায় উঠে আসতে শুরু করে আল্পনা, মুখোশ, গ্রাম বাংলার প্রকৃতিসহ ঐতিহ্যবাহী নানা কিছু। প্রিন্ট ছাড়াও অ্যামব্রয়ডারি, সুতার কাজ, হ্যান্ডপেইন্ট নকশায় ব্যবহার শুরু হয়। বৈচিত্র্যময় মোটিফগুলো ফুটিয়ে তুলতে লাল-সাদাকে কেন্দ্রীয় রং হিসেবে রেখে এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও কয়েকটি রঙ। শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজের জায়গায়, কুর্তি, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্টসহ বিভিন্ন পোশাক যুক্ত হতে শুরু করে বৈশাখী ফ্যাশনে।

তবে এ চার দশকে বৈশাখী পোশাকের নকশায়, মোটিভে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। শুধুই লাল-সাদা স্থলে এখন তুলে ধরা হচ্ছে আমাদের লোকজ সংস্কৃতি, ঐহিত্য, প্রকৃতি সবকিছু। তবে এ সময়টাতে বৈশাখী পোশাকে ব্যাপক পরিবর্তন এলেও দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বরাবরই চেষ্টা করেছেন এবং এখনও করছেন বৈশাখী পোশাকে বাঙালিয়ানা সংস্কৃতিটাকেই তুলে ধরতে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭