ইনসাইড বাংলাদেশ

মৌলবাদের উত্থান এবং পহেলা বৈশাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/04/2021


Thumbnail

বাংলাদেশে সারা বছরই নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে সবচেয়ে বর্ণিল উৎসবটির নাম পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির একটি বড় উৎসবের দিন। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিই মূলত পহেলা বৈশাখ। আনন্দঘন এই দিনের জন্য অনেক আগে থেকে প্রতীক্ষা করতে থাকে বাঙালি। এই পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতানার প্রধান ভিত্তি। শুধু মুসলমান বা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান নয়, সব ধর্মের মানুষ সমান আগ্রহ নিয়ে উৎসবে যোগ দেয়। উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বড় সুযোগ করে দেয় বাংলা নববর্ষ। এই একটি উৎসব যেখানে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা নেই। নেই কোনো ধর্ম, বর্ণ। সকল ধর্মের সকল ধারার মানুষ এই উৎসবটি অনেক আড়ম্বরতার মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে। 

অবশ্য উৎসব বলা হলেও পহেলা বৈশাখকে বাঙালি শুধু উৎসব হিসেবে দেখে না কখনই। ষাটের দশকে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বর্ষবরণ উৎসবের সূচনা করা হয়। বিপুল এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নিজেদের উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধের মৌল চাওয়াগুলোকে সামনে রাখার চেষ্টা করে। এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ নেয়। এসব বিবেচনায় বাংলা নববর্ষ উদযাপনের রয়েছে আলাদা তাৎপর্য। 

তবে এবার সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে মৌলবাদের উত্থান। উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বাংলাদেশের ৫০ বছরের সকল অর্জনকে ব্যর্থ করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। এখনও দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা। বিশেষ করে গত কয়েকদিনের ঘটনায় তা স্পষ্ট। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে ২৬ মার্চ বড় তাণ্ডব চালিয়েছে তারা। ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় ভয়ঙ্কর এ তাণ্ডব চালানো হয়। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ভাংচুর চালানো হয়। এখনও এই মৌলগোষ্ঠী মাঠ ছাড়েনি। ওরা বাঙালির চির উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বর্ষবরণকেও চ্যালেঞ্জ জানায়।  

বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মৌলবাদী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র সব সময়ই চলমান ছিলো এবং তা এখনো চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালের পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকলে দেশের অপশক্তি বর্বরোচিতভাবে বোমা হামলা চালিয়ে কয়েকজন নিরীহ দর্শককে হত্যা করে এবং অনেককে আহত করে যাদের মধ্যে কেউ কেউ চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। এ নৃশংস ঘটনায় বাংলাদেশের বিবেকবান মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যান। সারা দেশের মানুষ এ জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়েছিলো। 

আজ আবার হেফাজতের ইসলামের তাণ্ডবের মধ্য দিয়ে মৌলবাদের উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশব্যাপী অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতানার ওপরে তাদের নজর এখন। তারা এই দেশটাকে সাম্প্রদায়িকতার আখড়া বানাতে বদ্ধপরিকর। আর সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছে। তাদের চোখ এখন বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতানার প্রধান ভিত্তি এই পহেলা বৈশাখের দিকে। 

বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান কোনো ধর্ম বা বর্ণের বিশেষ অনুষ্ঠান নয়। আবহমান কাল ধরে এটি বাঙালি সর্বজনীন জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হচ্ছে। বাঙালির চির কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুল ভ্রান্তি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে গিয়ে বাঙালি নতুন বছরের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় পালন করে থাকে নববর্ষ। আর এই একমাত্র উৎসব যেটি বাংলাদেশের সব মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদযাপন করে থাকে। সেই উৎসবের ওপর আঘাত মানে পুরো বাঙালি জাতির ওপরে আঘাত। ফলে এটি মেনে নেয়া যায় না। 

২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে এই মৌলবাদী গোষ্ঠীর তাণ্ডব দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। মৌলবাদী অপশক্তির ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও ধর্মান্ধতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। সামনে বাঙালি জাতির জন্য বড় দুঃসময়ের অশনি সঙ্কেত শোনা যাচ্ছে। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম শুরু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। শুভ নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭