ইনসাইড আর্টিকেল

সব গ্লানি মুছে সবার জন্য মঙ্গল কামনাই শ্রেয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/04/2021


Thumbnail

বৈশাখের প্রথম দিন আজ, নতুন বাংলা সন ১৪২৮-এর দিন গোনা শুরু আজ থেকে। বাঙালির কাছে এই দিনটির উদযাপন অন্য দিনের চেয়ে ব্যতিক্রম ও অন্যন্য বটে। এই দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি-কালচার। রয়েছে আধুনিকতার মিশেলে এক নিজস্ব  যাত্রাপথ। গেল দু’বছর ধরে বাঙালির বর্ষবরণের আনন্দ অনেকটাই মলিন করোনা মহামারির কারণে। আর তাই প্রত্যেক বাঙালির কাছে কঠিন এই সময়ে সব গ্লানি মুছে সবার জন্যই মঙ্গল কামনায়ই শ্রেয়।

যেভাবে শুরুটা হয়েছিলো বাংলা সনের, তাতে প্রবর্তক হিসেবে মোঘল সম্রাট আকবরের নামই উঠে আসে বার বার। অনেকের মতে, বাংলা পঞ্জিকা উদ্ভাবক সপ্তম শতকের রাজা শশাঙ্কের হাত ধরে। পরবর্তীকালে সম্রাট আকবর সেটিকে খাজনা ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশে ব্যবহার করতে শুরু করেন। আকবরের সময় প্রচলিত ক্যালেন্ডারের নাম ছিল তারিখ-এ-এলাহি। ওই ক্যালেন্ডারের মাসগুলো ছিলো এরকম- আর্বাদিন, কার্দিন, বিসুয়া, তীর ইত্যাদি। তবে কবে ও কী ভাবে এই নাম বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ হলো, সে বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া দুষ্কর এখনও। মনে করা হয়, বাংলা বারো মাসের নামকরণ করা হয় বিভিন্ন নক্ষত্র থেকে। যেমন- বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জায়ীস্থা থেকে জৈষ্ঠ্য, শার থেকে আষাঢ়, শ্রাবণী থেকে শ্রাবণ।

ভারতবর্ষে মোঘল শাসনকালে হিজরি পঞ্জিকা প্রচলিত ছিলো। এই পঞ্জিকা চাঁদের গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। এর ভিত্তিতেই কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করা হত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। স্বাভাবিক ভাবেই অসময়ে খাজনা দিতে সমস্যায় পড়তেন কৃষকরা। খাজনা শোধে কৃষকদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে কারণে  বর্ষ পঞ্জিতে সংস্কার আনেন সম্রাট আকবর। 

বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহ উল্লাহ সিরাজি সম্রাট আকবরের আদেশে সৌর সন ও হিজরি সন এর ভিত্তিতে বাংলা সন তৈরি করেন। ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে প্রথম বাংলা সন গণনা করা হয়। 

তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে খাজনা আদায়ে এই গণনা কার্যকর হয়েছিল ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর থেকে। পূর্বে ফসল কাটা ও খাজনা আদায়ের জন্য এই বছরের নাম দেওয়া হয়েছিল ফসলি সন। পরে তা বঙ্গাব্দে পরিণত হয়। তখন চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে খাজনা ও শুল্ক দিতে হতো কৃষকদের। এর পর দিন, পয়লা বৈশাখে জমি মালিকরা নিজের এলাকার অধিবাসীদের মিষ্টি খাইয়ে আপ্যায়ন করতেন। বিভিন্ন উৎসব আয়োজিত হত সেই উপলক্ষে। যেটি এখনও হালখাতা নামেই সবার কাছে পরিচিত। এখনও প্রচলন আছে এই হালখাতার।

ধীরে ধীরে বাঙালির এই উৎসব সর্বজনীন হয়ে উঠে। ধারণ করতে থাকে বাংলার লোকায়ত কৃষ্টি কালচার। গ্রামগঞ্জে বর্ষবরণকে ঘিরে বসে মেলা। দেশের নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয় এই মেলায়। 

নববর্ষের উদযাপনে আধুনিকতার স্পর্শে অনেকটা পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। অনেকে মনে করেন, পুরনো সেই পহেলা বৈশাখের দিন দই-চিড়া, পান্তা ভাত এসবের জায়গা করে নিয়েছে পান্তা-ইলিশ। তবে এটিও অন্যন্যতা যুক্ত করেছে বর্ষবরণ উদযাপনে তা অস্বীকার করার জো নেই কারো।

আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১৯৮৯ সালে প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন ছিল ঢাকায়। পাপেট, ঘোড়া, হাতি এরকম নানান গ্রাম বাংলার শিল্পকর্ম স্থান পায় এই শোভাযাত্রায়। সবার মঙ্গল কামনায় এই শোভাযাত্রা বলে পরে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা নামেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইউনেস্কো ২০১৬ সালে ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণে ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ অশুভ শক্তির বিরূদ্ধে শান্তি ও বাঙালি জাতিসত্তার ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পরিগণিত এখন বিশ্বের কাছে।

সব সময় প্রাসঙ্গিক অনুষঙ্গকে ধারণ করে বাঙালির বর্ষবরণ আজ একটি অন্যরকম সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাঙালির মানসপটে গ্রাম বাংলার আঁকা সেই চিরায়াত রুপ ভেসে উঠে এই উৎসবের মধ্য দিয়ে। সবার মঙ্গল কামনায় শুরু হয় নতুন বছর।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭