ইনসাইড থট

গুজব ভয়ংকর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/09/2017


Thumbnail

খবরটি আচমকা। হঠাৎ হোঁচট খেয়ে এলোমেলো হবার মতোই। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি কলকাতা ভিত্তিক নিউজ ১৮ এর বরাত দিয়ে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে খবরটা প্রকাশ করে। ঘটনা ২৪ আগস্টের। নিউজ ১৮ এর রিপোর্টার প্রবীণ সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক দাবি করেছেন, ২৪ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। এর সঙ্গে জড়িত ছিল স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের কয়েকজন। ওই ব্রেকিং নিউজের সঙ্গে সঙ্গেই চ্যানেলটি এ বিষয় নিয়ে একটি টকশোর আয়োজন করে। কিছুক্ষণ পরই নিউজটি গায়েব হয়ে যায়। ওই নিউজের সূত্র ধরে কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল , নিউজ ১৮ এর বরাত দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করে। কিছুক্ষণের মধ্যে সবগুলো সংবাদই পোর্টাল থেকে থেকে নামিয়ে ফেলা হয়। রাত সাড়ে ১১ টায় একাত্তর টিভির টকশোতে আবার বিষয়টি উঠে আসে। একাত্তর টিভি সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের সঙ্গে যুক্ত হয়। সুবীর ভৌমিক দাবি করেন, যাচাই বাচাই করেই (ডাবল চেক) তিনি রিপোর্টি করেছেন। এক পর্যায় তিনি বলেন ‘ঘাস কেটে সাংবাদিক হই নি।‘

মূলধারার কোনো সংবাদপত্রে খবরটি না এলেও সোশ্যালমিডিয়ার কল্যাণে ঘটনাটি সবাই জেনেছে। সবাই উদ্বিগ্ন এবং সত্য জানতে আগ্রহী। আসলে ঘটনা কি? সুবীর ভৌমিক একজন সিনিয়র সাংবাদিক। দীর্ঘদিন বিবিসিতে কাজ করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি ঘাস কেটে সাংবাদিক হননি। কিন্তু প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন অনেক শক্তিশালী। বিশেষ করে অনলাইন গণমাধ্যম বাঁধন হারা। অনেক সংবাদই হয়তো গণমাধ্যম প্রকাশ করে না, কিন্তু ইথারে সব তথ্যই পাওয়া যায়। আমাদের সাংবাদিকরাও এখন অনেক অনুসন্ধানী। সুবীর ভৌমিক যেমন ঘাস কেটে বড় হননি, তেমনি আমরাও ঘাস কেটে সাংবাদিক হইনি। এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, একমাত্র সুবীর ভৌমিকই খবরটা পেলেন আর আমরা সবাই আঙ্গুল চুষলাম! আমরা কি এতোই মুক, বধির, অন্ধ? বাংলাদেশে একজন সংবাদকর্মী এটা আঁচ করতে পারলেন না আর সুবীর ভৌমিক ‘ডাবল চেক’ করে ফেললেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ২৪ আগস্ট ফিরে যাওয়া যাক। ওই দিন কি হয়েছিল? প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিই বা কি ছিল? ২৪ আগস্ট সকাল ১০ টায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ত্রাণের জন্য অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।  দুপুরে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ফিরে আসেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গুলশানে মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন। সন্ধ্যায় তিনি গণভবনে ফিরে আসেন। সুবীর ভৌমিকের রিপোর্ট যদি সত্যি হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা নয়। নূন্যতম নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা অনুমতি দেওয়া হয় না। যেমন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিন্যুতে অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা প্রশ্ন থাকায়, ওই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। ২৪ আগস্ট এতবড় একটা ষড়যন্ত্র ফাঁস হলো, অথচ প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে গুলশান গেলেন। এটা অসম্ভব।

দ্বিতীয় বিষয় হলো, সুবীর ভৌমিক তাঁর রিপোর্টে বলেছেন, ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয় থেকে বের হলেই হামলা করা হবে। ২৪ তারিখ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কোনো কর্মসূচিই ছিল না। একমাস আগে থেকেই তাঁর আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদে যাওয়ার কথা। তাছাড়া সুবীর ভৌমিক সম্ভবত জানেন না, দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে বসেন খুবই কম। গণভবনের অফিসেই তিনি দাপ্তরিক কাজ সারেন।

২৪ আগস্ট যদি এরকম ঘটনার পরিকল্পনাও যদি ফাঁস হয়ে থাকে, তাহলে এসএসএফের ‘কথিত চক্রান্তকারীদের গ্রেপ্তার করার কথা। তাদের কোর্টমার্শাল অবধারিত। কিছু না হলেও তাদের ক্লোজ হওয়ার কথা। অথচ এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সুবীর ভৌমিকের রিপোর্ট অনুযায়ী কয়েকজন এসএসএফ সদস্য জড়িত। তাহলে প্রশ্ন আসে চক্রান্ত ফাঁস হবার পর তাঁরা কোথায়? এমনকি ২৪ আগস্টের পর প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা প্রদানকারী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন হয়নি। এতবড় একটা ঘটনা ঘটবে, এসএসএফের জড়িত কেউ আটক তো দূরের কথা, প্রত্যাহারও হবে না- এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

আমরা জানি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সব থেকে বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। তাঁকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে অনেকবার। প্রত্যেকবারই ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা গেছে। এতো সব ঝুঁকির পরও শেখ হাসিনা নির্ভীক, অকুতোভয়। এজন্যই তিনি মানুষের মঙ্গলে কাজ করতে পারেন। শেখ হাসিনা কে ভয় দেখানোর জন্যই কি এই গুজব? যেন তিনি নিজেকে গুটিয়ে রাখেন?

সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা শরনার্থী ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধে জড়িয়েছে মিয়ানমার। বার বার মিয়ানমার সরকার নানারকম উস্কানি দিচ্ছে। আন্তজার্তিক আইন লঙ্ঘন করে তারা বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করেছে। গণহত্যা নিয়েও মিথ্যাচার করেছে। বিশ্বে যে গুটি কয়েক মানুষ মিয়ানমারের এই নারকীয় তাণ্ডবকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সমর্থন দিচ্ছেন। সুবীর ভৌমিক তাঁদের অন্যতম। তিনি অং সান সুচির  ঘনিষ্ঠ। বিভিন্ন লেখাতে এখনো তিনি সুচিকে সমর্থন করেছেন। মিয়ানমার সরকারের ফরমায়েশে  কি এই গুজব ছড়ানো হয়েছে? যাতে বাংলাদেশের জনগণের দৃষ্টি  রোহিঙ্গা থেকে অন্য দিকে নেওয়া যায়? কি উদ্দেশ্যে এই কাঁচা হাতে গোয়েন্দা রিপোর্ট সুবীর ভৌমিক লিখেছেন তা নিশ্চয়ই একদিন বেরুবে। কিন্তু তার এই লেখার উদ্দেশ্য যে মহৎ ছিলো না, তা ঘাস কাটা লোকেরাও বুঝবে।

 
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭