ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

করোনার টিকা সংকটে ভারত! মজুদ টিকা চলবে ৯ দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/04/2021


Thumbnail

ভারতে করোনা সংক্রমণে দৈনিক মৃত্যু ২ লাখ ছাড়িয়েছে। করোনায় বেসামাল আর দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দেশটির নীতিনির্ধারকরা। এমন পরিস্থিতিতিতে নিজেদের উদ্ভাবিত কোভ্যাক্সিন টিকার উৎপাদন ১০ গুণ বাড়ানোর কথা বলছে তারা।

শুক্রবার দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানায়, সেপ্টেম্বর নাগাদ ১০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনা করছে তারা। রয়টার্স জানিয়েছে, বর্তমানে কোভ্যাক্সিন-এর উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা এক কোটি ডোজ। সেপ্টেম্বর নাগাদ এর উৎপাদন সক্ষমতা ১০ গুণ বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।  

মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল দেশটিকে। করোনা সংক্রমণে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই এখন ভারত। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে টিকার ঘাটতি। বিভিন্ন রাজ্যে টিকাদান কার্যক্রমের গতি কমে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিকা আমদানিরও উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নয়াদিল্লি।

ভারত বায়োটেক ছাড়াও রাষ্ট্রীয় আরও দুটি প্রতিষ্ঠান হাফকিন বায়োফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজিক্যালস লিমিটেড যাতে সামনের মাসগুলোতে সমন্বিতভাবে টিকার মাসিক উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে তিন কোটি ডোজ পর্যন্ত উন্নীত করতে পারে সে পরিকল্পনাও নিচ্ছে দেশটি।

৫ এপ্রিল ভারতে দৈনিক টিকাদানের পরিমাণ ৪৫ লাখে পৌঁছেছে। কিন্তু এরপর থেকে সেটা কমে গড়ে ৩০ লাখে নেমে এসেছে বলে জানা গেছে টিকাদান কার্যক্রমের সমন্বয়কারী সরকারি প্রতিষ্ঠান কো-উইনের ওয়েবসাইট থেকে।

অক্সফোর্ড-অ্যাট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিশিল্ড টিকার ভারতীয় উৎপাদক সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) এর উৎপাদিত টিকাই মূলত এ পর্যন্ত ভারতের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হয়েছে। সেদেশে যে ১১ কোটি ৫৫ লাখ ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে তার ৯১ শতাংশই এসআইআইর টিকা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ-নিষেধাজ্ঞার কারণে কাঁচামালের ঘাটতি হওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

এসআইআইর প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন টিকার কাঁচামালের ওপর থেকে সরবরাহ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য। এক টুইটে পুনাওয়ালা লিখেন, “... এই ভাইরাসটি মোকাবিলায় আমাদের যদি সত্যিই একতাবদ্ধ থাকতে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের টিকা উৎপাদন খাতের পক্ষ থেকে, আমি আপনার (প্রেসিডেন্ট বাইডেন) কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি কাঁচামাল রপ্তানিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য, যাতে টিকার উৎপাদন ত্বরান্বিত করা যায়।”

জরুরি ব্যবহারের জন্য এই সপ্তাহে রাশিয়ার উদ্ভাবিত ‘স্পুৎনিক ফাইভ’ টিকার অনুমোদন দিয়েছে নয়াদিল্লি এবং তা আমদানিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই মাসে আমদানি শুরু হলে সোয়া এক কোটি ভারতীয়কে টিকাদানের আওতায় আনা যাবে বলে জানিয়েছে সরকার। টিকা কিনতে ফাইজার, মডার্না এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের কাছেও আবেদন জানিয়েছে তারা।

মজুদ টিকা কতদিন চলবে? তা নিয়ে সংশয়ে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর জনগণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকার ডোজ প্রয়োগ করেছে ভারত, তবে মাথাপিছু হারের বিচারে তারা অনেকটাই পিছিয়ে। শুক্রবার ভারতের সরকার জানায়, তাদের কাছে বর্তমানে দুই কোটি ৬৭ লাখ ডোজ টিকার মজুদ আছে। গত সপ্তাহে যে হারে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে, তা বিবেচনায় নিলে এই মজুদ দিয়ে ৯ দিন পর্যন্ত চলতে পারে।

ভারত প্রথম ধাপে করোনা সংকট মোকাবিলায় লকডাউনসহ টিকা কার্যক্রমকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে টিকা উপহার দিয়েও অনেকটা নিজেদের সক্ষমতা জানান দেয় দেশটি। তবে এবার নিজেরাই টিকার জন্য মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে। কারণ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে টালমাটাল অবস্থা ভারতের। 

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭