ইনসাইড হেলথ

দ্বিতীয়বার করোনাঝুঁকি এড়াতে যা করা উচিৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/04/2021


Thumbnail

একবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর কিংবা করোনা প্রতিষেধক টিকা নেওয়ার পর দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হবেন না এমন ধারণা একেবারেই সঠিক নয়। কারণ একবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা নেহাতই কম নয়। সুতরাং দ্বিতীয়বার করোনা ঝুঁকি এড়াতে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরী। দ্বিতীয়বার করোনা ঝুঁকি এড়াতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। 

দ্বিতীয়বার করোনাঝুঁকি এড়াতে কিছু পরামর্শ- 

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করুন

নিজস্ব রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দেহকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া কিংবা জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। মানুষের শরীরে সহজাত রোগ প্রতিরোধক্ষমতা রয়েছে, যা বাইরে থেকে দেহে প্রবেশ করা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুকে ধ্বংস করে ফেলে। আবার নির্দিষ্ট ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলে, যাকে বলে `অ্যান্টিবডি`। অ্যান্টিবডি ভাইরাসের চারপাশে প্রোটিন বন্ধনী তৈরি করে। ফলে ভাইরাস কোষে ঢুকতে পারে না। অন্যদিকে `টি-সেল` উৎপন্ন করে, যা আক্রান্ত কোষ মেরে ফেলে।

একবার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হলে তখন করোনার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। শরীরে ইমিউনিটি থাকে বলেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কিন্তু এই অ্যান্টিবডি কত দিন থাকে তা আমরা নিশ্চিত নই। চার মাসের বেশি হয়তো থাকে না; অর্থাৎ চার মাস পর আবার কভিডে আক্রান্ত হতে পারে।

ব্যায়াম করুন

করোনাভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করে এর কার্যক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। ফলে ফুসফুস বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়বার কভিড আক্রান্ত হলে এই ফুসফুস মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই নিজেকে চাঙ্গা রাখতে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত বেশ কিছু ধরনের ব্যায়াম করা দরকার।

ব্যায়াম করতে কিছু পদ্ধতি ফলো করতে পারেন, সেগুলো নিম্নরুপ- 

১।  প্রথমে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে (১০ সেকেন্ড ধরে) প্রশ্বাস নিন। এরপর একই সময় পর্যন্ত ধরে রাখুন। ঠিক একইভাবে আবার ১০ সেকেন্ড ধরে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। আবার ১০ সেকেন্ড অপেক্ষা করে আগের নিয়মে প্রশ্বাস নিন। এই ব্যায়াম প্রতিদিন ১০ মিনিট করুন।

২।  প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে আনুন। এভাবে প্রতিদিন কয়েক মিনিট ব্যায়াম করতে পারেন।

৩। মুখ বন্ধ করে নাক দিয়ে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখুন। তবে প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাস উভয় ক্ষেত্রে কিছু সময় থাকতে হবে। ব্যায়ামটি শেষে কিছুক্ষণ স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন।

৪। বুকে বালিশ দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখুন। এরপর ছেড়ে দিন। এই পদ্ধতির নাম প্রন পজিশনিং। এই ব্যায়াম দিনে দুইবার করা যেতে পারে। তবে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে করা যাবে।

৫।  সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন অন্যান্য ব্যায়ামসহ ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। সম্ভব হলে সামাজিক দূরত্ব মেনে পার্কে গিয়ে জগিংও করা যেতে পারে। অন্যথায় বাসার ছাদেও হাঁটা যেতে পারে।

খাবারদাবারে গুরুত্ব দিন

একবার কভিড আক্রান্ত হলে নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পরও বেশ কিছুদিন শারীরিক দুর্বলতা থাকে। এই দুর্বলতা কাটাতে অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে উচ্চমানের আমিষজাতীয় খাবার বেশি খেতে পারেন। বেশি বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার খান। ভিটামিন `এ`, `সি`, `ই`, বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপেন ইত্যাদি সমৃদ্ধ খাবার খান। সবজির মধ্যে করলা, টমেটো, আলু, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, মটরশুঁটি, ফলের মধ্যে কমলালেবু, পেঁপে, আঙুর, আনার, জলপাই, আনারস ইত্যাদি বেশি খাবেন। গ্রিন টি, লাল চা, আদা চা বেশ উপকারী। বাইরের বা খোলামেলা খাওয়াদাওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।

নিয়মিত ফলোআপ

১। কভিড থেকে একবার সেরে উঠলেও ফলোআপ চিকিৎসা করাতে হবে ছয় মাস বা তারও বেশি সময়। পরবর্তী জটিলতা এড়াতে, বিশেষ করে যাঁরা কিডনি, লিভার, হার্ট, ডায়াবেটিসের জটিলতায় ভুগছেন তাঁরা নিয়মিত চেকআপ করান।

২। কিছু বেসিক টেস্ট, যেমন—ব্লাড কাউন্ট, লিভার ফাংশন, কিডনি ফাংশন, বুকের এক্স-রে ইত্যাদি পরীক্ষা করান। দুই মাস পরপর ইসিজি ও ইকো কার্ডিওগ্রাম করে হার্টের অবস্থা জানুন। মনে রাখবেন, অন্য রোগব্যাধি না থাকলে দ্বিতীয়বার আক্রান্তের ঝুঁকি কমে।

৩।  করোনাকালে যাঁদের ফুসফুস একবার আক্রান্ত হয়েছে তাঁদের এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করে চিকিৎসকের নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে ফুসফুসের সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত।

৪। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন। নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন।

৫।  কিডনি রোগে আক্রান্তরা পানি, আমিষ ও পটাসিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণের ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকুন। ডায়ালিসিসের রোগীরা নিয়মিত ডায়ালিসিস নিন।

৬। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শে জিংক ট্যাবলেট, ভিটামিন ‘ডি’ সাপ্লিমেন্টারি খেতে পারেন।

৭। একবার আক্রান্তরা অন্য যেকোনো শারীরিক জটিলতায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৮। যখন ভ্যাকসিন মিলবে তখন সেটা নেওয়ার চেষ্টা করুন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭