ইনসাইড থট

আমরা কি আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগে ফিরে যাচ্ছি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/04/2021


Thumbnail

ইসলামপূর্ব সৌদি আরবের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় জীবন অধঃপতনের পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল বলে একে অন্ধকার যুগ বলা হয়। উত্তর আরব ও মধ্য আরবের হেজাজ ও তৎসংলগ্ন এলাকা ইসলামের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তাই প্রকৃত অর্থে জাহিলী যুগ বলতে বোঝায় আরবের সেই সময় কালকে যখন সেখানে কোন নবী-রাসুলের আবির্ভাব ঘটেনি বা বা কোন ঐশী কিতাব নাযিল হয়নি। এক কথায় বলা যায়, এই অন্ধকার সময়ই আইয়্যামে জাহেলিয়া।

এ সময় আরবদের জীবনে কিছু প্রশংসনীয় দিকও ছিল। তাদের ভাষা ছিল সমৃদ্ধ। কাব্য চর্চা, আতিথেয়তা ও নির্ভীকতায় আরবরা ছিল অসাধারণ। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর আবির্ভাবে ও তাঁর শিক্ষায় এ অমানিশার অবসান ঘটে বলে দাবি করা হয়। আর সত্য সুন্দরের নতুন আলোয় আরবসহ গোটা বিশ্ব উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

প্রাক-ইসলাম ও ইসলামের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে নারীকে আরবি সাহিত্যে বিশেষ করে কাব্যে অবদান রাখতে দেখা যায়। মহিলা কবিদের মধ্যে খনসা ছিলেন অসাধারণ (মৃত্যু: ২৪ হি.)। তার প্রকৃত নাম তুমাযের বিনতে আমর। সম্পত্তির অধিকারী ও একজন স্বাধীন ব্যবসায়ী হিসাবে খাদিজার নাম আমরা জানি। প্রথম বয়সে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তাঁর কর্মচারী ছিলেন। যিনি ৪/৫টি বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বয়সে ছোটো হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)কে বিয়ে করেন। সম্পত্তির অধিকারী ও ব্যবসায়ী আসমা বিনতে মুখাররিবাহ্ নামে মক্কায় আরো একজন স্বাধীন নারীর নাম জানা যায়।

আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সময় কিছু গোত্রে সে সময় কন্যা-শিশু জীবন্ত কবর দেবার প্রথা থাকলেও আরবের সব গোত্রে নারীর অবস্থান নীচে ছিলো না। সেই সময় আরবের কিছু অঞ্চলে বিশেষভাবে মদিনায় মাতৃতান্ত্রিকতার পরিবারের প্রভাব দেখা যায়। সব কন্যা-শিশুকে হত্যা করা হতো না। তাহলে তো জাতিটিই বিলুপ্ত হয়ে যেতো।

আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগে নারী-পুরুষের যে সম্পর্ক ছিল, তাকে পাপাচার, নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার ছাড়া কিছু বলা যায় না। জাহেলি যুগে বিয়ে চার প্রকার ছিল বলে জানা যায়। প্রথমটি ছিল বর্তমান কালের অনুরূপ। যেমন—একে অন্যকে মেয়ের বিয়ের জন্য পয়গাম পাঠাত। সে পয়গাম মঞ্জুর হওয়ার পর মোহরানা আদায়ের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হতো। 

দ্বিতীয়টি ছিল নিজের স্বামী থাকা সত্ত্বেও অন্যের কাছ থেকে সন্তান গ্রহণ। বিবাহিত মহিলা রজঃস্রাব থেকে পাকসাফ হওয়ার পর তার স্বামী তাকে বলত, অমুক লোকের কাছে পয়গাম পাঠিয়ে তার কাছ থেকে তার লজ্জাস্থান অধিকার করো। অর্থাৎ তার সঙ্গে ব্যভিচার করো। এ সময় স্বামী নিজ স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকত। স্ত্রীর কাছে যেত না। যে লোকটিকে দিয়ে ব্যভিচার করানো হচ্ছিল তার দ্বারা নিজ স্ত্রীর গর্ভে সন্তান আসার প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত স্বামী স্ত্রীর কাছে যেত না।

তৃতীয়ত, ১০ জন মানুষের চেয়ে কমসংখ্যক মানুষ কোনো এক জায়গায় একজন মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করত। মহিলা গর্ভবতী হওয়ার পর সে সব পুরুষকে কাছে ডেকে আনত। এ সময় কারো অনুপস্থিত থাকার উপায় ছিল না। সবাই উপস্থিত হলে মহিলা বলত, তোমরা যা করেছ, তা তো তোমাদের জানা, এখন আমার গর্ভে এ সন্তানের জন্ম হয়েছে। হে অমুক, এ সন্তান তোমার। তারপর সে মহিলা ইচ্ছামতো যে কারো নাম নিত। যার নাম নেওয়া হতো নবজাত শিশুকে তার সন্তান হিসেবে সবাই মেনে নিত।

চতুর্থত, বহু লোক একত্রিত হয়ে একজন মহিলার কাছে যেত। মহিলা কোনো ইচ্ছুক পুরুষকেই বিমুখ করত না বা ফিরিয়ে দিত না। এরা ছিল পতিতা। এরা নিজেদের ঘরের সামনে একটা পতাকা স্থাপন করে রাখত। 

জাহেলি যুগে একাধিক স্ত্রী রাখা কোনো দোষের ব্যাপার ছিল না। সহোদর দুই বোনকেও অনেকে একই সময়ে স্ত্রী হিসেবে ঘরে রাখত। পিতার তালাক দেওয়া স্ত্রী অথবা পিতার মৃত্যুর পর সন্তান তার সৎ মায়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতো। তালাকের অধিকার ছিল শুধু পুরুষের এখতিয়ার।

ব্যভিচার সমাজের সর্বস্তরে প্রচলিত ছিল। কোনো শ্রেণির নারী-পুরুষই ব্যভিচারের কদর্যতা, পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত ছিল না। স্বাধীন মহিলাদের অবস্থা তুলনামূলকভাবে দাসীদের চেয়ে ভালো ছিল। দাসীদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে খারাপ। জাহেলি যুগের অধিকাংশ পুরুষ দাসীদের সঙ্গে মেলামেশায় দোষ ও লজ্জাবোধ করত না।

প্রায়ই এমন খবর শোনা যায়, মাদ্রাসায় ধর্ষণ, বলাৎকার, সমকামিতার ছড়াছড়ি, মাদ্রাসার ইমামের অংশগ্রহণও থাকে৷ আবার অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, এমন কথা ইসলামী চিন্তাবিদগণকে প্রায় বলে শোনা যায় ‘বেহেস্তে পুণ্যবান মানুষের স্থান হবে, সুখ-সমৃদ্ধে ভরপুর থাকবে, সেখানে ‘হুর’, ‘গেলমানের` (তরুণ পুরুষ, যারা হবে সুরক্ষিত মণিমুক্তার মতো সুদর্শন) ব্যবস্থাও রেখেছে’। 

যদিও বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী – যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোনো পুরুষ, নারী বা জন্তুর সহিত প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করে, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে – যার মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে – দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে৷ কিন্তু মাদ্রাসাগুলোতে এটা মটেই মানা হয় কি না সন্দেহ করেন অনেকেই।

কিন্তু ২০১৪ সালে আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিলে সমকামীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হয়৷ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের ‘অভিশপ্ত কওমে লুতের প্রেতাত্মা` বলে অভিহিত করে হেফাজতে ইসলাম৷ তারা বলে, সম্প্রতি দেশে সমকামীদের প্রকাশ্য সংঘবদ্ধ উৎপাতকে আমরা এই সমাজের সুদীর্ঘ সামাজিক ঐতিহ্য ও জীবনাচার এবং ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি তীব্র হুমকিস্বরূপ বলে মনে করি৷ অদূর ভবিষ্যতে সমকামীদের নিয়ে কোনো ধরনের প্রকাশ্য অবস্থান বা কর্মসূচি রুখে দিতে হেফাজতে ইসলাম এবং এ দেশের তৌহিদি জনতা বদ্ধপরিকর৷

কিন্তু ইদানীং মিডিয়ায় যে খবর আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, আলেমদের মাঝেই জাহেলি যুগের মত একাধিক স্ত্রী রাখা, পিতার তালাক দেওয়া স্ত্রী অথবা পিতার মৃত্যুর পর সন্তান তার সৎ মায়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, বাসার কাজের মেয়েদের (দাসী হিসেবে) সহবাসে ব্যবহারে কিংবা ছেলে শিশুদের সাথে বলাৎকার করতে দোষ ও লজ্জাবোধ করছেন না। তাহলে কি আমরা আবার আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগে ফিরে যাচ্ছি!

দুটি কারণে আমাদের দেশের মানুষ তাঁদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠান। এক- ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করলে সন্তান উচ্চ নৈতিকতার মানুষ হবে তা ভেবে। দুই- আর্থিক সংকটে পড়ে, থাকা খাওয়া ও লেখাপড়া বিনা পয়সায় পাওয়ার জন্য। কিন্তু কোন বাবা মায়েই চান যে তার সন্তান কোথাও গিয়ে বলাৎকার বা ধর্ষণের স্বীকার হউক। ধনী গরীব, আমীর –ফকির নির্বিশেষে পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব সবই এক। এটা ভাবতে হবে আমি আমার সন্তানকে বলাৎকার বা ধর্ষণের স্বীকার হতে কোথাও পাঠাবো কি না। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭