ইনসাইড আর্টিকেল

‘সুবিধা একটাই, আমি সবার কাছে পরিচিত’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/09/2017


Thumbnail

খ্যাতনামা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হক। তাঁর পরিচয় অনেক। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক, দ্বীন মোহাম্মদ আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা। দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্ত আছেন। সম্প্রতি ডা. দ্বীন মোহাম্মদ আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। দেশের সেবা কার্যক্রম নিয়ে নানা ভাবনা এবং রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা প্রসঙ্গে ডা. দ্বীন মোহাম্মদ একান্তে কথা বলেন বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে।

দেশ জুড়ে বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এই মুহুর্তে সংশ্লিষ্ট আছেন কী কী কার্যক্রমে ?

আমি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর পরিচালক থাকা অবস্খায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আই কেয়ার অর্থ্যাৎ সরকারিভাবে অন্ধত্ব নিবারণ কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। দীর্ঘ পাঁচ বছর ওই প্রজেক্টের লাইন ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় অন্ধত্ব নিবারণ কর্মসূচি সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আমরা এই কর্মসুচির মাধ্যমে যেভাবে সেবা দিচ্ছি তা বিশ্বের আর কোথাও নাই। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে সাধারণ মানুষের কাছে এই কর্মসূচির আওতায় সেবা দিয়েছি। এখনো এই কার্যক্রমের সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত আছি। শুধু অন্ধত্ব নিবার‌ণ কর্মসূচি নয়, স্বাস্থ্য সেবার যে সকল প্রতিষ্ঠান বা অঙ্গ রয়েছে সেগুলো নিয়েও কাজ করছি।

আপনি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবেন বলে জানাতে পেরেছি। কেন রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা?

একটা কথা বলা দরকার, একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি সব সময় তিনটা নীতি অনুসরণ করি। প্রথমটা হলো যে আমার একটা আদর্শ আছে, সেটা সবসময় ফলো করি, আরেকটা হলো আমি সততাকে ধরে রাখতে চেষ্টা করি, সর্বশেষটা হলো আমি মানুষের সেবায় কাজ করি।

আমার আদর্শ হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ । বাল্যকাল থেকেই যখন স্কুলে পড়ি তখন থেকেই আমি বঙ্গবন্ধুকে চিনি। তখন থেকেই তাঁকে সম্মান করি এবং তাঁর আদর্শ অনুসরণ করার চেষ্টা করি। চিকিৎসক হিসেবে আমি সততাটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করি। এই জন্য যে, আমার দ্বারা যেন কোন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই বিষয়টি আমি সবসময় খেয়াল রাখি। রোগীর সেবা করাই আমার প্রধান কাজ।

আমি আমার এলাকার কথাই ধরি।  এলাকাতে চিকিৎসক হিসেবে আমার আত্নপ্রকাশ ঘটতে থাকে, তখন থেকেই আমার একটা চিন্তা ছিল যে, দেশের দরিদ্র মানুষদের কতটুকু সেবা করতে পারি এবং সেভাবেই কাজ করেছি। এই সেবা করতে গিয়ে এখনো এলাকার বহু মানুষকে আমি বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। জেনে খুশি হবেন যে, আমার এলাকা পাকুন্দিয়া, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ এবং বিভিন্ন এলাকার মানুষ আমার কাছে আসলে আমি চেষ্টা করি তার অর্থ সার্মথ্য থাকুক আর না থাকুক তার চিকিৎসাটা দেওয়ার জন্য। যেহেতু আমি একজন চক্ষু চিকিৎসক সে হিসেবে বলতে চাই অন্ধত্ব বাংলাদেশের বিরাট সমস্যা এটি একটি গ্লোবাল প্রব্লেম।

বাংলাদেশে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ ছানি জনিত অন্ধত্বের শিকার বিনা কারণে। সেই হিসেবে আমি আমার এলাকার লোকদেরকে যতদুর পারি বিনামূল্যে চিকিৎস্যা দেই। উদাহরণ স্বরুপ বলতে পারি প্রতি মাসেই এলাকা থেকে ২০ থেকে ২৫ জন রোগী নিয়ে আসি এবং আমার নিজস্ব হাসপাতালে অপারেশন করে তাদের সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়ে দেই। এই কাজটি আমি বেশ কিছু দিন ধরেই করে আসছি, এবং এটা অব্যাহত থাকবে। 

গত মাসেই আমাদের আরেকটি এলাকা যে পাকুন্দিয়া কুঠিয়াদিতে প্রায় তিনশত মানুষের চোখের অপারেশন করে রেখে এসেছি। এবং এভাবে চলছে। আমার এলাকার মানুষের সাথে চিকিৎসক হিসেবেই আমার ঘনিষ্ঠতা বেশি।

কিন্তু একটি জিনিস লক্ষ্যণীয় হলো আমি যখন এলাকাই যাই বা মানুষের খোঁজ খবর নেই তখন গ্রামে গঞ্জের মানুষের আরও অনেক সমস্যা আমার কাছে ধরা পড়ে। মনে করেন, তাদের রাস্তা ঘাটের সমস্যা, ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার সমস্যা, তাদের পরিবেশগত সমস্যা এগুলো কিন্তু আমার কাছে তারা তুলে ধরে। তখন আমি তাদের জন্য কিছুই করতে পারি না আমার সীমবদ্ধতার কারণে । চিকিৎস্যা সেবায় আমি নিজেকে যেভাবে বিলিয়ে দিতে পারি অন্যান্য পারিপার্শ্বিক ব্যাপারে আমি তেমন সহযোগিতা করতে পারছি না।

এছাড়া আমি দীর্ঘদিন ধরে একটা আদর্শ নিয়ে বেঁচে আছি। সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত একটি আদর্শ জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই আছি এবং আমি কিন্তু কোনদিন এই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয় নাই পরিবর্তনও করি নাই। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন উঠে যে, এখন যেহেতু আমি অবসর সময়ে আছি, কাজেই এই সেক্টরেও তো মানুষকে অনেক কিছু দিতে পারব। গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ঘুরে আমার যে অভিজ্ঞা হয়েছে । আমি বিশ্বাস করি এরকম অভিজ্ঞা অন্য কারও মধ্যে দেখিনা। সেই জন্য আমি চাই এ ধরনের সুযোগ পেলে আমি মানুষের জন্য আরও বৃহৎ আকারে সেবার সুযোগ পাব। এটা আমার মনের বাসনা।

আপনি জনকল্যাণের জন্য রাজনীতিতে আসতে চান নাকি এর পিছনে অন্যকোনো উদ্দেশ্য আছে?

আমি আমার সাধ্যমত জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছি। তবে অনেক ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও অনেক কাজ করতে পারছিনা। কিন্তু আমি যদি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে যাওয়া যায় তখন কিন্তু মানুষের জন্য আরও বেশি করে কাজ করা যাবে। দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ চক্ষু চিকিৎস্যক হিসেবে যে পরিচিতি রয়েছে সেটা অন্য কারও নেই। এটা আমার উদ্দেশ্য পূরনে সহায়ক হবে। 

আপনি কেন নিজেকে একজন যোগ্য প্রাথী হিসেবে মনে করেন?

একজন মানুষ তখনই যোগ্য হবে শুধু উচ্চ শিক্ষিত হলেই তাঁকে যোগ্য বলা যাবেনা। আমি কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে গ্রামের স্কুলে লেখা পড়া করেছি। কোনো সময় আমি আমার এলাকা থেকে বিচ্যুত হয়নি বরং সব সময় আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। এমন কোনো দিন নাই যে আমার এলাকার লোকজন আমার কাছে আসছেন না। প্রতি দিনই তারা আমার সহযোগিতা নিচ্ছে। চক্ষু চিকিৎসা ছাড়াও অন্যান্য চিকিৎসার ব্যাপারে তাদেকে সহযোগিতা করছি। আমাকে মানুষ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিতে হচ্ছে, বিভিন্ন চিকিৎসকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়ে দিতে হচ্ছে। আমার সুবিধা একটাই যে, আমি সবার কাছেই পরিচিত। রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথেও আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সেটাকে আমি কেন কাজে লাগাব না। সেই হিসেবেই মনে করি আমি এলাকার যদি প্রতিনিধি হই তাহলে আমার যে পরিচিতি এবং আমার যে সার্মথ্য এটা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। কারণ আমি সব সময় একটা ভালো মন নিয়ে, ভালো চিন্তা নিয়ে, মানুষের মঙ্গলের চিন্তা করি কাজেই এটাকে সবাই সম্মাণ করবে এটা আমার বিশ্বাস এবং আমি মানুষের জন্য অনেক করতে পারব। 

জনপ্রতিনিধি হয়ে আপনি যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান, তাহলে দেশের স্বাস্থসেবা খাতে আপনি কী কী ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করেন?

আমি চিকিৎসক হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে আমার সম্মক ধারণা আছে। আমি যখন মহাপরিচালক থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের নীতি নির্ধারনে যারা ছিলেন মন্ত্রীমহোদয়, সচিব মহোদেয়ের সঙ্গে আমিও স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন প্রোগামে আমার থাকতে হত । আমি পব্লেমটাকে বুঝি চিকিৎসক হিসেবে আমি যতটুকু অনুধাবন করি অন্যকেউ এতটা অনুধাবন করতে পারবে না । আমি কিন্তু ম্যাকরো লেভেনা না,আমি মাইক্রো লেভেল পর্যন্ত বুঝতে পারি। এই জিনিসটা যার ম্যাকরো মাইক্রো এই দুইটা বিষয়ে যে ভালভাবে বুঝতে পারবে সেই সাকসেস হতে পারবে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে ইর্শ্বনীয়ভাবে সাফল্য এসেছে এবং সেই খানে আরও যে গভীরে যেতে হবে, অনেক দুর যেতে হবে, বিশ্বমানের করতে হবে, সেই জন্য আমি যতটুকু বুঝি প্রত্যেকটা ইউনিট, সেগমেন্ট আমার যে ধারণা আছে, আমার মনে হয়ে এইটা দারুনভাবে আমার কাজের জন্য সহায়তা করবে।

আগামী নির্বাচন নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?

আগামী নির্বাচন সুষ্ঠভাবে হবে বলে আমার মনে হচ্ছে। কারণ দেশে যে পরিমান মিডিয়া বা সংবাদকর্মী রয়েছে তাতে নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রিন্ট অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। দেশে এতো এতো সাংবাদিক রয়েছে যে, কোনো ঘটানা ঘটলেই মানুষ সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারে। আগামী নির্বাচনে যে প্রতিনিধিরা থাকবে মানুষ তাদেরকে সঠিকভাবে মু্ল্যায়ন করতে পারবে এবং মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু ঘটবেনা বলে আমার আমি মনে করি। নির্বাচনে যারা প্রার্থীতা নিবেন তাদেরকে বিচার বিশ্লেষণ করেই জনগণ রায় দিবেন এবং সেই ব্যাপারে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে জনগণের মনের ভিতরেই আমার নামটা রয়েছে। আমি সুযোগ পেলে জনগণের প্রত্যাশিত রায় আমার দিকেই আসবে।

কোনো কারণে আপনি যদি মনোনয়ন না পান, সেক্ষেত্রে আপনি কীভাবে কাজ করবেন?

মনোনয়ন তো একজনকেই দিবে এ ক্ষেত্রে অনেকেই নিজেদেরকে যোগ্য প্রার্থী মনে করেন এবং জনগণ এর বিচার করবে কে যোগ্য কার যোগ্যতা কতটুকু আছে। তবে নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া বা না পাওয়ার সঙ্গে আমাকে খুব যে বিচলিত করবে আমি কিন্তু কখনোই মনে করি না। প্রথমেই বলছি যে আমি একজন, জাতির জনকের আদর্শের লোক এবং এই আদর্শ নিয়ে বাঁচতে চাই। মনোনয়নের বিষয়ে আমি বলব যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আমাদের এলাকার জন্য যাকে দিবেন তাঁর জন্য আমাদের সকলে মিলেই কাজ করতে হবে, আমি নাও হতে পারি।

কাজ করার আলাদা একটা মানসিকতা থাকতে হয় এবং এটাকে ছিনিয়ে নিয়ে আসতে হয়। আমার অধিকারটা কেউ আমাকে দিবেনা, আমার অধিকার আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে আসতে হবে। এই যে অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করি। আমার মনে হয়ে যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যে সমস্ত কাজ হয়, প্রত্যেকটা সেক্টরই আমার পরিচিত। এবং যারা আমার ওপরে নীতিনির্ধারক, তাদের কাছে আমি একটা আবদার নিয়ে যেতে পারব এবং আমি বিশ্বাস করি যে আমি কোনো সময় ব্যর্থ হব না । এতে করে আমার এলাকার মানুষ বেশি করে উপকৃত হবে।

কিছু কিছু মানুষ আছে, যাঁরা অন্যের জন্য কাজ করে শান্তি পায়। আমিও তেমনি। অন্যের জন্য কাজ করে শান্তি পাই। সাধ্যের মধ্যে থাকলে আমি মানুষের জন্য সবই করি। এটা বলতে পার আমার একটি বদ অভ্যাস। কারও কোনো খারাপ অবস্থার কথা জানলে আমি সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জন্য কাজ করি। আমার পরিবারও অনেক সময় বলে তুমি এটা কেন কর। কিন্তু আমি মানুষের জন্য কাজ করেই শান্তি পাই। 

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ






প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭