ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

কী পেল বাংলাদেশ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/10/2017


Thumbnail

মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উ উইন মিত আয়ে আজ ঢাকায় আসছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে। চলতি সপ্তাহেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের শেষ হলো রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনা। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই নিরাপত্তা পরিষদ আলোচনার সমাপ্তি ঘোষণা করে। রোহিঙ্গা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের এ আলোচনায় কী পেল বাংলাদেশ?

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো: শহীদুল হক এখানে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু যেন নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় উঠে না আসে সে চেষ্টা করছিল মিয়ানমার। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং বিশ্ববাসী বাংলাদেশের পক্ষেই আছে। বাংলাদেশের কূনীতিকরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেনসহ সকলেই রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও সিদ্ধান্তের একটি ভিত্তি তৈরি হয়েছে বলে বাংলাদেশের কূটনীতিকরা মনে করছেন।

তবে নিরাপত্তা পরিষদে চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের পক্ষেই সাফাই গেয়েছে। দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূলে মিয়ানমার যা করছে তা ঠিক করছে বলেই মনে করছে তারা। তবে মিয়ানমারের সহিংসতা বন্ধের জন্য তাগাদা দিয়েছে এই দুই দেশ। চীন ও রাশিয়ার মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নেয়ার মূল কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক। রাশিয়া যেমন ভাবে ন্যাটো তাকে ঘিরে ফেলছে একইভাবে ভারতও ভাবে চীন তাদের ঘিরে ফেলছে। বঙ্গোপসাগরে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চীন ব্যবহার করছে মিয়ানমারকে। একটি গভীর সমুদ্রবন্দর ইতিমধ্যে নির্মাণ হচ্ছে দেশটিতে। এছাড়া রাখাইন প্রদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল বসানো ও তেলের পাইপলাইন বসাতে চায় দেশটি।

রাশিয়া একদিক থেকে সবসময় পশ্চিমাদের বিরোধিতা করে আসছে। রোহিঙ্গা প্রশ্নে দেশটি পশ্চিমাদের বিপক্ষে অবস্থান করবে এটাই স্বাভাবিক। একই সঙ্গে রাশিয়ার ভেতরেও জাতিগত দ্বন্দ্ব রয়েছে যা দেশটি দমিয়ে রাখতে চায়। সেক্ষেত্রে মিয়ানমারকে সমর্থন দিলে তাদের দেশের স্বার্থেই তা আঘাত করে। এছাড়া অর্থনৈতিক বিষয়টি তো রয়েছেই। সম্পদ সমৃদ্ধ এ দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী রাশিয়া। বিশেষ করে দেশটির ওপর থেকে যেদিন সারাবিশ্ব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখন থেকেই দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি।

মিয়ানমার আসলে স্পর্ধা পেয়েছে চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারত। অনেকে মনে করেন চীনের অর্থায়নে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করতে রোহিঙ্গাদের সমূলে উৎপাটন করছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের জান্তা সরকার বারবার অজুহাত দেখাচ্ছে তারা আসলে আরসা বা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির মতো জঙ্গী দলকে উচ্ছেদ করতেই তাদের এই সামরিক অভিযান। রোহিঙ্গারা আসলে স্থানীয় হিন্দু ও বৌদ্ধদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। তারা আসলে বাঙালি। ভারতও তাদের এই মত সমর্থন করছে। ভারতের এই মত সমর্থনের পেছনে রয়েছে কাশ্মির ইস্যু। যদি মিয়ানমারের নিন্দা করে তারা তবে এটাও স্বীকার করতে হবে কাশ্মিরী জনগণের ওপর তাঁরাও নির্যাতন করছে। তাই এই বিষয়ে চুপ করে আছে দেশটি। এছাড়া অর্থনৈতিক স্বার্থ তাদেরও আছে।

তবে আশার কথা হচ্ছে, মিয়ানমারকে ফের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হচ্ছে। সামরিক শাসন অবসানের পর দেশটি পশ্চিমাদের কাছে বিনিয়োগ বৃদ্ধির যে আশা করেছিল তা আর পূরণ হচ্ছে না। এর মধ্যেই কিছু পশ্চিমা কোম্পানি বিনিয়োগ স্থগিত করেছে এবং সংকটে পড়েছে দেশটির পর্যটন খাত।

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া ও তাদের কফি আনান কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে অবস্থান করছে। মিয়ানমারকে তারা সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায়। রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি ত্রাণের আশ্বাসও দেন তারা। এর মধ্যে মিসর ও কাজাখস্তান অন্য পাঁচ দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সুইডেনের সঙ্গে এক হয়ে নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক ডাকে।

বাংলাদেশের কূটনীতিকরা রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যা করেছেন তার মধ্যে সফলতা এতটুকুই যে বিশ্ববাসী নজর কেড়েছে এ বিষয়ে। মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে। যার ফলে মিয়ানমারের মন্ত্রী আলোচনার জন্য ঢাকায় আসছেন। যা এর আগ সম্ভব হয়নি। তবে বাংলাদেশকে আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে। মিয়ানমার যে এতবার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে তার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন ছিল। মিয়ানমারকে সরাসরি আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান আগেই করা উচিত ছিল। শুধুমাত্র সুচির নিন্দা জানিয়ে কিছু হবে না। মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় যেতে হবে। এক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যাতে মিয়ানমার বাধ্য হয় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে। সারাবিশ্বের ওপর নির্ভর করে লাভ নেই। কারণ তারা শুধু ত্রাণ দিয়ে যাবেন আর নিন্দা করবেন। অতীতেও এমনই ঘটেছিল। এখনও তাই ঘটছে। তাই বিশ্ববাসীও ওপর নির্ভর না করে বাংলাদেশকেই উদ্যোগী হতে হবে।

বাংলা ইনসাইডার/আরএইচবি




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭