ইনসাইড থট

শহীদ জননীর জন্মদিন কাঁদছে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/05/2021


Thumbnail

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। শুধু শহীদ রুমীর মা নন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল সন্তানদের মা। তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় যখন তখন তিনি কিংবদন্তি হয়ে ওঠেননি। শিক্ষক এবং লেখিকা। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় তাঁর লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। মনে মনে খুব ইচ্ছা ছিল তাঁর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার। 

১৯৭৫ সালে পাবনা জেলা কারাগার থেকে মুক্ত করে বাবা জোর করে ঢাকায় নিয়ে আসেন লেখাপড়া করানোর উদ্দেশ্যে। কথায় বলে ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।` মাথায় চাপল সিরাজগঞ্জের `স্ফুলিঙ্গ সাংস্কৃতিক সংসদ`-এর মতন ঢাকায়ও আরেকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়বার। রাজনীতি তো আছেই। যেই ভাবা সেই কাজ। ঢাকার প্রথম বন্ধু আতিক সিদ্দিকী কাজল (ঢাবির সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিকীর ভাই), গোলাম মোর্শেদ মাসু (বিশিষ্ট গীতিকার ও ব্যাবসায়ী, বেবিলন গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা)। দু`জনকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৭৬ সালে `সৃজন সাংস্কৃতিক সংসদ` গঠন করলাম। যার সভাপতি বানালাম, সে সময়ের প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার মানুষ ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী (পরে ঢাবির ভিসি), সহসভাপতি জাহানারা ইমাম, কবি আসাদ চৌধুরী এবং অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান। সাধারণ সম্পাদক আমি। কাজল, মাসুসহ অন্যান্য বন্ধুরা বিভিন্ন পদে (যাদের কথা সৃজন নিয়ে লেখায় উল্লেখ করব)।

 জাহানারা ইমামকে সম্মত করাতে টেলিফোনে যোগাযোগ করে আমরা ওনার এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় যাই। সেদিনই প্রথম ড্রইংরুমে শহীদ রুমীর বড় পোট্রের্টটা দেখি। বিস্ময়, বেদনা, শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় অনেকক্ষণ হতবাক হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম পোট্রেটটির সামনে! তাহলে এই সেই রুমী! আরো বিস্মিত হলাম রুমীর মা যখন ভেতর থেকে ড্রইং রুমে এলেন! অনিন্দ সুন্দরী এক মহিয়সী নারী! কী মার্জিত! কী রুচি সম্মত! কী বিনয়ী! কী সুন্দর করে কথা বলেন! আমরা ওনাকে খালাম্মা বলে সম্মোধন করায় খুশি হলেন। আমাদের উদ্দেশ্য-আদর্শ সব শুনে উনি সম্মত হলেন সৃজনের সঙ্গে থাকতে। কমিটি গঠনের মিটিংয়ে এলেন। কথা বললেন। মতামত দিলেন। টিএসসির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠলেন। কমিটি পরিচয় পর্বে উঠে দাঁড়িয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে মিষ্টি হেসে হাত নাড়লেন। যতদিন সৃজনের কর্মকান্ড ছিল ততদিন আমাদের পাশে মায়ের মতন, বন্ধুর মতন ছিলেন শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে। সৃজনের সদস্যরা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ায় সৃজনের কর্মকান্ড কয়েক বছরের পর স্তিমিত হয়ে যায়। খালাম্মার সাথেও যোগাযোগ অনিয়মিত হয়ে যায়। তবে আবৃত্তি শিল্পী রূপা চক্রবর্তী খালাম্মার বাসা ভাড়া নিলে রূপার বাসায় যাতায়াত সূত্রে আবার নিয়মিত যোগাযোগ স্হাপন হয়। 

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তৎপরতার শুরুর দিকে খালাম্মা ১৯৯১ সালের কবিতা উৎসবে বিকেলের অধিবেশনে এসে আমাকে বলেন, মোহন আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করছি, তোমাদের উৎসব মঞ্চ থেকে সে বিষয়ে একটা ঘোষণা দিতে চাই।` আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজী হলাম কিন্তু কবিতা পরিষদের নেতৃবৃন্দ কাউকে কিছু না জানিয়ে সময় বুঝে মঞ্চে গিয়ে ঘোষণা দিলাম, বিশিষ্ট লেখিকা, শহীদ রুমীর মা জাহানারা ইমাম এখন আপনাদের সামনে একটি জরুরি ঘোষণা দেবেন। আমি শ্রদ্ধেয়া জাহানারা ইমামকে মঞ্চ আসার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। 

সবাই অবাক হয়ে গেলেন, কী ব্যাপার কবিতা পাঠের মধ্যে আবার কিসের ঘোষণা! পরিষদ নেতৃবৃন্দও মুখ চাওয়া চাওয়ি করছেন। আমি জানতাম, মতামত চাইতে গেলে নানা মুনির নানা মত দেখা দিত। তাই কাউকে না বলেই ঘোষণা দিয়েছিলাম। খালাম্মা মঞ্চে উঠে এসে দেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনরুত্থান, মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির দাপাদাপি এসব বিষয়ে একটি ছোট বক্তৃতা করে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেই বক্তব্যে উনি গোলাম আজমসহ একাত্তরের ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় ডাক দেন এবং তিনি অবিলম্বে সেই লক্ষ্যে একটি আন্দোলন শুরু করবেন, যে আন্দোলনে সবার সমর্থন এবং একাত্ম হওয়ারও আহ্বান জানান। 

উপস্থিত দেশ বিদেশের লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ হাজার জনতা এই ঘোষণায় করতালিতে ফেটে পড়েন। খালাম্মা মঞ্চ থেকে নেমে এলে অনেকেই  তাঁকে ঘিরে ধরে অভিনন্দন জানান। তাঁর আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। খালাম্মা সেদিন আমার উপর ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। পাশে বসে অনেকক্ষণ আমার হাত তাঁর হাতের মুঠিতে ধরে রেখেছিলেন। আমি সেদিনের সেই মাতৃস্নেহের অনুভূতি কাউকে বোঝাতে পারব না। আমার সমস্ত শরীরের শিরা-উপশিরায় এক মহারণের অগ্নিলাভা প্রবাহিত হচ্ছিল! মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, নিজের জীবন দিয়ে হলেও একাত্তরের ঘাতক দালাল আর যুদ্ধাপরাধীদের বাংলার মাটি থেকে চির নির্মূলের লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাব। কথা দিয়েছিলাম প্রিয় শহীদ জননীকে। সেই প্রদীপ্ত প্রতিজ্ঞা আর অঙ্গিকার থেকেই `মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও  একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি`র প্রতিটি  কর্মসূচি, আন্দোলন-সংগ্রামে সম্মুখ কাতারের সৈনিক হিসেব নিজেকে সদা নিয়োজিত  রেখেছিলাম। 

অনেক স্মৃতির মাঝে একটি দিনের কথা বিশেষভাবে স্মরণীয়। সেদিন ছিল পহেলা বৈশাখের আগের রাত্রি (খুঁজলে সন তারিখ বের করা যাবে)। কোলকাতা থেকে কবি বন্ধু কাজল চক্রবর্তী, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় (আরেক জনের নাম মনে নেই) এসেছে ঢাকায়। উঠেছে আমার আজিমপুরের ছোট্ট বাসায়। ওদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরেফিরে রাত ১০টার দিকে বাসায় ফিরতেই আমার স্ত্রী জানাল, জাহানারা খালাম্মা ফোন দিয়েছিলেন, তুমি ফেরা মাত্রই ফোন দিতে বলেছেন, খুব জরুরি। তখন মোবাইল ফোন ছিল না। বাসার ল্যান্ডফোন থেকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিলাম। অপর প্রান্তে খালাম্মা ধরলেন। সালাম দিতেই বললেন, মোহন  তুমি এক্ষুণি আমার বাসায় চলে এসো।` বলেই ফোন কেটে দিলেন। হকচকিয়ে গেলাম। কোনো বিপদ নাতো, খালাম্মা এভাবে বললেন, ফোন কেটে দিলেন! বন্ধুদের বললাম, তোমরা খেয়ে নাও, খুব জরুরি কাজে আমাকে এখনি বাইরে যেতে হবে। কাজল বলল, চলো আমিও তোমার সঙ্গে যাব।` দু`জন দ্রুত বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে। স্ত্রী বললো, খেয়ে যাও।` বললাম, না, খালাম্মার নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে না হলে এভাবে কেন ডাকলেন। আজিমপুর শেখ সাহেব বাজার মোড়েই রিক্সা এবং বেবীট্যাক্সি স্ট্যান্ড আর পাশেই বেবিট্যাক্সি গ্যারেজ। কিন্তু কোনো বেবিট্যাক্সি নাই এত রাতে। বাধ্য হয়ে গ্যারেজে গিয়ে পরিচিত এক ড্রাইভারকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললাম, খুব জরুরি চলো এলিফ্যান্ট রোড যেতে হবে, তোমার গাড়িতেই ফিরব। ভাড়া একটু বেশি নিয়ো। সে কোনো ওজর-আপত্তি করল না। আমরা ছুটলাম। খালাম্মার বাসার কলিংবেল টিপতেই খালাম্মা দরজা খুলে দিলেন। আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। একটা হাতে লেখা কাগজ আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, এই লেখা দিয়ে একটা লিফলেটে ছেপে আগামীকাল পহেলা বৈশাখ রমনার বটমূলের অনুষ্ঠানে বিতরণ করতে হবে।` কাগজটা হাতে নিয়ে আমি বললাম, এখন এত রাতে কি করে সম্ভব? সবতো বন্ধ হয়ে গেছে। বললেন, এত লোক থাকতে তাহলে তোমাকে ডাকলাম কেনো? তোমার পক্ষে সম্ভব বলেই তো।`  কিছু টাকা বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। আমি বললাম, টাকা লাগবে না খালাম্মা কিন্তু..। কোনো কিন্তু নয় মোহন, আমি চাই রাতেই মধ্যেই ছেপে সকালে বিলি করবে। কীভাবে করবে আমি জানি না।` ঠিক আছে খালাম্মা। বলে বেরিয়ে এসে বেবিতে উঠলাম। শেখ সাহেব বাজার সাগর প্রেসে গিয়ে সার্টারে চাপড় দিয়ে ডাকলাম, এই ভেতরে কে আছো খোলো। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ নেই।  এবার টিনের সার্টারের উপর সব রাগগোস্বা ঢেলে দিলাম দুমদাম। কাঁচা ঘুম ভেঙে ভেতর থেকে কে একজন খেকিয়ে উঠল, এই ক্যাডারে?` ধমকে উঠলাম, এই ব্যাটা খোল কইলাম, নাইলে বিপদ আছে তোর। ক্যাডা? এবার সুর একটু নরম। বললাম, সাগরের বন্ধু, খোলো। ক্যান কি দরকার?` বললাম, দুই রিম হোয়াইট প্রিন্ট লাগব। এত রাতে বেচা-কেনা করতে তো মাহাজনের পারমিশন লাগব।` ঠিক আছে তুমি বাইরাও চলো, সাগরের বাসায় চলো। সাগরের বাসা কাছে-কুলেই কিন্তু আমি চিনি না। অনেক বলে ক`য়ে ওর  কর্মচারীকে নিয়ে ওর বাসায় গিয়ে, ওকে ডেকে তুলে সব খুলে বলে, দুই রিম কর্ণফুলী ডবল ডিমাই কাগজ নিয়ে কাজল আর আমি ৯৯, হাজী ওসমানগণি রোডে(আলু বাজার) আমার বিকল্প প্রিন্টিং প্রেসে (যে প্রেসে পটুয়া কামরুল হাসানের সর্বশেষ স্কেচ `দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে`  পোস্টার, ছাত্র ঐক্যের ঐতিহাসিক বুলেটিনসহ সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল মুদ্রিত হয়েছে, অনেক গোপন মিটিং হয়েছে) যখন পৌঁছালাম তখন রাত প্রায় দেড়টা। প্রেসের কর্মচারীদের ডেকে তুলে কাজে লাগিয়ে দিলাম। ভাগ্যিস কম্পোজিটর, মেশিনম্যান একজন করে প্রেসেই থাকত। কাজল আর আমি পাশে বসে কম্পোজ করিয়ে, প্রুফ কারেকশন করে ট্রেডল মেশিনে তুলতে তুলতে রাত প্রায় চারটা বেজে গেল। এতক্ষণে নাড়িভূড়ির মোচড়ে মনে পড়ল আমরা ক্ষুধার্ত! কিন্তু উপায় কি? ঢকঢক করে পানি খেয়ে দু`জন মেশিনের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে ভোর ছয়টা নাগাদ ছাপা শেষ করে লিফলেট নিয়ে রমনার বটমূলে ছুটলাম রিক্সায়। শহীদ জননীর হুকুম লংঘন করার সাধ্য কোনো মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের নাই। কিন্তু মৎসভবন পর্যন্ত এসে রিক্সা আটকে দিল। কোনো উপায় না পেয়ে দুটো প্যাকেট দুজন কাঁধে তুলে নিলাম। বেশ ওজন যা আমাদের পক্ষে বহন করা কঠিন। কিন্তু করতেই হবে, এ যে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্ন। এ যে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব তথা বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে একাত্তরের মতন অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রশ্ন। শহীদ জননীর কাছে অঙ্গীকারের প্রশ্ন। অনেক কষ্টে একজন ভারতীয় নাগরিক আর একজন বাংলাদেশী নাগরিক সম্মিলিতভাবে থেমে থেমে জিরিয়ে অনেক কষ্টে রমনার বটমূলে পৌঁছে কিছু তরুণকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক হাজার লিফলেট কিছুক্ষণের মধ্যেই বিলি করে তৃপ্তির নিশ্বাস ফেললাম। 

এমনি আরো অনেক কাজ সেই আন্দোলনে আমাদের করতে হয়েছে। ১৯৯২`র ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণআদালত অনুষ্ঠানের দিন আসাদুজ্জামান নূর, কামাল পাশা চৌধুরী, হাসান আরিফ আর আমি ছিলাম একত্রে একটি ট্রাকের উপরে দাঁড়িয়ে। গণআদালত শেষে আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্কট করে আমরা নিয়ে গেলাম প্রেসক্লাবে। 
কত মিছিল, মিটিং, আন্দোলন, সংগ্রাম, পরিশ্রম, কষ্ট, ত্যাগ, গ্রেফতারী পরোয়ানা, জুলুম, নির্যাতনের পথ বেয়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমামেের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন তাঁর প্রয়াণের অনুপস্থিতিতেও  বিশাল, ব্যাপক রূপ পরিগ্রহ করেছিল, শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে।  জেগে উঠেছিল সারাদেশ একাত্তরের চেতনায় গণজাগরণ মঞ্চের ডাকে। ফাঁসি হয়েছিল একাত্তরের ঘৃণ্য অপরাধীদের। কিন্তু কিছু মানুষের ফাঁসির মাধ্যমেই কি বাস্তবায়ন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আমরা কি শুধু কতিপয় ঘাতক, দালাল, রাজাকার, আলবদর তথা যুদ্ধাপরাধীদের শারিরীক মৃত্যু চেয়েছিলাম নাকি বাংলার মাটি থেকে স্বাধীনতা বিরোধী চেতনার সমূল বিনাশ চেয়েছিলাম?

 কেন তাহলে স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপোষরফা করে আজ বাস করতে হয় শহীদের রক্তস্নাত এই ভূমিতে? কেন তাদের এত আস্ফালন, এত আকাশচুম্বী স্পর্ধা ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দু`লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে? ওই নরাধমদের সমাজ-প্রগতি বিরোধী পশ্চাৎপদ, কুপমন্ডুক, অন্ধ-কালো চিন্তা-চেতনা তথা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ধ্যান-জ্ঞান-অবস্থান সমূলে উৎপাটনের জন্যই তো ছিল জাহানারা ইমামের আন্দোলন। কিন্তু আমরা কি সেই অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি? 

আজ সেই শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মদিন। ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যম ভরে গেছে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে! কিন্তু আমি বিবেকের দংশনে ক্ষতবিক্ষত। রক্তাক্ত। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি শহীদ জননী ডুঁকরে কাঁদছেন-আজকের এই স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষক, অগণতান্ত্রিক  বাংলাদেশের নির্লজ্জতা দেখে! 
আমি কোন মুখে শ্রদ্ধা জানাব মাকে?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭