ইনসাইড থট

খালেদা জিয়া কি দেশ ছেড়ে পালাতে চান?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/05/2021


Thumbnail

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুই দফায় পরীক্ষায় তাঁর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। তিনি আরও বলেন, গতকাল সোমবার ভোরে তাঁর শ্বাসকষ্ট হওয়ায় তাঁকে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। এখনো সেখানে আছেন। তবে এখন তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে তাঁর চিকিৎসকেরা বলেছেন।

কিন্তু গতকাল সোমবার বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার পরিবার চাচ্ছে দেশের বাইরে তাঁর চিকিৎসা করাতে। বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। এর আগে গত ১১ এপ্রিল করোনায় খালেদা জিয়ার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। শুরুর দিকে তাঁর ফুসফুসে সামান্য (৭ শতাংশ) সংক্রমণ ছিল। সে সময় তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা ছিল না।

শ্বাসকষ্ট নিয়ে সিসিইউতে খালেদা জিয়া, এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সোমবার রাত আটটার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন ৩০০ ফিট সড়কের সামনে সংবাদ ব্রিফিং করেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জাহিদ হোসেন বলেন, তিনি এখন স্থিতিশীল আছেন।

তাহলে খালেদা জিয়াকে তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে নিতে চাচ্ছেন কেন? সেটা বলার আগে এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার একটু পোস্টমর্টেম করে দেখা যাক।     

বয়স, অসুস্থতা ও নানা কথা চিন্তা করে শেখ হাসিনার সরকার খালেদা জিয়াকে জেলখানা থেকে বাসায় অন্তরীণ থাকার অনুমতি দিয়েছে, যা সরকারের ক্ষমতার মধ্যে পড়ে। এছাড়াও সরকার আমাদের জেল-কোডের নিয়ম পাল্টে এক নিরপরাধ গরীব মহিলাকে খালেদা জয়ার সেবায় জেলখানায় থাকতে দিয়েছিল। যদিও খালেদা জিয়া, তার দল, রাজনৈতিক জোটের সদস্য দলের কর্মী ও তার সন্তান মিলে বহুবার শখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন, যা আদালতে প্রমাণ হয়েছে। 

শেখ হাসিনাকে যতবার হত্যা-চেষ্টা করা হয়েছিল এসব অনেক ঘটনায় মামলাও হয়নি। এমনকি হামলার পর উল্টো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার নজিরও আছে। এসব হত্যা চেষ্টার কিছু কিছু ঘটনায় মামলা হয়েছিল, তার প্রতিটারই বিচারে সময় লেগেছে এক যুগের বেশি। কোনো কোনোটির ২০ থেকে ২৫ বছর। আবার বিচারিক আদালতে রায় এলেও উচ্চ আদালতে একটিরও মীমাংসা হয়নি এখনো।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার এটা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরতে গেলে দেখা যায় ১৯৯৪ সালে পাবনা ঈশ্বরদীতে, ২০০১ সালে গোপালগঞ্জে, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চারটি, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে চারটি হত্যা চেষ্টার কথা প্রকাশ হবার কথা জানা যায়।  

শেখ হাসিনার কয়েকটি হত্যা চেষ্টার মধ্যে-২০১১ সালে শ্রীলংকার একটি সন্ত্রাসবাদী দলের সাথে বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চুক্তি করে। এজন্য অগ্রিম টাকাও দেয়া হয়। শ্রীলংকার সেই সন্ত্রাসবাদী দলের আততায়ীদের টিম গাড়ি করে কলকাতা বিমানবন্দরে যাবার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে ভেস্তে যায় শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনাটি। এর পিছনে বিদেশে পলাতক এক বিএনপি নেতার নাম এসেছে।

জিয়া পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলায় মৃত্যু-দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শরিফুল হক ডালিম এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ জন অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য সামরিক অভ্যুত্থানের চক্রান্ত করে, যা উইকিলিকসের সৌদি আরবের এক গোপন বার্তায় প্রকাশ পায়। হংকংয়ে বসবাসরত এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ইসরাক আহমেদ এ পরিকল্পনায় অর্থায়ন করেন বলে গোপন বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৪ সালের শেষদিকে প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গিদের মাধ্যমে মানব-বোমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৫০ জন নারী ও ১৫০ জন যুবককে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। এদের নেতৃত্বে ছিল ১৩ জঙ্গি দম্পতি। তবে প্রশিক্ষণরত অবস্থায়ই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে ওই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়, যার পিছনে বিএনপির হাত থাকার অভিযোগ আছে।

এছাড়া ২০১৫ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে কারওয়ানবাজার এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা। কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণও ঘটায় তারা, যাদের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি, খালেদা জিয়া তার পরিবারের সদস্যদের অনেকেই। এমন অনেক ঘটনা আছে।

যা হউক, ২১ আগস্ট গ্রেনেড  হামলার রায়ের জন্য শেখ হাসিনা ১৪ বছর অপেক্ষা করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে আইন হিসেবে অনুমোদন করেন। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএ) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর করেন। দীর্ঘ ৩৪ বছর অপেক্ষার পরে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে।

শেখ হসিনা কিন্তু জেনারেল জিয়ার মত তড়িঘড়ি করে কোন বিচারের নামে প্রহসন করে শত শত মানুষকে ফাঁসি দেননি। শেখ হাসিনা ইচ্ছা সংসদে আইন পাশ করে বিশেষ ট্রাবুনাল গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যা বা নিজের হত্যা চেষ্টা মামলার বিচার কতে পারতেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তা করেন নি। উনি আইনকে তার নিজের হত্যা চেষ্টা মামলার রায়ের জন্য ১৪ বছর আর জাতির পিতার হত্যার বিচারর জন্য ৩৪ বছর অপেক্ষা করেছেন। এতেই প্রমাণ হয় যে, তিনি আইনকে তার নিজের গতিতে চলতে দিয়েছেন।

গত ২৬ ও ২৭শে মার্চ  হেফাজত ইসলাম নামের অরাজনৈতিক একটি রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোটের সদস্য দল মিলে বাংলাদেশ বিরোধী বিভিন্ন দেশ ও সন্ত্রাসী সংগঠনের মদদে অবৈধ উপায়ে সরকার উৎখাতের প্রাণান্ত চেষ্টা করে। যেখানে এব্যাপারে হেফাজতের আমীরের সাথে বিএনপি নেতাদের টেলিফোন সংলাপ ফাঁস হয়েছে। আটক হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক তার স্বীকারোক্তিতেও একথা বলেছেন।  মামুনুল হক আরও বলেছেন যে, তারা ২০ দলীয় জোটের সাথে পরামর্শ করে ২০১৩ সালে ৫ই মে সম্ভাব্য ইসলামপন্থী সরকার গঠনের খসড়াও করেছিলেন। ২০১৩ সালের ৫ই মে এবং ২৬, ২৭ মার্চের তাণ্ডবে বিএনপি-জামায়াতে ২০ দলীয় জোটের দলের নেতাদের সম্পৃক্ততার কথাও প্রকাশ পেয়েছে।

অন্যদিকে, হাটহাজারী মাদ্রাসায় ৪শ’ বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাবু নগরীর সাথে আছে বলে একটি  জাতীয়  দৈনিকে খবর বেরিয়েছে।  গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে দৈনিকে বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আত্মসমর্পণ না করলে রমযানের পরে সেখানে অভিযানের কথা বলা হয়েছে।

এমতাবস্থায়, খালেদা জিয়া কি নতুন মামলায় জড়িয়ে পড়ার ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে নতুন উছিলায় আছেন? নাকি এই চিকিৎসার নামে বিদেশে গিয়ে তাদের পূর্ব পরিকল্পিত প্রবাসী সরকার গঠনের চিন্তায় বিদেশ যেতে চাচ্ছেন? খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তার দল ও ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের বেসামাল বক্তব্যই এমন সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭