ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

নতুন রোগীর বিশ্বরেকর্ড, করোনায় দিশেহারা ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 06/05/2021


Thumbnail

করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ খুব ভালো মতোই ভোগাচ্ছে ভারতকে। এবার করোনা শনাক্তে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে তারা। এর ফলে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভারত। কেন্দ্রীয় সরকার তো বটেই ভারতের রাজ্য সরকারগুলোও করোনায় তাদের অসাহত্ব প্রকাশ করছে। অক্সিজেনে সংকট, ওষুধের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। কোনো ভাবেই ঠাকানো যাচ্ছে না করোনা শনাক্ত বা মৃত্যুর সংখ্যা। এরই মধ্যে গত কিছু দিন ধরে দিল্লেতে লকডাউন চলছে। কিন্তু লকডাউনের কোনো প্রভাব দেখা যায় নি করোনা শনাক্ত বা মৃত্যুর সংখ্যা দেখে। এছাড়াও মহারাষ্ট্রে, উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটক, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং তামিলনাড়ুর অবস্থা অনেক বেশি খারাপ। গত ২৪ ঘণ্টায় মহারাষ্ট্রেই করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯২০ জন। এই পরিস্থিতিতে কি করা হবে বা কি করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসবে সে নিয়ে চিন্তায় ভারত সরকার।

বুধবার দেশটিতে আক্রান্ত-মৃত্যুর নতুন রেকর্ড গড়েছে। এদিন সেখানে নতুন করে ৪ লাখ ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন, যা এর আগের সর্বোচ্চ রেকর্ডের চেয়ে অন্তত ১০ হাজার বেশি। এছাড়া মারা গেছেন প্রায় চার হাজার রোগী।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুসারে, বুধবার ভারতে নতুন করে ৪ লাখ ১২ হাজার ৭৮৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন, যা গোটা বিশ্বের মধ্যে কোনো দেশে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের রেকর্ড। এর আগের রেকর্ডটিও অবশ্য ভারতেরই ছিল। গত ৩০ এপ্রিল বিশ্বে প্রথমবারের মতো একদিনে চার লক্ষাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছিল সেখানে।

আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ভারতে গত কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে করোনা টেস্টের সংখ্যা কমা সত্ত্বেও বুধবার সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে গত ৩০ এপ্রিল রেকর্ড রোগী শনাক্তের দিন সর্বোচ্চ ১৯ লাখ ৪০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল। কিন্তু গত সোমবার এর পরিমাণ প্রায় তিন লাখ কমে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৬০ হাজারে। আর গত মঙ্গলবার তা কমে হয়েছে ১৫ লাখ ৪০ হাজার।

ফলশ্রুতিতে গত তিনদিনে টেস্টে পজিটিভ শনাক্তের হার (টিপিআর) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ, যা গত সপ্তাহের একই তিনদিনের তুলনায় অন্তত দুই শতাংশ পয়েন্ট বেশি। কোনো অঞ্চলে টিপিআর বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, সেখানে সংক্রমণের হার অনেক বেশি এবং এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ওই অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরীক্ষার অভাবে অনেক রোগী অশনাক্ত থেকে যাচ্ছেন।

বুধবার ভারতে করোনায় মারা গেছেন অন্তত ৩ হাজার ৯৮০ জন। এদিন দেশটির পাঁচটি রাজ্যে একদিনে রেকর্ড মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উত্তর প্রদেশে মারা গেছেন ৩৫৭ জন, কর্ণাটকে ৩৪৬ জন, পাঞ্জাবে ১৮২ জন, হরিয়ানায় ১৮১ জন এবং তামিলনাড়ুতে ১৬৭ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় মহারাষ্ট্রে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯২০ জন।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় এই রাজ্যটিতে গত এক দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ৬৪০ জন। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানে মারা গেছেন ৯২০ জন।

এই হিসেবে মহারাষ্ট্রের পরই আছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটক। গত ২৪ ঘণ্টায় ওই রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত নতুন ররোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৫০ হাজার ১১২তে, আর এই সময়সীমার মধ্যে সেখানে মারা গেছেন ৩৪৬ জন।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাসটির অব্যাহত রূপ পরিবর্তনের কারণে দ্রুততম সময়ে করোনার টিকার আধুনিকায়নের বিকল্প নেই বলে মত ড. বিজয়রাঘবনের।

এ অবস্থায় বুধবার সরকারিভাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ড. বিজয়রাঘবন বলেন, ‘যে হারে ভাইরাসের বিস্তার বাড়ছে, তাতে থার্ড ওয়েভ অবধারিত। কিন্তু মহামারির তৃতীয় ধাক্কাটি ঠিক কখন আঘাত করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আশা করছি যে থার্ড ওয়েভের আগেই যথাযথ প্রস্তুতি আমরা নিতে পারব। এজন্য টিকার আধুনিকায়নের কাজও চলছে।’

বৈশ্বিক মহামারির এ পর্যায়ে দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ভারত সরকার। গত এক সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে যত মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তার অর্ধেকই ভারতে- জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সংস্থাটির মহামারিবিষয়ক সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক সপ্তাহে বিশ্বে করোনায় প্রাণহানির প্রায় ২৫ শতাংশ ঘটেছে ভারতে।

ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে করোনার টেস্ট কিট, ওষুধ, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের। রোগীর বিপরীতে স্বাস্থ্য খাতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক লোকবল সংকট।

হাসপাতালে বেডের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অ্যাম্বুলেন্স ও গাড়ি পার্কিং এলাকায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেক মানুষ। মহামারির সেকেন্ড ওয়েভের দাপটে মৃত্যুর মিছিল কল্পনাতীতভাবে বাড়তে থাকায় মরদেহের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিভিন্ন শ্মশান ও কবরস্থানের কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্যবিদরা মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কার পূর্বাভাস দেয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপেক্ষা করার অভিযোগে সমালোচনার ঝড়ের মুখে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মাসব্যাপী ভোট গ্রহণ ও তার আগের দীর্ঘ প্রচারণা এবং কুম্ভমেলায় কোটি মানুষের সমাগমের ফলে ভারতে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে করোনার বিস্তার বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭