ইনসাইড থট

‘অসুখে’ অবিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/10/2017


Thumbnail

২১ এপ্রিল ১৯৭৭। বঙ্গভবনে সশস্ত্র অবস্থায় ঢুকলেন সেনা প্রধান জিয়াউর রহমান। তাঁর সঙ্গে তাঁর সশস্ত্র অনুগত বাহিনী। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম তখন বঙ্গভবনে তাঁর শয়ন কক্ষে, বিশ্রামে। সেনাপ্রধান জিয়া অপেক্ষা করতে পারলেন না। চলে গেলেন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির শয়ন কক্ষে। রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র সেনা সদস্য দেখে ভড়কে গেলেন। কালো সানগ্লাসে ঢাকা জিয়ার চোখ। কর্কশ স্বরে প্রেসিডেন্টকে বললেন, ‘মি. প্রেসিডেন্ট ইউ আর সিক।’ প্রেসিডেন্ট সায়েম প্রথমে বুঝতে পারলেন না। তিনি বললেন, ‘নো আই এম ফাইন’। এবার জিয়া কর্কশ কণ্ঠে চিৎকার করে বললেন, ‘অফ কোর্স ইউ আর সিক। ইউ উইল রিজাইন নাও।’ বিচারপতি সায়েম ততক্ষণে বুঝলেন। একজন সেনা অফিসার একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘প্লিজ সাইন।’ বিচারপতি সায়েম সেটা পড়লেন, তাতে লেখা শারীরিক অসুস্থতার জন্য আমি রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। বহুবছর পর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, তাঁর আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থে এই ‘অসুস্থতার’ কথা প্রকাশ করেন।

শুধু প্রেসিডেন্ট সায়েম নন, জিয়াউর রহমান তাঁর শাসনামলে ৮ জন সচিব, ৬ জন বিচারপতি, ১২ জন বিভিন্ন কর্মকর্তাকে অসুস্থ বানিয়ে পদত্যাগ করান।

জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সেনা প্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে ‘অসুস্থ’ বানিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করেন। অনেক পরে বিচারপতি সাত্তার সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন যে তাঁকে জোর করে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল।

বিএনপি যখন প্রধান বিচারপতির অসুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন করছে, সন্দেহ করছে, তখন আমার মনে প্রশ্ন এলো, মানুষের অসুখ, মৃত্যু এসব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে কেন? একজন মানুষ তো যেকোনো সময়েই অসুস্থ হতে পারেন। ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক, ঠিকঠাক কাজ করছিলেন, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এখনতো হাসপাতালের বিছানায় কাটছে তাঁর দিন। স্বাভাবিক একজন মানুষও হঠাৎ অসুখে পড়তেই পারেন। বলে কয়ে ক’জন অসুস্থ হন? কিন্তু এই ভাবনার মধ্যে হঠাৎ ফ্লাশব্যাকে পুরোনো দিনের ঘটনাগুলো ভেসে উঠল। তখনই আমি আবিষ্কার করলাম, কেন বিএনপির ‘অসুখ’ বিষয়টায় ঘোর অবিশ্বাস। কারণ তাঁদের প্রতিষ্ঠাতা নেতা তো এই কাজটি করেছেন সব সময়। ‘অসুস্থ’ বলে সুস্থ মানুষকে ক্ষমতা থেকে অস্ত্রের মুখে নামিয়েছেন। একারণেই অসুখে বিএনপির এত অবিশ্বাস।   

এই অবিশ্বাসের আরও কারণ আছে। বেগম জিয়া অসুখের চিকিৎসার জন্য মধ্য জুলাইয়ে গেলেন লন্ডনে। তিনমাস হতে চলল, এখনো তাঁর অসুখের খবর পেলাম না। তিনি কেমন আছেন, দেশবাসী জানে না। যে দলের প্রধান নেতা ‘অসুখ’ এর ভান করে বিদেশে অবকাশ যাপন করেন, সে দলের পাতি নেতারা কীভাবে ‘অসুখ’ বিশ্বাস করবেন। কীভাবে বুঝবেন, এই অসুস্থতা বেগম জিয়ার অসুস্থতা নয়? শুধু প্রধান নেতা নয়, দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক জিয়াও লন্ডনে দীর্ঘ নয় বছর। প্রায়ই বিএনপির নেতারা তারস্বরে চিৎকার করে বলেন,’ তার চিকিৎসা চলছে, এজন্যই তিনি লন্ডনে।’ কী দূরারোগ্য ব্যাধি তারেক জিয়ার যার চিকিৎসা নয় বছরেও শেষ হয় না। আহা কি সুন্দর অসুখ। যে অসুখে জিমে যাওয়া যায়, ক্যাসিনো খেলা যায়, শপিং করা যায়- শুধু দেশে আসা যায় না! বড়ই চমৎকার আসুখ বৈকি! একারণেই বিএনপির ‘অসুস্থতা’ শব্দে ভয়ানক সন্দেহ। অসুখে তাঁদের প্রচণ্ড অবিশ্বাস। তাঁদের দলের সংস্কৃতিই হলো ‘অসুস্থতা’ কে মিথ্যার প্রতিশব্দ করা। তাই প্রধান বিচারপতির অসুখ তাঁরা বিশ্বাস করবেন না, এটাই তো স্বাভাবিক।  


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭