ইনসাইড আর্টিকেল

ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত রোজা ভাঙ্গলে কাজা ও কাফফারা আদায়ের পদ্ধতি 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/05/2021


Thumbnail

রমাযান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক সুস্থ, মুকিম (আবাসে অবস্থানকারী/সফরকারী নয়) প্রাপ্ত বয়স্ক ও সক্ষম ব্যক্তির উপর ফরজ। এটি ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে ৪র্থ। শরিয়ত অনুমোদিত ওজর ছাড়া (যেমন: অসুস্থতা, সফর, ক্ষুধা-পিপাসায় প্রাণনাশ বা অঙ্গহানির আশংকা ইত্যাদি) রোজা ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহ ও কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে কোন যৌক্তিক কারণে রোজা ভঙ্গ হলে তার কাজা ও কাফফারার বিধান রয়েছে।

কাফফারা কি? 

কাফফারা আরবি শব্দ। এর অর্থ জরিমানা, পরিপূরক বা আবরণ। রোজার কাফফারা বলতে রমজান মাসের ফরজ রোজা শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া ভেঙে ফেললে পরবর্তীতে ওই ফরজের দায় থেকে মুক্তি লাভের জন্য একটি রোজার পরিবর্তে ষাটটি রোজা রাখা বোঝায়। তবে মাহে রমজানের রোজার পরিপূরক কোনো কিছুই হতে পারে না। কিন্তু মুমিনরা যাতে কিয়ামতের দিন পরিত্রাণ লাভ করতে পারে সেজন্য ইসলামী শরিয়তে রোজার কাফফারা হিসেবে লাগাতার ষাট দিন রোজা রাখার বিধান দিয়েছে।

রোজার কাফফারা- হাদীস কি বলে?

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একবার এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দরবারে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমি হালাক (ধ্বংস) হয়ে গেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাকে কিসে ধ্বংস করলো? তিনি বললেন, আমি রমজান মাসে দিনের বেলায় স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে ফেলেছি।  

রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি একটি গোলাম আযাদ করো। আগন্তুক বললেন, আমার সে সামর্থ্য নেই। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে তুমি একাধারে ষাট দিন রোজা রাখো। আগন্তুক বললেন, আমি একাধারে ষাট দিন রোজা রাখতে অক্ষম। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে তুমি ষাটজন মিসকিনকে খাবার খাওয়াও। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস: ২৬, সুনানে ইবনে মাযা, হাদিস: ১৬৭১, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৯৭৮৬, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৭৭৭৬) 

হাদিসের সারাংসঃ-

কাফফারার বিষয়গুলোর ধারাক্রম নিম্নরূপ। (অর্থাৎ একটি আদায় করতে সক্ষম না হলে অপরটি করতে হবে।)
১. রমজান মাসের একটি রোজার বিনিময়ে একটি দাস মুক্ত করা। (বর্তমান যুগে যেহেতু দাস-দাসীর প্রথা নেই তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।)
২. একটানা (বিরতি হীনভাবে) ৬০টি রোজা রাখা।
৩. তাও সম্ভব না হলে ৬০জন মিসকিন তথা গরিব-অসহায় মানুষকে একবেলা পেট পুরে খাবার খাওয়ানো অথবা প্রতিটি রোজার বিনিময়ে অর্ধ সা অর্থাৎ সোয়া বা দেড় কিলোগ্রাম চাল দেয়া।
–টাকা দেয়া ঠিক সুন্নাহ পরিপন্থী।
–একজন মিসকিনকে ৬০ বেলা খাবার‌ খাওয়ানো যেমন জায়েজ তেমনি ৬০জন মিসকিনকে এক বেলা খাওয়ানোও জায়েজ।


কাফফারা রোজা অর্থাৎ বিরতিহীন ৬০ রোজা করতে গিয়ে ভাঙ্গা পড়লে কি করবেন?

কাফফারার রোজা রাখতে গিয়ে যদি ষাট দিনের মাঝে কোন এক দিনেরও রোজা ভাঙা পড়ে কোন যুক্তি সঙ্গত কারণে তাহলেও কাফফারা বাতিল হয়ে যাবে। পুনরায় ষাট দিন রোজা রাখতে হবে। তবে নারীদের মাসিক রক্তস্রাব ও সন্তান প্রসবজনিত রক্তস্রাবের কারণে কাফফারার রোজা ভাঙা পড়লে তাতে কাফফারা বাতিল হবে না। 

তবে একই বছরের মাহে রমজানে যে কয়টা রোজাই ভাঙা পড়ুক না কেন কাফফারা একটাই আদায় করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ: কেউ যদি ২০২১ সালের রমজান মাসের তিনটি রোজা ভেঙে ফেলে তাহলে তাকে পাঁচটি কাজা ও একটি কাফফারা (এক কাফফারা সমান বিরতিহীন ৬০ রোজা) মোট পঁয়ষট্টি দিন রোজা রাখতে হবে।

যেভাবে রোজা ভাঙ্গলে কাজা বা কাফফারা দিতে হবেনাঃ-

কোনো প্রকার শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে রমজান মাসের দিনের বেলায় খাবার খেলে, কোনো পানীয় পান করলে অথবা স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম করলে রোজার কাজা ও কাফফারা আদায় করতে হবে। তবে ভুলবশত যদি কেউ রমজানের দিনের বেলায় পেটপুরে খায় অর্থাৎ সে যে রোজা আছে একথাটাই বেমালুম ভুলে গেছে। তাহলে তার রোজা নষ্ট হবে না এবং কাজা ও কাফফারা কিছুই আদায় করতে হবে না। তাকে খাবার মাঝখানে রোজার কথা মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং অবশিষ্ট সময় রোজা পূরণ করতে হবে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি কলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভুলে রমজান মাসে দিনের বেলায় খাবার খেলো অথবা পানীয় পান করলো, সে যেন রোজা ভেঙে না ফেলে। কারণ সে যে খাবারটা খেয়েছে তা এমন খাবার যা আল্লাহ তাকে রিজিক হিসেবে খাইয়েছেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৭২১, মুখতাসারুল আহকাম, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৬৪, সুনানে দারু কুতনি, হাদিস: ২২৪৮, আস সুনানুল কুবরা, হাদিস: ৮০২৯)।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭