ইনসাইড আর্টিকেল

মাকে ছাড়া প্রথম ঈদ


প্রকাশ: 14/05/2021


Thumbnail

চার রোজা থেকেই একাকীত্বের জীবনের শুরু। ১৭ এপ্রিল শনিবার, সকালে হঠাৎ মা ঘুমিয়ে পরলেন। তারপর ডাকাডাকি করলাম বহুক্ষণ। ঘুম সারাতে হাসপাতালে গেলাম। ডাক্তার জানিয়ে দিলো ঘুম আর ভাঙ্গবে না। তারপর একাকীত্ব। মায়ের ঘরটাতে যাই না। বাসা থেকে বেরুনোর আগে, মার ঘরে যেতাম, মা যাচ্ছি। মা বলতেন ‘ফি-আমানলিল্লাহ’। সপ্তাহে তিনদিন খুব ভোরে উঠতাম। মাকে নিয়ে বাসা থেকে বেরুতাম সাতটার আগেই। রোববার, মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার মা’র ডায়লাসিস। চারঘন্টা। ডায়লাসিসের পর মা অনেক দুর্বল হয়ে যেত। যেন ছোট্ট বাচ্চা। আমি হাত ধরে তাকে নিয়ে যেতাম। কেমন এক অসহায় চাহনি।

বাবা চলে গেলেন ২০১৮, ২১ মার্চ। তারপর মার সাথে সারাদিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে মার খোঁজ নেয়া। প্রেশার, ব্লাড সুগার কত জানা। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে এসে, মায়ের মুখ দেখা। কখনও বিষণ্ণ, কখনও উদাস। বলতো ‘চেহারাটা শুকনো কেন, দুপুরে খাসনি।’ রাতে খেতে বসে, কথা, খুনসুটি। একটা ছন্দময় অভ্যস্ত জীবন। আস্তে আস্তে মা জীবনের অংশ হয়ে গেল। মা যেন সন্তান। আমি তার বাবা। জীবন বোধ হয় এরকম। ঘুরে ফিরে একই বৃত্তে মেলে।

ছোট বেলায় মাকে আমি খুব জ্বালাতাম। মা একটা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। অনেক কাজ, অনেক ব্যস্ততা। কিন্তু সেটা আমাকে বোঝায় কে। মায়ের শাড়ী লুকিয়ে রাখতাম, যেন স্কুলে যেতে না পারে। দরজায় খিল লাগিয়ে দিতাম। পরাজয় কখনোই আমার সহ্য নয়। যখন আমার সব বাধা অতিক্রম করে মা স্কুলে যেতে প্রস্তুত তখন চিৎকার করে কাঁদতাম। তাতেও যখন কাজ হতো না, তখন রিকশার পেছনে পেছনে ছুটতাম। এক সময় বাধ্য হয়ে মা আমাকে নিয়েই স্কুলে যাওয়া শুরু করলেন। সবাই বলতো মায়ের ন্যাওটা।

আমরা তিন ভাই এক বোন। আমি মেঝ। কিন্তু অন্য সবার চেয়ে বাবা-মার সংগে আমার সম্পর্কটা ছিলো অন্যরকম। যতই আমি বড় হলাম ততই যেন আমি বাবা-মা’র নির্ভরতা হলাম। আমি যেন গার্জিয়ান। ছোট বেলার ঈদে বাবা মা কিনে দিতো, জামা, জুতা। বড় বেলার ঈদে আমি কিনে দিতাম বাবা-মাকে। উপহার পেয়ে বাবা খুব উচ্ছ্বসিত হতো, মা নীরব। কিন্তু আমি খুব মজা পেতাম। আমার স্ত্রী প্রবল উৎসাহে বাবা-মায়ের জন্য কেনাকাটা করতো। ২০১৮ পর্যন্ত এটাই ছিলো আমাদের ঈদের বড় আনন্দ। তারপর মা কে নিয়ে ঈদ। ভাইয়েরা আসতো এক সাথে নামাজ পড়তাম।

মা ছিলো শেকড়, বৃত্তের বিন্দু। ছোট বেলা থেকে বড় বেলা। আমি আর মা জায়গা বদল করেছি। দুজন দুজনার নির্ভরতা হয়েছি। এক সময় আমি মায়ের হাত ধরে ছুটে বেড়াতাম। এক সময় মা আমার হাত ধরে হাটতো। দুটোর আনন্দ দুরকম। কিন্তু এবার ঈদ মা ছাড়া। আমাদের কেনা কাটার কোন আয়োজন নেই। উৎসবের কোন আমেজ নেই। বৃক্ষটা উপড়ে গেছে। ঈদের দিন আমার সালাম করার কেউ নেই। কারো কোলে মাথা দিয়ে শান্তি পাবার মানুষটা নেই।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭