ইনসাইড আর্টিকেল

গত ঈদে ছিলো, এই ঈদে নেই


প্রকাশ: 14/05/2021


Thumbnail

গতবছর ঈদেও আমাদের মাঝে বেঁছে ছিলো তারা, কিন্তু এই ঈদে তারা এখন কেবলই স্মৃতি। তারা এখন আমাদের মাঝে আছেন তাদের কর্মগুনে। বিভিন্ন অঙ্গনের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব যারা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন তাদের নিয়ে এই প্রতিবেদন।

এন্ড্রু কিশোর (৪ নভেম্বর ১৯৫৫ - ৬ জুলাই ২০২০)

দেশের জনপ্রিয় ‘প্লেব্যাক সম্রাট’খ্যাত জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর ২০২০ সালের ৬ জুলাই সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় তার বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন এই সঙ্গীতশিল্পী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

১৯৭৭ সালে এন্ড্রু কিশোর আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু করেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

বর্ণাঢ্য সঙ্গীত ক্যারিয়ারে ৮ বার চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

সাহারা খাতুন (১ মার্চ ১৯৪৩ - ৯ জুলাই ২০২০)

দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাহারা খাতুন ২০২০ সালের ৯ই জুলাই ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।

সাহারা খাতুন ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও আইনজীবী যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আলাউদ্দিন আলী (২৪ ডিসেম্বর ১৯৫২ - ৯ আগস্ট ২০২০)

দেশের বরেণ্য সুর সম্রাট আলাউদ্দিন আলী ২০২০ সালের ৯ আগস্ট সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। দীর্ঘদিন ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যায় ছাড়াও মরণব্যাধী ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি।

গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন আলাউদ্দীন আলী পাঁচ হাজারেরও বেশি গানে দিয়েছেন সুর। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার পুরস্কৃত হয়ে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে রেকর্ড গড়েন।

দেশ বরেণ্য এই সুর সম্রাট ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।

কে এস ফিরোজ (৭ জুলাই, ১৯৪৬ - ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০)

ছোট পর্দার উজ্জ্বল নক্ষত্র খন্দকার শহীদ উদ্দিন ফিরোজ করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় স্ট্রোক করে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা ২০ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান। তিনি দর্শকের কাছে কে এস ফিরোজ হিসবেই পরিচিত।

বর্ণাঢ্য নাট্য জীবন শুরুর আগে কে এস ফিরোজ ১৯৬৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। মেজর হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। এরপর থেকেই শুরু হয় নিয়মিত অভিনয় জীবন।

সাদেক বাচ্চু (১ জানুয়ারি ১৯৫৫ - ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০)

ঢাকাই ছবির প্রতাপশালী অভিনেতা সাদেক বাচ্চু করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ১২টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।

১৯৭৪ সালে বিটিভিতে তিনি অভিনয় করেন ‘প্রথম অঙ্গীকার’ নাটকে। তার অভিনীত নাটকের সংখ্যা হাজারের বেশি। প্রথম অভিনীত সিনেমা শহীদুল আমিন পরিচালিত ‘রামের সুমতি’। নব্বইয়ের দশকে পরিচালক এহতেশামের ‘চাঁদনী’ ছবিতে অভিনয় করে পরিচিতি পান তিনি। রেডিও বা টেলিভিশনের আগে তিনি অভিনয় শুরু করেন মঞ্চে। তার নাট্যদলের নাম মতিঝিল থিয়েটার; আমৃত্যু তিনি দলটির সভাপতি ছিলেন।

আলী যাকের ৬ নভেম্বর ১৯৪৪ - ২৭ নভেম্বর ২০২০)

দেশ বরেণ্য অভিনেতা ও নির্দেশক আলী যাকের করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা যান। ক্যান্সারের সঙ্গে চার বছরের লড়াই শেষে মারা যান এই অভিনেতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

গত শতকের সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকে মঞ্চ আর টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন আলী যাকের। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। ১৯৭২ সালের আরণ্যক নাট্যদলের ‘কবর’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু করেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সাল থেকে কাজ করছেন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় নিয়ে।

রাবেয়া খাতুন (২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ - ৩ জানুয়ারি ২০২১)

কবি, লেখক এবং সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি গুলশানে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৯৩ সালে একুশে পদক পুরস্কার পান। তার রচিত প্রথম উপন্যাসের নাম নিরাশ্রয়া (অপ্রকাশিত)।

এটিএম শামসুজ্জামান (১০ সেপ্টেম্বর ১৯৪১ - ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১)

জনপ্রিয় অভিনেতা, পরিচালক এবং লেখক আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সূত্রাপুরের দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। দর্শকদের কাছে তিনি এটিএম শামসুজ্জামান হিসেবে পরিচিত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশের একুশে পদকে লাভ করেন। এছাড়াও ৬ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।

মিতা হক (১৯৬২ - ১১ এপ্রিল ২০২১)

রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল সকাল ৬টা ২০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মিতা হক করোনায় আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর চার দিন আগে করোনা নেগেটিভ হয়েছিলেন।

তিনি বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী। সঙ্গীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক এবং ২০২০ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

সারাহ বেগম কবরী (১৯ জুলাই ১৯৫০ - ১৭ এপ্রিল ২০২১)

অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র পরিচালক ও রাজনীতিবিদ সারাহ বেগম কবরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল রাত ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

তিনি বিংশ শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকের বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের নায়িকা ছিলেন। কবরীর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে নাট্যধর্মী সুতরাং (১৯৬৪) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। তিনি ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তিনি একটি অভিনয় ও আজীবন সম্মাননাসহ দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ছয়টি বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ (২৪ মে ১৯৪০ - ১৬ মার্চ ২০২১)

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ২০২১ সালের ১৬ই মার্চ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যে ৬.৩০ মিনিট নাগাদ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ঐ বছর ২ ফেব্রুয়ারি সিওপিডি রোগে আক্রান্ত হন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

মওদুদ আহমদ ছিলেন একজন আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিএনপির ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭