ইনসাইড টক

‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের জন্য দেশে তৃতীয় ঢেউ হলে মানবিক বিপর্যয় হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/05/2021


Thumbnail

স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ) এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, আমরা যে তৃতীয় ঢেউয়ের কথা চিন্তা করছি সেটি যদি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের জন্য হয় তাহলে আমাদের দেশে একটি মানবিক বিপর্যয় হয়ে যাবে। কারণ অনেক উন্নত দেশও পারছে না এবং আমাদের রাষ্ট্রীয় যে কাঠামো আছে তাতে একটি বিপর্যয় হতে পারে। কারণ, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সাধারণ ভাইরাসের চেয়ে ৪০০ গুন বেশি শক্তিশালী এবং ৪০০ গুন বেশি সংক্রমণ হতে পারে। সুতরাং একটি ভয়াবহ অবস্থা হবে। তাই জনগণকে সচেতন হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কতটা ভয়ংকর হতে পারে বাংলাদেশের জন্য, কিভাবে তা মোকাবেলা করা যাবে এবং বাংলাদেশের বর্তমান করোনার পরিস্থিতি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য ডা. এম এ আজিজ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন

তিনি বলেন, আমাদের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের পথে। আমাদের শঙ্কা তৃতীয় ঢেউ এবং ভারতের ভ্যারিয়েন্ট। ইতিমধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে ধরা পড়েছে। সরকার দ্রুত সেটি শনাক্ত করেছে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। সীমান্ত পথ এবং স্থলবন্দরগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। আমি মনে করে যে, ভারতের সাথে এই সীমান্তবর্তী এলাকায় কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখতে হবে। কারণ বিভিন্নভাবে আমাদের সাথে ভারতের অনেক বৈধ-অবৈধ চলাচল আছে। সেটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ভারতের অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমাদের দেশের সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শক কমিটির যে স্বাস্থ্য নির্দেশনাগুলো আছে, সর্বশেষ ১৪ দফা যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন চলবে না, এটি সম্ভবও না। সেই প্রেক্ষাপটে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমাদের অফিস আদালত রাস্তা ঘাট দোকানপাট সর্বক্ষেত্রে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এবং করোনার তৃতীয় ঢেউ থেকে জনগণ কিভাবে বাঁচবে এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের বাঁচার দুটি উপায়। একটি হলো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। অন্যটি হলো, ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম। সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিচ্ছে, এই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কারণ, সরকারের নির্দেশনা মেনে চলা জনগণের নাগরিক দায়িত্ব। বিশ্বের এখনো ৭০ থেকে ৮০টি দেশে ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম শুরু হয়নি। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমে আমাদের ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম শুরু করেছে। আমাদের ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম এখনো চলমান। সাময়িক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। কারণ, আমাদের ভারতের সাথে যে ৩ কোটি ভ্যাকসিনের চুক্তি ছিল সেখানে তাদের মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ ছিল। সেই প্রেক্ষাপটে বন্ধ আছে। কিন্তু সরকার বিকল্পভাবে চীন, রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশের সাথে যোগাযোগ করছে, কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে ভ্যাকসিন আনার ব্যাপারে। চীন এবং রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের বিষয়টি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে একটি বৈশ্বিক প্রোগ্রামে বলেছেন যে, ভ্যাকসিনকে গণপন্য হিসেবে ঘোষণা করা এবং জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউ এইচ ও) এর তত্বাবধানে ভ্যাকসিন পরিচালনা করা। যে সমস্ত উৎপাদনকারী দেশ আছে তারা যাদের উৎপাদন করার মত ক্ষমতা আছে তাদের সহযোগিতা করা। মেধাস্বত্ব প্রত্যাহার করে এই গণমুখী ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা আছে, আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। সুতরাং ভ্যাক্সিনেশন নিয়ে আমাদের দ্বিধা দ্বন্দ্বের কারণ নেই। এই দুটির মাধ্যমে আমরা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট থেকে মুক্ত থাকতে পারবো।

সম্প্রতি ভারতফেরত যারা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত তারা কোয়ারেন্টিন থেকে পালিয়ে যাচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে না চাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। সরকারের নির্দেশনাও মানতে চায়না। সেই ক্ষেত্রে যারা হাসপাতালগুলোর দায়িত্বে আছে তাদের কঠোর নজরদারি করতে হবে, সীমান্ত এলাকাগুলোতে কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে। প্রয়োজনে আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭