ইনসাইড থট

প্রধানমন্ত্রীকে গণমাধ্যমের প্রতিপক্ষ করছে কারা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/05/2021


Thumbnail

১৯৯৪ সাল। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং জাতীয় সংসদে বিরোধি দলের নেতা শেখ হাসিনা উত্তর বঙ্গ সফরে যাবেন। রংপুর, লালমনিরহাট, তিন বিঘা করিডোর। আওয়ামী লীগ সভাপতির সফর মানেই ক্লান্তিহীন উদ্দাম। শেখ হাসিনা ক্লান্ত হন না। তাই সফর সঙ্গী হিসেবে বেছে বেছে তাদেরই নেয়া হয়, যারা ছুটতে পারে। মৃনালদা (এখন মুন্সীগঞ্জের এমপি) আগের দিন জানিয়ে দিলেন, যেতে হবে। সফর সঙ্গী প্রয়াত মোনাজাত উদ্দিন (চারণ সাংবাদিক), প্রণব সাহা (এখন ডিবিসির সম্পাদক) ওবায়েদ (এখন জনকণ্ঠের উপ-সম্পাদক) সহ আরো কয়েকজন। লালমনিরহাটে যখন আমরা পৌছলাম তখন, সন্ধ্যা ডানা মেলছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতার বাসায় তখন মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন। আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ভেতরে নেয়া হলো। আমরা সাংবাদিকরা বাইরে টেবিলে খেতে বসেছি। এসময় শেখ হাসিনা এসে দাঁড়ালেন। আওয়ামী লীগ নেতাকে বললেন ‘ওরা এখানে কেন? ওরা আমার সাথে কষ্ট করেছে, আমার সাথে এসেছে। ওরা আমার সংগে খাবে।’ ব্যাস। আমরা উঠে আপার টেবিলে চলে গেলাম। ওখানে বসা আওয়ামী লীগের নেতাদের উঠিয়ে দেয়া হলো। এটাই হলেন শেখ হাসিনা। আমাদের আপা। সাংবাদিকদের ব্যাপারে উদার। বড় আপন। সাংবাদিকদের কষ্টে, বিপদে সবার আগে যিনি হাতটি বাড়ান তার নাম শেখ হাসিনা। প্রেসক্লাবে টাকা লাগবে, শেখ হাসিনা দেবেন। সাংবাদিক কল্যাণ তহবিল, আপা টাকা লাগবে। কোন সাংবাদিক অসুস্থ, আপা জানলেই হলো, সাথে সাথে সাহায্য চলে যাবে। এইতো সেদিন করোনার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ, বেকার সাংবাদিকদের ১০ কোটি টাকা দিলেন। সাংবাদিকদের বিপদে সবচেয়ে বড় বন্ধু। বড় অভিভাবক। কে আওয়ামী লীগ পন্থী, কে বিএনপি পন্থী তা আপা দেখেন না। সাংবাদিকদের যেকোন সংকটে তিনি সবার আগে এগিয়ে আসেন।

৯৪ সালেরই ঘটনা। আমি বিএনপির ১০ মন্ত্রীর দুর্নীতি নিয়ে এক রিপোর্ট করলাম। তখন দুর্নীতি দমন ব্যুরো ছিলো। সেই ব্যুরোর এক কর্মকর্তা আমাকে ফাইল দেখালেন। বললেন, ‘আপনি রিপোর্ট করেন, আমি কাগজ গুলো ফটোকপি করে আপনাকে দেবো।’ আমি রিপোর্ট করলাম। তখন সংসদ চলছে। তোফায়েল আহমেদ রিপোর্ট নিয়ে সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ঝড় তুললেন। বিএনপি নেতারা পারলে আমাকে খুন করে। দুর্নীতি দমন ব্যুরোর আমার সোর্স জানালেন, বিপদে আছি এখন কাগজ দিতে পারছি না।’

আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। বন্ধু নঈম নিজাম (এখন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক) জিজ্ঞেস করলো, কাগজপত্র আছে। আমি বললাম ‘নেই’। নঈম নিজাম আপার সাথে কথা বললেন। পরদিন নঈম নিজাম বললো ‘বিকেলে সংসদ ভবনের অফিসে আপা ডেকেছে।’ আসরের বিরতিতে গেলাম শেখ হাসিনার রুমে। আপা মুড়ি এগিয়ে দিলেন। বললেন ‘যা করেছিস ঠিক করেছিস। কেউ কাগজপত্র চাইলে আমার নাম বলবি।’ এই হলেন শেখ হাসিনা।

১৯৯৬ সাল। বিএনপি সরকারের শেষ দিক। তীব্র আন্দোলন চলছে। আপা ( শেখ হাসিনা) জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করে, ২৯ মিন্টু রোডের সরকারী বাসা ছেড়েছেন। উঠেছেন সুধা সদনে। আমি আজকের আগজের চীফ রিপোর্টার। ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের তামাশার আয়োজন চলছে। এক রাতে বাহাউদ্দিন নাছিম ফোন করলেন। ‘আপা ডেকেছে।’ আজকের কাগজ অফিস থেকে সুধা সদন সামান্য দূরত্বে। ছুটে গেলাম। আপা একটা চিরকুট দিয়ে বললেন ‘এই নিউজ করলে তোর কিন্তু জেল হতে পারে।’ আমি বললাম ‘আপা, আপনি আছেন, আমার চিন্তা নাই।’ অফিসে এসে শাহেদ ভাইকে সব জানালাম। শাহেদ ভাই রাতে আজকের কাগজ অফিসে রিপোর্টারদের বসার জায়গায় বসতেন। অসাধারণ আড্ডায় আমাদের সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতেন। সব শুনে বললেন ‘গো এহেড।’ পরদিন নিউজটা ছাপা হলে, হৈ চৈ পরে গেল। আমি গ্রেপ্তার হলাম। একমাস কারাগারে ছিলাম। প্রতিটা দিন আপা আমার বাসায় লোক পাঠিয়েছেন। কখনও খাবার দিয়ে, কখনও টাকা দিয়ে। এটাই হলেন শেখ হাসিনা। সব সাংবাদিকদের ‘আপা’। কাল যখন রেজিনাকে হেনস্থা করা দেখলাম, যখন ঝাপসা স্মৃতি গুলো মুছলাম। যে মানুষটি সবচেয়ে গণমাধ্যম বান্ধব, যার হাত দিয়ে এতো পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন। যিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছেন জন্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই বিপ্লব, তাকে কি গণমাধ্যমের প্রতিপক্ষ বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে। যে নেতা নারীর মর্যাদা ও সম্মানের জন্য সারাজীবন কাজ করছেন, তার সরকারের আমলে একজন নারী সাংবাদিকের এই অপমান। ‘প্রথম আলো’র সংগে সম্পাদকীয় নীতিতে আমাদের যোজন যোজন দূরত্ব। কিন্তু সাংবাদিক রেজিনা আমার বোন, আমার সহকর্মী। আমি এবং আমরা তার পাশে। যারা গতকাল (সোমবার) এই কান্ড ঘটিয়েছে, তারা এই সরকারের শত্রু, গণদুশমন। এরা শেখ হাসিনাকে গণমাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭