ইনসাইড থট

মানহীন মাননীয়


প্রকাশ: 19/05/2021


Thumbnail

এইতো গতকালকের ঘটনা। বর্তমানে দেশের আলোচিত এবং দুর্নীতির শীর্ষে থাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় স্যার সাংবাদিকদের এক তথ্য দিলেন। তথ্যটি হচ্ছে তার মন্ত্রণালয়ে এমন এমন সব রাষ্ট্রীয় গোপনীয় নথি আছে যা বাইরে প্রকাশ পেলে রাশিয়া, চীন সহ শক্তিধর পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশের সাথে মন কালাকালি হয়ে যাবে বাংলাদেশের। 

চলুন টাইম মেশিনের ছোট্ট সিটে বসিয়ে আপনাকে একটু পিছনে ঘুরিয়ে আনি। দেশে তখন পদ্মা সেতুর নির্মানের প্রস্তুতি চলছে। সবকিছু যখন মোটামুটি ঠিক তখন বিশ্বব্যাংক একটি তথ্য নিয়ে আসলো, জনৈক এক মন্ত্রণালয় নাকি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। এই কারন দেখিয়ে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ালো বিশ্বব্যাংক। যদিও ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীর পদ থেকে হারিয়ে যাওয়া এবং নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মান গোটা বিশ্ববাসী দেখেছে অবাক বিস্ময়ে। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় সম্ভবত তার সচিবের একান্ত সচিবের রুমটি সহ গোটা স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়কেই সংরক্ষিত এলাকা মনে করেন, যেখানে কারো প্রবেশ নিষেধ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান মিয়ার একান্ত সচিবের কক্ষে সম্ভবত ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্লু প্রিন্ট লুকিয়ে রেখেছিলেন, এটা ফাঁস হয়ে গেলে দেশের সমস্যা ছিলো অথবা লুকানো ছিলো কোভিড ভ্যাকসিন দুর্নীতির এমন সব নথি যা ফাঁস হয়ে গেলে বাংলাদেশের সাথে সম্ভবত দুর্নীতির দায়ে সম্পর্ক ছিন্ন হতো ওই দেশগুলোর। প্রথমটা হতেই পারে না, কিন্তু দ্বিতীয় সন্দেহের মিথ্যার গ্যারান্টি খোদ মাননীয় নিজেই দিতে পারবেন না (কারন তিনি আসলেই জানেন না)।

এবার বর্তমানে আসা যাক। করোনা মহামারী চলমান থাকার এই সময়টিতে দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার আশ্রয়স্থল ছিলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে এ দেশের মানুষ আশা করতেই পারে যে এই মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবেলায় তাদের ট্যাক্সের টাকা যেহেতু কাজে লাগাচ্ছে তাই নির্ভার হওয়াই যায়। কিন্তু এ দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপরে নিজেদের জীবন বর্গা রাখা যেন শেয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেবার মতোন।

প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আমলাদের নেতৃত্বে শুরু হলো লুটপাট আর দুর্নীতির মহোৎসব। মহামারী কি আর বছর বছর আসে? এই তো সুযোগ! মাস্ক কেলেঙ্কারি, ভেন্টিলেটর স্থাপনে কেলেঙ্কারি, পিপিপি (এটা পিপিই হবে) সমস্যা, হাসপাতালের পর্দা ক্রয়, জরুরী কেনাকাটায় দুর্নীতি, ড্রাইভারের হাজার কোটি টাকা, সচিবের দুর্নীতি সহ এমন কোনো খাত নেই যেখান থেকে এই মন্ত্রণালয়ের মাননীয়গন টাকা সরাননি। সিন্ডিকেটের সাহেদ, সাবরিনা সহ আরো কয়েকজন বেরিয়ে আসতে শুরু করলে দায়িত্বে থাকা মাননীয় মন্ত্রীমহোদয় স্যার জানালের তিনি কিছু জানেন না। যদিও পরে সেই সাহেদ সাহেবের সাথেই এই ভাইরাল যুগে মাননীয়ের ছবি ভাইরাল হতে দেখেছে দেশবাসী। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই বিশার অংকের দুর্নীতিগুলো তারা তাদের অর্জন হিসাবে ধরবেন কিনা সেটি একান্তই মহামান্য মাননীয়দের ব্যাপার।

এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় এক আজব ……(শব্দ সংকটে ভুগছি)। গতবছর করোনা চলাকালীন সময়ে অনেকবারই তিনি তাকে রেখে, তাকে না জানিয়ে, তিনি বোঝেন না এমন ধরণের কথা বলেছেন। আচ্ছা মন্ত্রী মহোদয় হয়তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী শব্দের ভুল ব্যাখ্যা জানেন অথবা তাকে কেউ ভুলভাল বুঝিয়েছেন অথবা এটাও হতে পারে যে “ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না”। একটি বিষয় বলুন তো, গণতান্ত্রিক একটি দেশের একটি গুরুত্বপুর্ণ মন্ত্রণালয় যেখানে দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্য নিয়ে সকল আয়োজন, সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় এতোটাই ……… ( শব্দ লাইনচ্যুত, যা ইচ্ছা পাঠক বসিয়ে নিতে পারেন)। আর তিনি যদি তার দায়িত্ব ঠিকঠাক না চালাতেই পারেন অথবা তার দ্বারা যদি সম্ভব না হয় তাহলে প্লিজ মাননীয়! আপনি যথেষ্ট করেছেন। এই বঙ্গদেশ আপনাকে সারাজীবন মনে রাখবে। কিন্তু এমন যদি হয় কারো ভয়ে, কারো হুমকিতে, কোনো সিন্ডিকেটের চক্করে পড়ে এভাবে গোটা দেশের মানুষের এবং স্বাস্থ্যখাত হাতের তালুতে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন! এখানে কথা অবশ্যই আছে মাননীয়। একটি স্বাধীন দেশের জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের চাইতে ক্ষমতাবান কেউ হবার কথা না, সেই নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি আবার মন্ত্রী হন তবে তো সুপার পাওয়ার হাতে পাবার কথা। এরই সাথে যুক্ত করছি প্রধানমন্ত্রী যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন, তার মন্ত্রীপরিষদের এতো পাওয়ারফুল মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর তো এমন হাল হবার কথা না। যদি সমস্যা খুঁজে না পান মহোদয় তবে এখানে আপনার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। 

১০০ সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটার যে শতভাগ সেরা কোচ হবেন এমন তো কথা নেই। মানলাম আপনি শতভাগ ধোয়া তুলসীপাতা, আপনি দুর্নীতি করেন না, দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকা আপনি ওড়ান না। তাহলে আপনার মন্ত্রণালয়ে এতো এতো দুর্নীতি কিভাবে। তাহলে কি সবাই আপনার শত্রু? যারা শত্রুতা করে আপনাকে আর আপনার মন্ত্রণালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে চাচ্ছে!  এরা কারা? দয়া করে বলবেন মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, দেশবাসী জানতে চায়। যদি উত্তর না থাকে তাহলে দয়া করে থামুন (সরাসরি পদত্যাগ চাই একথা লিখতে পারলাম না, তাই থামুন বলেই থামলাম)। 

মাননীয়! আপনার অধীনস্থ প্রজাতন্ত্রের চাকর আমলারা কি আপনার কথা শোনেন না, নাকি তাদের কথা শুনতেই আপনার সমস্যা। আপনি কাল বললেন আপনার অচিরিক্ত সচিব এক আমলাকে নাকি সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম খামচি মেরেছেন (একটু হেসে নিন পাঠক)!!!

তাহলে খামচি শব্দের সাথে আপনি বেশ পরিচিত ধরে নিচ্ছি। তবে দেশবাসী হয়তো খামচাখামচির ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যেই দেখে ফেলেছেন। আপনার মন্ত্রণালয়ে প্রজাতন্ত্রের এক কর্মচারী আমলা একজন স্বনামধন্য সাংবাদিকের উপরে শারীরিকভাবে কিভাবে চড়াও হয়েছেন সেই ফুটেজ ভাইরাল মাননীয়। হ্যা খামচাখামচি সম্ভবত হয় আপনার মন্ত্রণালয়ে কিন্তু সেটা অবশ্যই টাকার বাণ্ডিলের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে আপনার আমলাদের মধ্যকার খামচাখামচি। আর এই খবর প্রকাশ করলেই একজন প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিক আপনাদের কাছে হয়ে যান জনৈক রোজিনা ইসলাম। বাহ মাননীয় বাহ।

মাননীয় আপনাকে দেখলে বাংলা সিনেমারে আনোয়ার হোসেনের কথা খুব মনে পড়ে। আপনার প্রতিটা কথা ইমোশনাল, সাংবাদিকদের দেওয়া আপনার প্রতিটি উত্তর চোখের কোনে জল জমায়, আপনার প্রতিটা সংবাদসম্মেলন বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উত্তরের মতো মুখস্ত করা। ট্রাস্ট মি মাননীয় আপনাকে দেখলে এতোটাই অসহায় মনে হয়। মাঝে মাঝে আপনার কথাগুলো শুনে মনে হয় অফিস আপনি করেননা ঠিক কিন্তু মাঝে মাঝে অফিসে গেলে শুধু আমলাদের কাছে ক্লাস করতেই যান, যারা আপনাকে বসিয়ে বসিয়ে কিছু কথা মুখস্ত করিয়ে দেন আর আপনি যে কোনো প্রশ্নের উত্তরে সেগুলোই বলেন। আর সিলেবাসের বাইরের প্রশ্ন আসলেই আপনার উত্তর হয়ে যায় আমি কিছু জানি না, আমি কিছু বুঝিনা, আমাকে জানায়নি। আপনার জন্য সার্কাস রিংয়ের বাইরে বসা হাজারো মানুষের পক্ষ থেকে করতালি রইলো। আপনি পারেন ভাই। মনোবলের দিক থেকে আপনি সেরা, কারন দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১৬ কোটি মানুষ আপনার পদত্যাগ চাইলেও আপনি পদ্মা সেতুর পিলারের মতো দৃঢ় মনোবল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন, আর আপনার মতো আপনি দুর্নীতি চালিয়ে যাবেন। তাই এখানে আবারো পদত্যাগ করুন লিখার সাহস না দেখিয়ে লিখলাম প্লিজ এবার থামুন মাননীয়।


মাননীয় আপনি নাহয় আইনমন্ত্রীকে ধরে একটু অনুরোধ করে নতুন এক আইন করিয়ে নিতে পারেন। আইনটা এমন হতে পারে যে আপনার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয় একশো বার হাজারবার দুর্নীতি করবে, আপনার আমলারা বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করবে, আপনার আমলারা কাজ না করিয়েই ভূতুরে বিল উঠিয়ে নিবে কিন্তু এসব কিছুই আপনাদের গায়ে লাগবে না। কাক যেমন চোখ বুজলে ভাবে কেউ কিছুই দেখছে না, এই আইনের ফলে জনগণ বা অন্য কেউ কিছুই দেখতে পাবে না অথবা না দেখার ভান করে থাকতে হবে। কিন্তু এই আইনের বাইরে গিয়ে আপনাদের দুর্নীতি দেখে ফেললে, বলে ফেললে, প্রকাশ করে ফেললেই তার জেলে যাওয়া বাধ্যতামূলক। সেইসাথে প্রাণনাশের হুমকি আর খামচি ফ্রিতে দিয়ে দেবেন আপনার আমলারা। যদিও এটি আপনাকে একটি সাইন্স ফিকশন ড্রীমের কন্সেপ্ট ফ্রি তে দিয়ে দিলাম। কোনো এক টেনশনবিহীন রাতে হালকা ……(ছি, মাননীয়কে কি এখব লিখা যায়) শুয়ে পড়লেই এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলেও হতে পারে। ঠিক ওই সময়টাতে আপনার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপরে ভরসা করে থাকা করোনায় কাতর কোনো এক রোগী হয়তো আপনার মান নিয়ে ভাববেন। মনে মনে তিনিও হয়তো কষ্ট আর আক্ষেপের সাথে স্বপ্ন দেখবেন একদিন কোনো এক ভয়ডরহীন সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় প্রথম কলামে বড় বড় করে ছাপা হয়েছে “অবশেষে মানহীন মাননীয়র পদত্যাগ”।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭