ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইউরোপের নেতৃত্বে পরিবর্তন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/10/2017


Thumbnail

ইউরোপের নেতৃত্বে কে? চলতি বছরের শুরুতে এর উত্তর ছিল নিশ্চিত একজনই, জার্মানির চ্যান্সেলার অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। চতুর্থবারের মতো নির্বাচনের জয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন তিনি। যেখানে যুক্তরাজ্য দৃশ্যপটের বাইরে। নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ছিল ইতালি। আর ফ্রান্সের ক্ষমতায় আসার আশঙ্কা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ডানপন্থী ম্যারি লা পেনের।

গত সপ্তাহে একই প্রশ্নের উত্তরটি হয় ভিন্ন। সদ্য সমাপ্ত জার্মানির নির্বাচনে মেরকেল জিতেছেন ঠিকই কিন্তু হারিয়েছেন তাঁর দাপট। অনেক সিট চলে গেছে বিরোধীদের হাতে। একই সঙ্গে দেশটিতে মাথাচাঁড়া দিয়েছে নব্য নাৎসীবাদ। তবে রাইন নদীর দক্ষিণ অংশের চিত্র ভিন্ন। ফ্রান্সের নেতৃত্বে ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। প্রায় দুষ্পরিবর্তনীয় একটি দেশের নেতৃত্ব নিয়ে এখন ইউরোপ রক্ষার ব্রত পালনে উদ্যোগী তিনি। যেকোনো মূল্যে ইউরোপের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে নেতৃত্বের পাদপ্রদীপে এখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। আর প্রদীপ থেকে দূরে কিছুটা অন্ধকারের দিকে অ্যাঙ্গেলা মেরকেল।

গত সপ্তাহের ইউরোপে নেতাদের ভাষণে অনেক চমকপ্রদ বিষয়ই উঠে এসেছে, যার মধ্যে আছে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সামরিক বাজেট, ইউরোজোনকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব। একই সঙ্গে ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী উদ্ভাবনের পথটি আবার মসৃন করার পক্ষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ। ম্যাখোঁ কার্বন নির্গমনের ট্যাক্স বাড়ানো, নিবন্ধনের বাইরের উৎস থেকে আয় করা ইউরোপের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাড়তি করের প্রস্তাব করেছেন।  

দেশের ও মানুষের জন্য ম্যাখোঁর পরিকল্পন অতি স্পষ্ট। তিনি যেকোনো ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পক্ষে। এজন্যই জার্মান প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একিভূত হয়েছে ফ্রান্সের দ্রুত গতির রেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আলসটম। আবার ম্যাখোঁ নতুন নতুন উদ্ভাবনের পক্ষে, যা কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার জন্য দায়ী বলে মনে করেন অনেকে।

আবার ইউরোপের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করার পক্ষে ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। একারণেই ইউরোজোনের অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করতে উদ্যোগের কথা বলেন তিনি। আর ইউরোজোন শক্তিশালী হলে পরবর্তী কোনো মন্দায় ইউরোপের দেশগুলোর অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কমবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে ইউরোপের রাজনীতে বড় প্রভাব রাখার আগে দেশেই নিজের সক্ষমতার বড় প্রমাণ দিতে হবে ইমানুয়েল ম্যাখোঁকে। নিজ দেশে সফলতার প্রমাণ রাখতে পারলেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে জার্মান চ্যান্সেলরের জায়গাটি তাঁর হবে।

ইউরোপের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিজ দেশে নিজের শুরুটা কিছুটা খারাপই বলতে হবে ম্যাখোঁর। কারণ মেকআপের বিল থেকে কিছু নগন্য বিষয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন তিনি। তবে এগুলো ছাড়া অন্য বিষয়ে নিভৃতেই অনেকটা এগিয়েছেন ম্যাখোঁ। এই গ্রীষ্মে ফরাসিরা যখন সমুদ্রতটে অবকাশে তখন ম্যাখোঁ ব্যস্ত ছিলেন শ্রম আইন নিয়ে আলোচনায়। বড় কোনো প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছাড়াই গত ২২ সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের নতুন শ্রম আইনের প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন তিনি। ৫৯ শতাংশ ফরাশিই ম্যাখোঁর এই শ্রম আইনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

শ্রম আইন সংশোধন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানি ও স্পেনের আগের অভিজ্ঞতা বলে, শ্রম আইনের সংশোধন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। অতি অল্প দিনের মধ্যেই এই অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন ইমানুয়েল ম্যাখোঁ।

গত কয়েক বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ফ্রান্স বরাবরই ছিল জার্মানি সহ ইউরোপের নেতৃত্বস্থানীয় দেশগুলোর তুলনায় দুর্বল অবস্থানে। তবে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েলের ম্যাখোঁর শ্রম আইন সংশোধন এবং পরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পরিবর্তন পুরো দৃশ্যপটের চিত্র পাল্টে দিতে পারে। ফ্রান্সের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপের অন্যান্যদেরও নিশ্চিত করতে হবে, তিনি শুধু ফ্রান্সের উন্নয়নের মাধ্যমে ইউরোপের সঙ্গে বিভেদের দেয়াল তুলছেন না।

বিশ্লেষকদের মতে, ম্যাখোঁর ওপর আলোকপাত যেকোনো সময় সরে যেতে পারে। কারণ এখানে অনেক বিষয়ই যে সম্পৃক্ত। নিজ দেশের সংস্কার বিষয়ে জার্মানিকেও বোঝাতে হবে ম্যাখোঁর আর এর মাধ্যমেই পরিবর্তন আনতে হবে ইউরোপে। তবে এই বছর একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে ম্যাখোঁর বিপক্ষে বাজি ধরা কোনোভাবেই সঠিক নয়।

সূত্র: দি ইকোনমিস্ট

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭