ইনসাইড বাংলাদেশ

ড. ইউনূস-তারেকের যৌথ প্রযোজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/10/2017


Thumbnail

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে লবি করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর অর্থায়ন বন্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিতে বিশ্বব্যাংকের তদন্ত দলের প্রধানকে ঘুষ দিয়েছিলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। সম্প্রতি পদ্মা সেতু দুর্নীতি ষড়যন্ত্র তদন্তে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দলের নেতা লুই গ্যাব্রিয়েল মোরানো ওকাম্পোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ ফাঁস হয়ে যায়। ফাঁস হওয়া প্রায় ৪০ হাজার ইমেইল থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ফরাসি অনলাইন জার্নাল মিডিয়া পার্টের হাতে এসব তথ্য প্রমাণ রয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার। ২০০৯ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েই আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু প্রকল্পে হাত দেয়। ৩০ এপ্রিল ২০১১ তে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। এই চুক্তির সূত্র ধরে বাংলাদেশ সরকার ১৮ মে ২০১১ তে জাইকার সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২৪ মে, ২০১১ তে আইডিবির সঙ্গে ১৪০ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৬ জুন ২০১১ তে স্বাক্ষরিত হয় এডিবির সঙ্গে ৬১৫ মিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তি করে।

কিন্তু কানাডার আদালতে এসএনসি লাভালিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিপ্রায়ের অভিযোগে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ সাহার ডায়রির সূত্র ধরে ঘুষ দিয়ে কাজ পাওয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন না করার ঘোষণা দেয়। এরপর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পর শর্তসাপেক্ষে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়নে ফিরে আসে। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের তদন্ত শুরু করে। একই মাসে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্র তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। লুই গ্যাব্রিয়েল মোরানো ওকাম্পো ছিলেন ওই তদন্ত দলের প্রধান। এই পরিপ্রেক্ষিতে, ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ তে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি এফআইআর দায়ের করেন। দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ আনা হয় ৭ জনের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার করা হয় তৎকালীন যোগাযোগ  সচিব মোশারফ হোসেনকে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নামও অভিযুক্তদের তালিকায় অন্তভুক্ত করার জন্য চাপ দেয়। এসময় সরকার যোগাযোগ মন্ত্রীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে ছুটিতে পাঠান। এরপরও বিশ্বব্যাংক মন্ত্রীকে আসামি করার চাপ অব্যাহত রাখে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ অভিপ্রায় প্রত্যাহার করেন। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়।

এ বছর কানাডার আদালত পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলাটি খারিজ করে দেয়। আদালত এটাকে  ‘কাল্পনিক গাল গল্প’ বলে মন্তব্য করেন। আর সম্প্রতি  ওকাম্পোর দুর্নীতির খবর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রর সব খবরই ফাঁস করে দিয়েছে। ফাঁস হওয়া ইমেইল এবং কূটনৈতিক বার্তায় দেখা যায়,ড. মুহান্মদ ইউনূস অন্তত তিনবার লিখিত চিঠির মাধ্যমে হিলারি ক্লিনটনকে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধের জন্য বিশ্বব্যাংককে চাপ দেওয়ার অনুরোধ করেন। ড. ইউনূস লিখেছেন ’পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ হলে সরকার গ্রামীন ব্যাংক প্রশ্নে নমনীয় হবে। ইউনূসের এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে হিলারী বিশ্বব্যাংকের বিদায়ী ও নতুন প্রেসিডেন্টকে নূন্যতম অভিযোগ থাকলেও অর্থায়ন বন্ধ করার পরামর্শ দেন।

এদিকে, বিশ্বব্যাংক বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করার সঙ্গে সঙ্গে তারেক জিয়া লবিস্ট ফার্মের মাধ্যমে ওকাম্পোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হন। ফাঁস হওয়া তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারেক ওই দলকে অনুরোধ করেন যেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিতে জড়ানো হয়।

কিন্তু এব্যাপারে কোনো তথ্য না পাওয়ায়, তারেক জিয়ার এই আশা পূরন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের পর ওকাম্পো কমিটি ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয় যেখানে যোগাযোগ মন্ত্রীকে অভিযুক্ত করে। একই সঙ্গে ওই রিপোর্টে দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধের সুপারিশ করা হয়। তারেক আশা করেছিল, পদ্মা সেতু না হলেই সরকারের ভরাডুবি হবে এবং পতন হবে। কিন্তু গ্রামীন ব্যাংকে যেমন ড. ইউনূসের ফিরে আসা হয়নি, তেমনি তারেকেরও স্বপ্ন দুরাশায় পরিনত হয়। তারেক জিয়া ডাচ ব্যাংক এবিএন আমর এর একাউন্টে ওকাম্পোকে টাকা দিয়েছিলেন, সেই তথ্যও ফাঁস হওয়া নথিতে পাওয়া গেছে।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭