কালার ইনসাইড

চলচ্চিত্রে সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/10/2017


Thumbnail

শিল্পের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। দৃশ্যমান বিনোদন মাধ্যম। কিন্তু চলচ্চিত্র কি শুধুই দৃশ্যমান বিনোদন? চলচ্চিত্র কী আমাদের কখনো ভাবায়নি? কখনো কী নতুন ভাবে চিন্তা করতে শেখায়না? চলচ্চিত্র আমাদের ভাবায়, ভাবতে বাধ্য করে, ভাবতে শেখায়। বদলে দেয় জীবনযাত্রার দৃশ্যপট। কিন্তু কিভাবে?

চলচ্চিত্রের মূল অস্ত্র হচ্ছে গল্প। একটা চলচ্চিত্রের গল্পই আমাদের চিন্তাভাবনা মতাদর্শ বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে হ্যাঁ, সেটা সব সিনেমার ক্ষেত্রে নয়, বিশেষ কিছু সিনেমার ক্ষেত্রে। আর সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে বইয়ের পাতা থেকে নেয়া গল্প অথবা উপন্যাস। খেয়াল করে দেখবেন, সাহিত্য থেকে বানানো চলচ্চিত্রগুলোয় রয়েছে প্রান। প্রতিটাই কেমন যেনো হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মত! সারা বিশ্বেই সাহিত্য থেকে সিনেমা বানানোর এই ধারাটি প্রচলিত আছে।

দুই দশক আগেও বাংলায় সাহিত্য নির্ভর ছবি হতো প্রচুর। কারণ, ওই সময় প্রযোজক পরিচালকরা ছিলেন শিক্ষিত, সাহিত্য পড়া শিল্প অনুরাগী লোক। এখন যারা আসছেন তারা কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসছেন?

বাংলা চলচ্চিত্রের একাল সেকাল যদি বিবেচনা করা হয়। তাহলে সাহিত্য থেকে নির্মিত সিনেমা সবসময়ে আলোচিত ছিল। কিন্তু একটা সময়ে এসে সাহিত্য নির্ভর সিনেমার কদর কমে গেছে। পরিচালকরা গল্প নিতে ঝুকছে তামিল তেলেগুর সিনেমায়। এই ওই ছবি দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে হয় আমাদের সিনেমা। একটা সময়ে কিন্তু এমন চল ছিল না। মেইনস্ট্রিম সিনেমার গল্প সাহিত্য থেকে নেয়া হত। সেসব সিনেমা দেখতে হলে ভীড় জমে যেত। বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্র নির্মাতারা মন দেয় অর্থের দিকে। সস্তা গল্প দিয়ে দর্শক টানার যে সংস্কৃতি, সেটার দৌড় যে কতটা হয় সেটা সময়ই বলে দিবে। হলিউড কিংবা বলিউডে প্রচুর পরিমান সাহিত্য নির্ভর সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে। সেসব সিনেমা যেমর সমলোচকরদের মন কেড়ে নিচ্ছে। তেমনি ব্যবসায়িকভাবেও সফল হচ্ছে। উদাহরণ হিসাবে বর্তমান সময়ে রয়েছে অনেক চলচ্চিত্রের নাম। সেখানে আমরা কী করছি প্রতিনিয়ত? আমাদের দেশের সাহিত্য এতটা সমৃদ্ধশালী হওয়া সত্বেও আমরা প্রতিনিয়ত সিনেমার গল্প চুরিতে মাতি। একই গল্প ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দর্শকদের খাওয়াতে ব্যস্ত।

বর্তমানেও সাহিত্য নির্ভর কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু সেটা নির্মাণ পর্যন্তই ক্ষ্যান্ত। এসব ছবি বানানো হয় সাধারনত অনুদানের টাকা দিয়ে। তা টিভিতে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার আর নামমাত্র কিছু হলে মুক্তি দেয়া হয় দায়সারা ভাবে। সাহিত্য থেকে সিনেমা নির্মাণ ও তা যেন সময়ের উপযোগী হয় সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পরিচালকদের।

 

কিছু উদাহরণ:

শুধু সাহিত্য নির্ভর সিনেমা হিসেবেই নয়, বাংলাদেশের সেরা ছবির একটি তালিকা করা হলে সবার উপরে যে নামটি থাকবে, তা হচ্ছে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ২০০৭ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের সেরা ১০টি সিনেমা নিয়ে দুটি তালিকা প্রকাশ করে। একটি তালিকা হয়েছে চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মতে, আর অপরটি দর্শকদের মতে। দুটি তালিকায়ই ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সিনেমাটি প্রথম স্থান অধিকার করে।

তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমাটির পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। অদ্বৈত মল্লবর্মনের লেখা বিখ্যাত উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ -এর কাহিনী অবলম্বনে এই চলচ্চিত্রটি নির্মিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদী আর তার আশেপাশের মানুষদের, বিশেষ করে জেলেদের জীবনযাত্রা এই সিনেমার উপজীব্য বিষয়। নিঃসন্দেহে শুধু আমার নয়, যে কারো তৈরী করা তালিকার প্রথমেই থাকবে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রটি !

বাংলা চলচ্চিত্রে যখন রোমান্টিক সিনেমার স্বর্ণযুগ চলছিলো, তখনই মুক্তি পায় ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ নামে ব্যতিক্রমী একটি সিনেমা। এই ছবিটি পায় ‘আর্টফিল্ম’ এর মর্যাদা। সিনেমাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী। বিশিষ্ঠ গ্রন্থকার আবু ইসহাক -এর ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত কালজয়ী উপন্যাস সূর্য দীঘল বাড়ী অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করা হয়।

১৯৯৭ সালে দেশের প্রখ্যাত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। এতে অভিনয় করেন সুচরিতা, সোহেল রানা, অরুণা বিশ্বাস, অন্তরা, ইমরান, দোদুল ও আশিক। সিনেমার গল্পটি নেওয়া হয়েছে সেলিনা হোসেনের হাঙর নদী গ্রেনেড নামক উপন্যাস থেকে। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে। চাষী নজরুলের এই সিনেমা ঢালিউডের অন্যতম সেরা সিনেমা হিসেবে চিরকাল বিবেচিত হবে।

শ্রাবণ মেঘের দিন সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন জনপ্রিয় পরিচালক ও কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালে। তারই লেখা ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরী হয়েছে সিনেমাটি। অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, শাওন, মাহফুজ আহমেদ, আনোয়ারা, ডাঃ এজাজ সহ অনেকে। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমাটি মোট ৬টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলো।

সারেং বৌ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। গল্পটি নেওয়া হয়েছে শহীদুল্লাহ কায়সারের সারেং বৌ উপন্যাস থেকে। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৭৮ সালে।

কবি নির্মলেন্দু গুণের বহুল পঠিত একটি কবিতা ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’। জনপ্রিয় এই কবিতাকে ঘিরে রয়েছে একটি বাস্তব চিত্র। সেই চিত্রকে দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন তরুণ কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মাসুদ পথিক। কবিতাটি পড়তে পড়তে পাঠক যেমন তন্ময় হয়ে যান; ঠিক তেমনি সিনেমাটি দেখতে দেখতে দর্শকও নিশ্চয়ই তন্ময় হয়ে যাবেন। চলচ্চিত্রটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভের গৌরব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে কবি নির্মলেন্দু গুণ এবং পরিচালক মাসুদ পথিক নতুন ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম, হিন্দু পুরাণ, রাজা-বাদশাহর ইতিহাস, গল্প ও উপন্যাস অবলম্বনে অনেক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তবে কবিতা থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং চলচ্চিত্রে জাতীয় স্বীকৃতি লাভ- এই বোধহয় প্রথম।


বাংলা ইনসাইডার/ এমআরএইচ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭