ইনসাইড সাইন্স

‘ব্লু হোয়েল’ মৃত্যু ফাঁদ, গেম নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/10/2017


Thumbnail

‘ব্লু হোয়েল’- এর ফাঁদে পড়ে অত্মহত্যা করেছে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী অপূর্বা বর্মণ। গত ৫ অক্টোবর নিজের ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অপূর্বা থাকত ঢাকার সেন্ট্রাল রোডে, পরিবারের সঙ্গে। পড়ত ফার্মগেটের হলিক্রস স্কুলে। মেধাবী হিসেবে স্কুলে অপূর্বা বন্ধুদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল।

এ ঘটনায় অপূর্বার বাবা অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্মণ গণমাধ্যমকে বলেন, জেনেছি বাংলাদেশে আমার মেয়েসহ আরও ৬১ জন ব্লু হোয়েলের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে। বাংলাদেশের আইনে এই অপরাধের জন্য গেমের উদ্ভাবকের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ থাকলে আমি মামলা করব। এটি একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ।       

‘ব্লু হোয়েল’ চ্যালেঞ্জ একটি অনলাইন গেম। একজন রাশিয়ান গেমটির উদ্ভাবক। অনলাইনের মাধ্যমে খেলাটি নিয়ন্ত্রিত হয়। অনলাইনে খেলা নিয়ন্ত্রকেরা ৫০ দিনের জন্য খেলুড়েকে ৫০ ঝুঁকিপূর্ণ টাস্ক বা কাজ দেন। গেমাররা একের পর এক সেসব ধাপ সম্পন্ন করে। ধাপ সম্পন্ন করার প্রামাণ হিসেবে খেলুড়েরা নিয়ন্ত্রকদের ছবি বা ভিডিও পাঠায়। অনেক সময় অংশগ্রহনকারীরা নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সেসব পোস্ট করেন।

গেমটি আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেয়! অর্থাৎ, আত্মহত্যা করার মধ্য দিয়েই গেমার বিজয়ী হয়। এতে একবার অংশগ্রহণ করলে কোনোভাবেই কাযক্রম বন্ধ করা যায় না বলেও জানা গেছে। কেউ খেলা বন্ধ করলে নিয়ন্ত্রকেরা তাঁকে অনবরত মৃত্যুর ভয় দেখান, এমন অভিযোগও আছে। জানা গেছে, ব্লু হোয়েল গেম ভারতে কেড়ে নিয়েছে ১৩০ প্রাণ। আর রাশিয়াতে এর শিকার হয়ে ১৮১ জন আত্মহত্যা করেছে।

২০১৩ সালে রাশিয়ায় প্রথম এ গেম চালু হয়। এটি আলোচনায় আসে ২০১৬ সালে। শুরুতে একজন রুশ সাংবাদিক ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের কারণে ১৬ জন কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যার তথ্য দেন। তখনই এটা আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর বিভিন্ন অনুসন্ধানে রাশিয়া ছাড়া আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চীন, পাকিস্তান, ইতালিস সহ আরও প্রায় ১৪টি দেশে বিভিন্ন নামে অনেক দিন থেকে ব্যাপক হারে ‘ব্লু হোয়েল’ গেম চর্চার প্রমাণ মিলেছে।  

‘ব্লু হোয়েল’- এর আগ্রাসন সম্পর্কে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশনের স্যান অ্যান্টানিও অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অ্যাপ্লিকেশনের যারপরনাই ব্যবহার প্রতিদিনই শিশু-কিশোদের নানা বিপদের মুখোমুখি করছে। অনলাইনের এসব ঝুঁকি থেকে ছেলেমেয়েদের বঁচাতে বাবা-মায়েদের সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি পরিমিত ইন্টারনেট ব্যবহার ও অ্যাকটিভিটির ওপর নজর রাখার পরামর্শও দেন তিনি।    

এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুজন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ব্লু হোয়েল গেম নয়, একটি অপরাধ চক্র। এটা কারিগরি উপায়ে বন্ধ করার সুযোগ নেই। সামাজিক সচেতনতা বাড়িয়ে এটার চর্চা ঠেকাতে হবে। যারা মানসিকভাবে আত্নহত্যা প্রবণ তারা যেন এ গেম না খলে সে বিষয়ে পরিচিত সকলকেই সচেতন থাকতে হবে।

রাশিয়ার ফিলিপ বুদেইকিন ‘ব্লু হোয়েল’- এর প্রধান সংগঠক। চলতি বছরের মে মাসে ফিলিপ পুলিশের হাতে আটক হন। ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার শেষ ধাপে পৌঁছে গেমারদের আত্নহত্যা করার বিষটি ফিলিপ ফিলিপ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যারা সামান্য একটি গেমের প্রতি প্রলুব্ধ হয়ে আত্মহত্যা করছে, পৃথিবীতে তাঁরা মূল্যহীন! ব্রিটিশ ব্রডকাস্ট কাউন্সিল (বিবিসি) প্রকাশিত তথ্য বলছে, রাশিয়ান কিশোরদের আত্নহত্য প্রবণতা রয়েছে, সেটাকেই উসকে দিচ্ছে ‘ব্লু হোয়েল’।

 
বাংলা ইনসাইডার/আরজে/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭