ইনসাইড থট

আসুন নিপীড়কদের সামাজিকভাবে বয়কট করি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/10/2017


Thumbnail

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো আমাদের দেশেও নারী নিপীড়ন ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। চলন্ত বাস, স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্র, থানা, এমনকি অত্মীয়র বাড়িও নারীর জন্য নিরাপদ নয়। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ একবিংশ শতাব্দিতে এসে নিপীড়কদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। প্রিয় স্বদেশ কি তাহলে নারীর বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে?

বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিপীড়নকে উস্কে দিচ্ছে। থানার পরিবেশ নারীবান্ধব না হওয়া, পুলিশ-ডাক্তার-আইনজীবীদের নিপীড়িত নারীর সঙ্গে মানবিক আচরণ না করা, সময় সাপেক্ষ আইনি পদক্ষেপ, ঘনিষ্ট আত্মীদের লজ্জায় মুখ লুকিয়ে থাকায় নিপীড়িতকে কোণঠাসা করে ফেলে। স্বল্পশিক্ষিত নিপীড়িত নারী ভাবেন বিচার পাবেন কি? সমাজের এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যস্থতার প্রলোভন আর কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হবার ভয়; তখন নিপীড়িতা বিচারহীনতাকে নিয়তি ভাবতে শুরু করে। বার বার মনের গভীরে একটা ভাবনার জন্ম হয়, আমরা গরীব; গরীবের বিচার আল্লাহ দেবেন। আর, এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সংশিষ্ট অঙ্গগুলোর ভূমিকা নীরব থাকে। সঠিক পদক্ষেপের অভাবে নিপীড়িতা বিচার বঞ্চিতই রয়ে যায়। সমাজের অসংখ্য নিপীড়নের ঘটনা ধামাচাপা পড়েছে, লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই মুখ খোলেনি, খুললেও মিডিয়ায় আসেনি। রাষ্ট্র মানবিকভাবে নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ায়নি। এই বিচারহীনতার পেছনে সমাজপতিদের প্রভাব থাকে যথেষ্ঠ। একজন নিপীড়ক মরিয়া হয়ে ওঠে যে কোনো মূল্যে নিজেকে বাঁচানোর জন্য। একবার কোনোমতে বেঁচে যাবার মানে হলো নতুন নিপীড়নের প্রস্তুতি। আর, এই বিচারহীনতা দেখে উৎসাহিত হয় অন্যরা। নরপশুরা পারিবারিক শত্রুতার জের মেটাতে অনেক ক্ষেত্রেই নারীনিপীড়নকেই বেছে নেয়।

যারা নিপীড়ন করছে তারা অবশ্যই মানসিক বিকারগ্রস্ত, হতাশাযুক্ত; অনেক ক্ষেত্রেই নেশায় আসক্ত। তারা কতোটা পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ তা’ নিয়েও সংশয় আছে। সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, নেশায় আসক্ত, হতাশাগ্রস্ত একজন লোভী পুরুষের পক্ষেই নৃশংসভাবে নিপীড়ন করা সম্ভব। নিপীড়ক নারীকে সম্মান করেনা, মানুষকে মানুষ ভাবেনা; মানবীয় গুণাবলী তাদের মধ্যে অনুপস্থিত।

কাছের মানুষ দ্বারা নারী-কন্যা শিশুরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, তাই আপাততঃ নারী-শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভাবাটা বেশি জরুরি। বাবা-মা’র অনুপস্থতিতে শিশুদের ডে-কেয়ার সেন্টারে রাখা যেতে পারে। সচেতন-সতর্ক থেকে, আইনের আশ্রয় গ্রহণ করে, নিপীড়কদের সামাজিকভাবে বয়কট করে নিপীড়ক প্রতিকার করা যেতে পারে। কিন্তু, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে।

আমাদের দেশে নিপীড়ন সংক্রান্ত প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। শুধু বিশেষ ট্রাইবুনালে দ্রুত বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করে কখনোই এর সমাধান বয়ে নিয়ে আসতে পারবে না। এই ব্যাধিকে প্রতিরোধ করতে হবে। মূলত: সচেতনতা-প্রতিবাদ, পারিবারিক-সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়া, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, নারীর প্রতি সবার সম্মান বৃদ্ধিই পারে এই প্রবণতা রোধ করতে। নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। এই আন্দোলনে পরিবারের-সমাজের ছোট-বড় সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে। নারীদের চলাফেরার সময় আরও সতর্ক হতে হবে, সচেতন হতে হবে তাদের অধিকার সম্পর্কে। জানতে হবে নিপীড়নের সম্পর্কিত বিধানগুলো। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট অঙ্গগুলোর ভূমিকা আরও কার্যকর করতে হবে, নিপীড়তের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে, থানা-বিচারালয়-হাসপাতাল নারীবান্ধব পরিবেশ হওয়া বাঞ্ছনীয়। সাংবাদিকদের নিপীড়নের সংবাদ পরিবেশনের সময় অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং সহনশীলতা ও কৌশলের পরিচয় দিতে হবে; যা অবশ্যই নিপীড়নকে নিরুৎসাহিত করে।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কয়েকটি টোল ফ্রি হেল্প লাইন (১০৯, ৯৯৯, ১০৯৮) কাজ করে যাচ্ছে; এইগুলো সম্পর্কে জানতে হবে, জানাতে হবে সবাইকে।

কোন দেশের নারী নিপীড়ক বেড়ে যাওয়া তার দুর্বল আইন ব্যবস্থা ও সামাজিক অবক্ষয়কেই ইঙ্গিত করে। আসুন আমরা নিপীড়কদের সামাজিকভাবে বয়কট করি এবং দেশের সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারী ও শিশু নিপীড়নের মতো গর্হিত কাজকে সমাজ থেকে সমূলে উৎপাটন করি। প্রতিজ্ঞা করি আমরা আমাদের আর কোনো বোনকে নিপীড়িত হতে দেব না।


ফাত্তাহ তানভীর মো. ফয়সাল রানা (অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এ কর্মরত)

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭