বিয়ে নিয়ে কেন লুকোচুরি?

লোকচক্ষুর আড়ালে তারকাদের প্রেমের খবর তো ভুড়ি ভুড়ি, কিন্তু বিয়ে? এমন অনেক তারকা আছেন যাঁরা নিজ ইচ্ছেতে বিয়ের খবর প্রকাশ করেননি। কোন না কোনোভাবে ফাঁস হয়ে গেলে মিডিয়া তোলপাড় হয়েছে। তারকাদের বিয়ে লুকিয়ে রাখার এমন প্রবনতা কেন? বিয়ে লুকিয়ে রাখা বা গোপন রাখার চলতি রীতিটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহ বিয়ে করেছিলেন। সেটা সবাই জানত, কিন্তু তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। এমনকি মৌসুমী এবং ওমর সানির বিয়েও ক্যারিয়ারে কোনো বিরুপ প্রভাব ফেলেনি। এ তালিকায় আরও আছেন প্রয়াত রাজ্জাক, সোহেল রানা, ফারুক, বুলবুল আহমেদ, শাবানা,জসিম,  সহ আরও অনেকে। বলিউড তারকাদের লক্ষ করলেও চলতি রীতিটি আরও বেশি উপলব্ধি করা যায়। শাহরুখ খান, আমির খান, অক্ষয় কুমারসহ অনেক তারকাই বিবাহিত। কিন্তু তারপরও অভিনেতা হিসেবে তাদের ক্যারিয়ার তুঙ্গে। মহানায়ক উত্তম কুমার যখন কেরানির চাকরি করেছেন, তখনি বিয়ে করেছেন। কিন্তু ক্যারিয়ারে তো কখনো তার প্রভাব ফেলতে পারেনি।

কেন এই গোপনীয়তা?

মিডিয়ায় একটি কথা প্রচলিত আছে বিবাহিতদের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। আর এই ধারণা শোবিজে কাজ শুরুর আগেই কোনো এক শ্রেণি তাঁদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়। এটা যেন একটি চল হয়ে গেছে।

কয়েকটি উদাহরণ:

শাকিব খান- অপু বিশ্বাস:

যদিও খবরটি কারও অজানা নয়। ইতোমধ্যেই সবাই জেনে গেছে তাদের খবর। এ জুটি রেকর্ড পরিমাণ বিয়ের নয় বছর পর তাঁদের খবর মিডিয়াতে আনে। তাও কোন এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত্রে। অবাক হয়ে তাদের ভক্তরা জানে তাদের ছয় মাস বয়সী ফুটফুটে একটি বাচ্চাও আছে। যদিও শাকিব- অপুর মনোমালিন্য চলছে। কবে মান- অভিমানের খেলা শেষ হয় সেটা সময়ই বলে দিবে।

ইমন

আরেক চিত্রনায়ক ইমনও কম যায় না। বিয়ের চার বছর পর তাদের বিয়ের খবর প্রকাশ পায়। ততদিনে স্ত্রী আয়শা ইসলামের গর্ভে জন্ম হয়েছে তার দুই সন্তান সামিন ও শায়ান। সম্পর্কটা প্রেমেরই ছিল, তবে বিয়েটা হয় পারিবারিক আয়োজনে। ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করেই বিয়ের কথা লুকিয়েছিলেন বলে জানা যায়।

মৌসুমী- ওমর সানী

প্রেম করেই এ দম্পত্তি বিয়ে করেছিলেন। পত্রিকায় হারহামেশাই তাদের বিয়ের খবর আসতো। এমনকি বিয়ের খবরও প্রকাশ পেয়েছে। কিন্ত ‍প্রথম দিকে স্বীকার না পেলেও খুব বেশি সময় নেননি খবরটা সবাইকে জানাতে। আচমকা পাঁচ তারকা এক হোটেল অনুষ্ঠান করে খবরটি জানান তাঁরা।

পপি

৯০ দশকের মাঝামাঝি সময় মনতাজুর রহমানের আকবরের `কুলি` চলচ্চিত্রে সুশ্রী নায়িকা হিসেবে পাওয়া গেল পপিকে। পরবর্তীতে শাকিল খানের সঙ্গে পপি অভিনয় করেন `আমার ঘর আমার বেহেশত` চলচ্চিত্রে। একসঙ্গে জুটি হয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন দুজন। কিন্তু এ জুটি প্রথম চলচ্চিত্র থেকেই প্রেমের গুঞ্জনের জন্ম দেন। এক পর্যায়ে পপিকে স্ত্রী হিসেবেও দাবি করেন শাকিল খান। কিন্তু পপির অস্বীকৃতিতে ঘটনা আদালতে গড়ায়। শেষ পর্যন্ত দুজন দুই মেরুতে চলে যান।

তিন্নি

মডেল-অভিনেত্রী তিনি্নর প্রথম বিয়ে, সন্তান জন্মদান ও বিচ্ছেদের কথা সবারই জানা ছিল। তবে দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনাটি তিনি চেপে গিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তান আরিশা জন্মগ্রহণের পর বিয়ের খবরটি প্রকাশ করতে বাধ্য হন।

হৃদয় খান

কণ্ঠশিল্পী হৃদয় খানও এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। গোপনে বিয়ে করলেও কখনও তা প্রকাশ পায় নি। কিন্তু সুজানার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তার পুরান বিয়ের খবরও প্রকাশ পায়। নতুন করে আবার বিয়ের পিড়িতে বসেন হৃদয়। সে সম্পর্কেও বিস্তারিত কিছু মিডিয়ায় কিছু জানাননি।

রেসি
২০০৮ সালে বুলবুল জিলানীর ‘নীল আঁচল’ চলচ্চিত্রে নায়িকা হয়ে আসেন রেসি। প্রথমে এই নির্মাতা, পরে এক মডেল সর্বশেষ অভিনেতা ডিপজলের সঙ্গে রেসির প্রেম-বিয়ের গুঞ্জন ঢালিউডের বাতাস ভারি করেছে। অবশেষে ২০১২ সালে রেসি বিয়ে করেন এক ব্যবসায়ীকে। পুরনো বিয়ের খবর গুলো অধরাই থেকে যায়।

ডলি সায়ন্তনী

এক সময় আলোচিত গায়িকা ছিলেন ডলি সায়ন্তনী। প্রথম স্বামী গীতিকার আহমেদ রিজভীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরীকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু সেই সংসারও বেশিদিন টেকেনি। রবিকে ছেড়ে কোরিয়া প্রবাসী একজনকে বিয়ে করেন। কিন্তু সেখানেও কোনো স্থিতিশীলতা ছিল না। সেই স্বামীকে ছেড়ে আবারও অন্য একজনকে বিয়ে করেন ডলি। মজার কথা হচ্ছে, চার সংসারে তার তিনটি সন্তান রয়েছে। সাবেক স্বামীদের কাছ থেকে সন্তান লালন-পালনের টাকা দিয়েই নাকি ডলির বর্তমান সংসার চলে। এমন গুজবই মিডিয়ায় ভেসে বেড়ায়। প্রেমবিষয়ক কারণে ডলি সায়ন্তনী গানের জগৎ থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছেন।

আঁখি আলমগীর

সুকণ্ঠী গায়িকা আঁখি আলমগীরকে নিয়েও বেশ বিতর্ক রয়েছে। দুই বিয়ের বিতর্কে তাকে নিয়েও নিন্দার ঝড় উঠেছিল এক সময়। এখন আর তার বিয়ে নিয়ে তেমন কোন শোরগোল শোনা যায় না। তবে কে স্বামী তাও সঠিকভোবে জানা যায়নি। ফেসবুক ঘেটেও কোন ছবি পাওয়া যায়নি।

কুসুম শিকদার

২০০৭ সালে বিয়ের পিড়িতে বসেন কুসুম শিকদার। কিন্তু সেটা মিডিয়ায় অনেকদিনই অজানা ছিল। স্বামীকে  নিয়ে তার খুব বেশি চলনও দেখা যায় না।

এভ্রিল

মিডিয়ায় আসার অনেক আগেই বিয়ের পিড়িতে বসেছিলেন ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ‘ জয়ী এভ্রিল। যদিও পরবর্তীতে তার বিয়ে প্রমানিত হওয়ার কারণে সে খেতাব কেড়ে নেয়া হয়েছে।

রিয়া

মডেল ও নৃত্যশিল্পী হিসেবেই মানুষ তাকে বেশি চেনে। তবে অভিনয়শিল্পী হিসেবেও তাকে পর্দায় দেখা গেছে। নিজের ক্যারিয়ার আর জনপ্রিয়তার আগুনে পানি ঢেলে ২০১৩ সাল থেকেই রিয়া আমেরিকা থাকছেন।বর্তমানে এক সন্তানের মা তিনি। স্বামী ইভান চৌধুরী আর সন্তানকে ঘিরেই এখন তার যত ব্যস্ততা।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/জেডএ