ইনসাইড বাংলাদেশ

এই কি তবে ভারতের বন্ধুত্বের প্রমাণ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/06/2021


Thumbnail

করোনা ভাইরাসের গণটিকা কর্মসূচি যেসব দেশ সবার আগে শুরু করেছিল তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সংগ্রহ করে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করেছিল। সেরাম ইনস্টিটিউট এর সাথে বাংলাদেশের ৩ কোটি ডোজ টিকার চুক্তি ছিল। কিন্তু ভারতের টিকা রাজনীতি বলি হতে হলো বাংলাদেশকে। ১ কোটি ২০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে দেওয়ার পর তারা টিকা রপ্তানী বন্থ করে দেয়। টিকার টাকা অগ্রিম নেওয়ার পরও তারা বাংলাদেশকে টিকা দেয় নি। ভারত সরকার টিকা রপ্তানী বন্ধ করার ফলে ভারতের টিকা আর বাংলাদেশে আসতে পারে নি। এখন বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। যদিও এই টিকা পাওয়া এখন অনিশ্চিত। কারণ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য সারা বিশ্বে খোঁজ নিয়েছে কিন্তু কেউই টিকা দিচ্ছে না।

ভারতকে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। ফলে আমাদের মুক্তি অর্জন অনেকাংশে সহজ হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ একটি ভালো সম্পর্কে রেখে চলেছে। কিন্তু যত দিন গিয়েছে ততই ভারত অনেক ক্ষেত্রে সুযোগ বুঝে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশে যখন পেঁয়াজের সংকট হয়েছে তখন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মানুষ ৩০০ টাকা কেজি পেঁয়াজ ও কিনে খেয়েছে। ঠিক সেরকমই টিকার ক্ষেত্রেও একই কাজ করলো ভারত। যখনই দেখলো বাংলাদেশে টিকার মজুদ কমে আসছে এবং বাংলাদেশ প্রায় ৭০ লাখ মানুষকে টিকা দিয়ে ফেলেছে তখনই ভারত ঝােঁপ বুঝে কোপটি মারলো। বন্ধ করে দিল টিকা রপ্তানী। ফলে এখন প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষ টিকা পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছে।

আজকে শুধুমাত্র ভারতের জন্য গণটিকা কর্মসূচি মাঝপথে মুখ থুবরে পড়েছে এবং টিকা নিয়ে এক অদ্ভুত জটিলতায় পড়েছে বাংলাদেশ। এই জটিলতা থেকে উদ্ধার কিভাবে পাওয়া যাবে সে নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। টিকার ব্যাপারে একমুখী কৌশলের ফলে বাংলাদেশের এই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। কিন্তু যে কারণেই সংকট সৃষ্টি হোক না কেন এখন টিকা নিয়ে বহুমাত্রিক সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশ। টিকা নিয়ে বাংলাদেশের সামনে অনেকগুলো সংকট সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের ওই টিকাগুলো সংগ্রহ করা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। আমেরিকা বাংলাদেশকে টিকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও শেষ পর্যন্ত দিচ্ছে না। ফলে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু এই বিষয়টি একতরফা হলে বিষয়টি মুশকিল। শুধুমাত্রা বাংলাদেশ ভারতকে বন্ধু ভাবলো আর ভারত বাংলাদেশের পেছন থেকে ছোড়া বসালাে তাহলে তো সেটা আর বন্ধুত্বের পর্যায়ে থাকে না। করোনা নিয়ে ভারতের এই নীতি গ্রহণ করা ঠিক হয় নি। ভারতের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এটা ঠিক। তাই বলে এটা ভাবলে হবে না যে, এটা কেবল ভারতেই হয়েছে। সারা বিশ্বেই করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কাজেই ভারতের উচিৎ ছিল কাছের বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো। অন্তত যে পরিমাণ টিকা বাংলাদেশ ক্রয়ের জন্য সেরামের সঙ্গে চুক্তি করেছে সেই পরিমাণ টিকা বাংলাদেশে আসতে দেওয়া উচিৎ ছিল। তাহলে ভারত যে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু তা প্রমাণ হতো। কিন্তু এখন ভারতের টিকা রাজনীতিতে বাংলাদেশের হাল বেহাল করে ছেড়েছে। এই কি তবে ভারতের বন্ধুত্বের প্রমাণ?




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭