ইনসাইড থট

আমাদের স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যা কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/06/2021


Thumbnail

আমার চট্টগ্রাম নিবাসী কন্যার একটি শল্য চিকিৎসার প্রয়োজনে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হল। আমাদের অনুরোধে পরিবারের অন্যতম সুহৃদ অনুজপ্রতীম বিশিষ্ট এক চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসার উদ্যোগ নিলেন। তার সহযোগিতায় আমি যখন আমার মেয়েকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালের সার্জারী বিভাগের এক নারী চিকিৎসকের কাছে যাই, তিনি কাগজ-পত্র পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত ভর্তির পরামর্শ দিলেন ও আমাদের সেই বন্ধুর কল্যাণে কেবিন-সহ অন্যান্য ব্যবস্থাদি সম্পন্ন হলো। এক পর্যায়ে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত একজন উর্ধতন কর্মকর্তার রুমেও কিছু সময় আমাদের বসার সৌভাগ্য হলো। তিনি তখন তার একজন সহকর্মীকে বলছিলেন, “আমরা হাসপাতালের এক বছরের সব ওষুধ কিনে ফেলেছি এখন দেখছি রাখার জায়গা নিয়ে অসুবিধা হচ্ছে”!  

নির্ধারিত দিনে, যথারীতি সকল কর্ম সম্পাদন শেষে আমার কন্যাকে যখন সকাল সাড়ে সাতটায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবার সময় হলো তখন আমি ও জামাতা সেখানে উপস্থিত। আগেরদিন রাত ১২টা থেকে রোগীর সকল খাবার, এমনকি পানি পানও বন্ধ। হাতে লাগানো স্যালাইন নিয়ে যথাসময়ে হুইল চেয়ারে তাকে উঠিয়ে একজন নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মী অপারেশন থিয়েটারের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সাথে আমরাও, আমাদের হাতে কাগজ-পত্রের ফাইল। কেবিনের কাছেই একটি লিফট যার কোন নির্দেশক বাতি জ্বলছিল না ও জানা গেল এটা না থাকলেও লিফট কাজ করে। আমরা মিনিট দশেক অপেক্ষার পরেও যখন লিফট ওই তলায় এলো না তখন পাশের সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসা একজন জানালেন লিফট নষ্ট, উনি নীচে দেখে এসেছেন। সহযোগী নারী কর্মী আমাদের নিয়ে অন্য একটি লিফটের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন, চক্ষু বিভাগের কাছে সেই লিফটের কাছে এসে জানা গেল সেটি লকড, এটা যিনি খুলে দেবেন তিনি নেই বা তাকে এখনও কেউ দেখেনি। সেখানে আরও মিনিট দশেক অপেক্ষার পরে জানা গেল পূর্বের লিফট চালু হয়েছে। আমরা যেয়ে সেই লিফটে উঠলাম, কিন্তু তার দরোজা বন্ধ হচ্ছে না। একজন তরুণ জানা গেল তিনি লিফটম্যান নন, একটি ঝুলন্ত তার টানাটানি করলে দরোজাটি বন্ধ হলো কিন্তু আবার খুলে গেল। এরকম বেশ কয়েকবার হবার পরে আমরা কিছুটা বিচলিতবোধ করলাম ও বের হয়ে যেয়ে বিকল্প উপায়ে যাবার আলোচনা শুরু করলাম। হঠাৎ লিফটের দরোজা বন্ধ হয়ে গেলো কিন্তু লিফট উপরে উঠছে না, মুহুর্তে আবার দরোজা খুলে এলো। আমরা দ্রুত বেরিয়ে এলাম। আমার নিরীহ, শান্ত স্বভাবের মেয়েটির চোখে মুখে তখন আতঙ্ক, আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম, ‘বাবা, আমরা চলো হেঁটেই যাবো’। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার অনেক দূর তাই হুইল চেয়ারে বসে যাওয়াই ভালো বলে সেই নারী কর্মীর পরামর্শে আমরা সেটাই শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর জানা গেল সিড়ি দিয়ে নীচে নামতে হবে। আমরা ধরে-ধরে মেয়েকে নিয়ে সিড়ি ভেঙ্গে নীচে গেলাম ও এক পর্যায়ে শত শত শুয়ে-বসে থাকা চিকিৎসাকামী বা চিকিৎসাধীন নারী পুরুষের ভীড় ও বিছানা ঠেলে গন্তব্যে পৌছালাম। মেয়ে যখন অপারেশন থিয়েটারে গেল তখন আমাদের কাছ থেকে তাকে আলাদা করে ফাইল ও আগে থেকে ধরিয়ে দেয়া তালিকা অনুযায়ী ওষুধের ব্যাগটা নিয়ে ভেতরের কর্মীরা নিষ্ক্রান্ত হল তখন সকাল ৮.১৫ মিনিট।

নানা চেষ্টায় আমরা জানতে পেরেছিলাম এই শল্য চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সময় লাগবে এক ঘন্টা। কিন্তু ভেতরে যাবার পর থেকে দুই ঘন্টা অর্থাৎ ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি আমাদের মেয়ের কি হাল হয়েছে ও সে কোথায় আছে। আমাদের সুহৃদ চিকিৎসক আমাদের উৎকণ্ঠিত ফোন পেয়ে খোঁজ করে ফিরতি ফোনে জানালেন মেয়ে ভেতরে আছে ও যথাসময়ে তার অপারেশন হবে, আমাদের ভাবনার কিছুই নেই! আমরা দেখছিলাম তখন অন্যান্য শল্যপ্রার্থীদের আসা যাওয়া ও উদ্বেগে কাতর পরিবারের মুখগুলো যারা আমাদের মতোই বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে আবর্জনাময় স্থানে কিছু চেয়ার পাতা আছে কিন্তু কেউই যেন বসতে চাইছে না। বাইরে তখন অঝোর বৃষ্টি ও ভেতরে অস্বস্তিকর গরম। 

সাড়ে দশটার দিকে দেখলাম আমার মেয়ের মতো একটি অজ্ঞান মুখের মানুষকে সশব্দে ট্রলিতে করে নিয়ে যাচ্ছে ও আমরা দৌড়ে গিয়ে বিধ্বস্ত মুখখানা নিরীক্ষণ করে দেখি সে আমাদেরই মেয়ে। লালা জামা পড়া দুইজন মানুষ ট্রলির দুই ধারে টেনে নিচ্ছেন, বললাম, ভাই কোথায় নেবেন? তারা খুব বিরক্তির সাথে উত্তর দিল, দেখেন কই যাই!

তাদের পিছু পিছু প্রায় দৌড়ে যেয়ে আমরা যেখানে পৌঁছালাম সেটি পোস্ট-অপারেটিভ অবজারভেশন রুম। আমাদের বলা হল মেয়েকে বিছানায় নামিয়ে নিতে, কিন্তু আমি বিছানার চাদর অপরিচ্ছন্ন বিধায় এটি পাল্টে দিতে অনুরোধ করি যদিও তা প্রত্যাখ্যাত হয় ও তারা আমার অজ্ঞান মেয়েকে নামাবার চেষ্টা শুরু করে। বাধ্য হয়ে আমি ও জামাতা দুই পাশে ধরে তাকে বিছানায় শুইয়ে দেই। নার্স এসে ফাইল দেখে রেগে গেলেন, এই রোগী এখানে আনলেন কেন? এই রোগী নীচের রুমেই নিলেই হতো। আমি বিনয়ের সাথে জানাই এটা তো আমাদের জানা নাই ও ওই লাল জামা মানুষদের দেখিয়ে বলি তারাই এখানে এনেছে। যা হোক, মেনে নিয়ে তারা তাকে পর্যবেক্ষণে থাকবে বলে আমাদের সেখান থেকে বাইরে চলে যেতে বলেন। বেলা পৌনে এগারোটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমার মেয়েকে সেখানে রাখা হয় ও শেষে কেবিনে পাঠানো হয়। এর মধ্যে দুপুরের দিকে আমাদের সুহৃদ চিকিৎসক বন্ধু এসে তাকে দেখে যান ও বলেন এখান থেকে যথাসময়ে তাকে কেবিনে দিয়ে দেয়া হবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।

কেবিনে নেবার পরে সংযুক্ত একজন নার্সের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি তাকে স্যালাইনেই থাকতে হবে, কিছুই খাওয়া যাবে না, এমনকি পানিও না। কতদিন? তিনি জানালেন আজ রাত তো বটেই, তবে আগামীকাল সকালে ডাক্তার ম্যাডাম এসে জানাবেন কি খাবে ও কখন থেকে খাবে। আমরা ধৈর্য ধরে থাকলাম।

হাসপাতালের বড়কর্তার মাধ্যমে আমরা যে কেবিনখানা বরাদ্দ পাই তার দরোজার উপরে লাল রঙ দিয়ে লেখা ভি আই পি। কেন এর নাম এরকম করা হল আমরা জানিনা বা কেনই বা আমাদের এই কেবিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা-ও জানিনা। ভেতরে বিদঘুটে গন্ধ ও পরিচ্ছন্ন কর্মী জানালেন বেশ কিছু ইঁদুর এই রুমে, সেগুলো বের করে জানালা বন্ধ করে রুম পরিষ্কার করতে হবে। আমরা লক্ষ্য করলাম জানালায় একটি কাঁচ নেই ও স্প্লিট এসি-র নীচের দেয়ালে একটি পুরনো উইন্ডো টাইপ এসি-র ফাঁকা বা শূন্যস্থান যেটি একটি কার্টুনের টুকরো অংশ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বাথরুমের দরোজার নীচে বেশ খানিক অংশ ফাঁকা ফাঁকা হয়ে আছে ও পাশে একটি ছোট রুম সম্ভবত ড্রেসিং রুম, সেটি এখন একটি স্টোর রুমে করে রাখা হয়েছে। আমাদের উদ্যোগে ও আর্থিক তাগিদে রুমটি পরিষ্কার করা হলো, জানালায় একটি কাঁচ লাগানো হলো যাতে কয়েকদিনের জন্যে এটি বসবাসের উপযোগী হয়।

অপারেশনের পরেরদিন সকাল ৯টার দিকে দলবেঁধে একদল ডাক্তার এসে রোগী দেখে গেলো ও জানিয়ে গেল ম্যাডাম কিছুক্ষণ পরে এসে জানাবেন কখন ছুটি হবে ও কখন থেকে কী খাবে। আরও ঘন্টা দেড়েক অপেক্ষার পরে ম্যাডাম চিকিৎসক এলেন ও মিনিটখানেক পর্যবেক্ষণ করে খাবারের পরিকল্পনা জানিয়ে গেলেন। সেই মতে আমরা আমাদের প্রায় ৩০ ঘন্টা না খেয়ে থাকা ক্ষুধার্ত মেয়েকে খাবারের ব্যবস্থা করলাম।  

খুঁটিনাটি আরও কথা লিখতে হলে একটি বৃহৎ রচনা হবে কিন্তু যে যে প্রসঙ্গগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো সেসব আমার মতো একজন নগণ্য নাগরিক যে কীনা গত ৩৪ বছর হেলথ কমিউনিকেশন নিয়ে দেশে-বিদেশে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি তার কাছে এই চিত্র নতুন নয়। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এইসব ঘটনাবলী নৈমিত্তিক ও মিডিয়ায় সরব। কিন্তু আফসোস হলো, বাবার পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা নিতে এসে আমার মেয়েটি যে ট্রমার মধ্যে দিয়ে গেল তার জন্যে আমি অপরাধী কী না। এই দেশে যেসব বাণিজ্যিক স্বার্থবুদ্ধির সমান্তরাল চিকিৎসা ব্যবস্থা আমরা করে রেখেছি তার কাছে যেতে আমার মেয়ের, মেয়ের শ্বশুর বাড়ির বা আমার সে খরচ বহন করে চিকিৎসা সেবা নেবার সামর্থ্য আছে কিন্তু দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এখানে এলেও আমার প্রতিটি মুহুর্ত বারবার মনে হয়েছে কেন আমি এই ভুল করলাম। আমার দু’টো মেধাবী ও সমাজের কল্যাণ অবদানে ভূমিকা রাখার জন্যে যথা উপযুক্ত বিনয়ী সন্তান যারা আমার ও আমার দেশের প্রিয় সম্পদ, তাদের কেন এইরকম অপমানের মধ্যে দিয়ে দেশের কথিত সর্বোচ্চ চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে চিকিৎসা সেবার বিড়ম্বনায় পড়তে হলো!

এইসব ঘটনাবালী ঘটতে দেখে আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে ও আমি প্রত্যক্ষদর্শী হবার সুযোগ পেয়েছি বলে যে শিক্ষা আমি অর্জন করতে পেরেছি তাতে আমার প্রত্যয় জন্মেছে-

১। দেশের এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মোটেই নাগরিকের জন্যে গৌরবের নয়। আমরা এই ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে রেখেছি কারণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমাদের কোন দায় নেই। আমাদের সমাজের যে অংশের মানুষ চিকিৎসা সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করে রেখেছেন তাঁদের বেশিরভাগেরই সমাজের প্রতি কোন দায় নেই। যে কারণে আমরা প্রফেসর ইব্রাহিম বা প্রফেসর এম আর খানের মতো খুব বেশী কাউকে স্মরণ করতে পারি না। না হয়, যারা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রধান কান্ডারী তাঁদের বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকেই ওই পদে যান, তারা কেমন করে সে পদে বসে গৌরববোধ করেন? যেসব হাল হকিকত তারা দেখে যান তার পরিবর্তন বা রূপান্তরের কি উদ্যোগ তারা নেন? তাহলে একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সঠিক পথে চলতে পঞ্চাশ বছরেও পারে না? একটি উদাহরণও নেই যে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সমূলে ঠিকঠাক করতে যেয়ে কোন মহাপরিচালকের পদ থেকে কাউকে কোনদিন অপসারিত হতে হয়েছে। এমনকি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রশাসনিক পরিকল্পনা নিয়ে পড়াশুনা করে ওই পদে কেউ যেয়ে বসেছেন বা বসানো হয়েছে এমন নজীরও খুব কম। যারা গেছেন রাজনীতির কাছে সরকারকে হার মানিয়েই গেছেন আর কাড়ি কাড়ি টাকা কামাই করেছেন বলে প্রচলিত বিশ্বাস। যে কারণে হয়তো আমরা উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন এমন উদ্যোগী কাউকে খুঁজে পাইনা। 

২। সরকারের এখানে কোন দায় নাই কারণ সরকার এই সেদিনও কাগজে দেখলাম স্বাস্থ্য সেবার জন্যে যে টাকা বরাদ্দ করে রেখেছেন তার ২৪ ভাগও নাকি স্বাস্থ্যখাত খরচ করতে পারেনি। কিন্তু মেয়ের চিকিৎসা করাতে যেয়ে আমি তো দেখলাম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেই টাকা খরচ করে দায়িত্ব পালনের অসংখ্য কাজ পড়ে আছে। বারান্দায় পানি, ওয়ার্ডের মেঝে জুড়ে রোগী আর রোগী, যেন এরা কেউই মানুষ নয় এমন কি নাগরিকও নয়। অথচ এদের টাকা কুড়িয়ে নিয়েই এই ব্যবস্থাকে সরকার নিশ্চিত করে দিয়েছে যে তুমি উদ্যোগ নাও, সব ঠিক কর। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বৃষ্টির পানি ছাঁদ চুইয়ে হাসপাতালের রোগীর মাথায় পড়বে কেন? আবর্জনা আর দুষ্টের ক্ষত নিয়েই ব্যস্ত থাকবে পুরো ব্যবস্থা? যে হাসপাতালে বছরের সব ওষুধ এক সাথে কিনে ফেলা হয়েছে আর রাখবার জায়গাই নেই সেই হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের ভেতর থেকে ঘন্টায় পাচ-ছ’বার কেন এসে এসে বিহ্বল দরিদ্র চিকিৎসা প্রার্থীর স্বজনের হাতে একটি চিরকূট ধরিয়ে দেয়া হবে, ‘যান এই ওষুধ নিয়ে আসেন’? 

৩। যারা চিকিৎসা সেবা দেন তাঁদের আচরণগত সমস্যা অনেকটা মানসিক রোগের মতো। আমি আমার মেয়েকে এখনও জিগ্যেস করিনি এক ঘণ্টার কাজে তোমাকে ওরা কেন ভেতরে নিয়ে আড়াই ঘন্টা সময় রাখল? কারণ আমি জানি তারা আমার মেয়ের সাথে খুব ভালো আচরণ করেনি। যদি করতো তাহলে তার কি অপারেশন হবে, বা কেন দেরী হচ্ছে বা হয়েছে ইত্যাদি তাকে জানানো হতো বা আমরা বাইরে থেকেও জানতে পারতাম। শুধু একবার কানে ভেসে এলো আমার মেয়ে ওখানে বসে থাকতে থাকতে ঘেমে নেয়ে উঠেছে ও একজন চিকিৎসককে বলেছিল, ‘আমার ভয় লাগছে’। যথারীতি উপেক্ষা ছাড়া সেই আকুল উদ্বেগের কোন অনু্কম্পা উত্তর আমাদের মেয়েটার ভাগ্যে জুটেনি। কেন তারা এমন করেন? কেন রোগীর সাথে এমন আচরণ করেন? কেন তারা রোগীর পরিবার-পরিজন-কে ব্রীফ করেন না? রোগী কখন কী খাবে কেন তারা ভালো করে বুঝিয়ে বলেন না? কী তাঁদের অসুবিধা? আমার জানামতে মেডিক্যাল এথিক্স বলে একটা বিষয় আছে, কেন আমাদের চিকিৎসক সমাজ তার জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে সেই বিদ্যা অর্জন করতে ও ধরে রাখতে চান না? 

প্রশাসনিক নির্বুদ্ধিতা নিয়ে যতো গল্প আছে সেসব বেশীরভাগই সেবাপ্রার্থী ও সেবাদানকারীর সম্পর্ক নিয়ে। এই কাজে অন্তত আমাদের দেশে প্রচলিত চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থার লোকজন যথেষ্ট পারদর্শী। বিশেষ করে যখন তারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটাকে গড়ে তুলতেই চান না উল্টো একে গড়তে গেলে বাধা দেন বেশী। যে দেশে একটি অনুপম স্বাস্থ্য নীতি পর্যন্ত আমলে নেয়া গেল না সেখানে এদের কাছ থেকে কিছু আশা করা উচিত নয়। সরকারের এই নিয়ে প্রচুর ভাবা উচিত ও এর গভীরে হাত দেয়া উচিত।

আমার সেই সুহৃদ বন্ধুর জন্যে শুভ কামনা যেন তার সরল সহযোগিতায় আর কোন মানুষ নিজেকে প্রতারিত মনে না করেন। আর সেই কর্তা ব্যাক্তি যিনি এক বছরের ওষুধ কিনে এখন রাখবার জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না, তাকে বলি এটা কোন গৌরবের গাঁথা হবে না, এটা হবে অপচয়ের ব্যবস্থাপনা। আর সদাশয় সরকারকে বলি, আরও একবার ভাবতে হবে। যারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অচল রেখে সরকারকে টাকা খরচ করতে দেয় না আর যেটুকু করে তা-ও অপচয় ও অদৃশ্য হয়, দয়া করে নাগরিকের করের টাকায় আর এসব করতে দেবেন না। একজন মানুষ রোগী হয়ে হাসপাতালে যেতে পারে কিন্তু সে এই দেশের নাগরিক। সরকার কোন নাগরিকের অসম্মান কেন মেনে নেবে? হাসপাতাল আক্ষরিক অর্থে হসপিটালিটি বা আথিতেয়তার স্থান হবার কথা কিন্তু সেখানে শুধু অপমান আর অপমান। আর এই অপমান সরকারকেই বিব্রত করতে করা বা করানো হয় কী না সেটাও খুঁজে দেখা দরকার।

রেজা সেলিম, পরিচালক, আমাদের গ্রাম



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭